জাতীয় মিম্বার থেকে
কাদিয়ানীরা মুসলিম পরিচয় দিতে পারবে না
মুফতি মুহাম্মদ আব্দুল মালেক
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:০৪
১৪ নভেম্বর-২০২৫ বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জুমাপূর্ব বয়ান-
প্রিয় উপস্থিতি! গত সপ্তাহে আমরা কোরআনের আয়াত অনুযায়ী কারা বুদ্ধিমান তাদের আলোচনা করছিলাম। বুদ্ধিমানের গুণের মধ্যে একটি গুণ হচ্ছে সর্বদা জিকির করা। জিকির অনেক ধরনের আছে। আল্লাহর জিকির, রাসুলের প্রতি দরুদ পাঠের জিকির ইত্যাদি। মনে রাখবেন, কেয়ামতের দিন নবীজির শাফায়াত লাভের অনন্য মাধ্যম দরুদ। সকাল-সন্ধ্যায় ১০ বার করে দরুদ পড়লে নবীজির শাফায়াত অবধারিত। নবী (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকাল বেলা আমার ওপর দশবার দরুদ পাঠ করবে এবং বিকেল বেলা দশবার দরুদ পাঠ করবে, কেয়ামতের দিন সে আমার সুপারিশ দ্বারা সৌভাগ্যবান হবে।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ১০/১২০)
আর সেই রাসুলকে যারা নবী হিসেবে মানবে না তাদের কাফের বলা ছাড়া আর অন্য কিছু বলার সুযোগ নেই। কিন্তু অমুসলিম কাদিয়ানীরা বলে, আমাদের দেশে হিন্দু আছে, বৌদ্ধ আছে, খ্রিস্টান আছে, কাদিয়ানীদের সাথে আপত্তি কি? কোনো আপত্তি নেই। কাদিয়ানীরা থাকবে কিন্তু মুসলিম পরিচয়ে থাকবে না। কারণ তারা হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শেষ নবী হিসেবে মানে না। অমুসলিম হয়ে মুসলিম পরিচয় ব্যবহার করা প্রতারণা। প্রতারণার বিরুদ্ধে আইন হওয়া জরুরি। অমুসলিম হয়ে যাতে মুসলিম পরিচয় ব্যবহার করতে না পারে। এজন্য স্পষ্ট আইন প্রণয়নের আবেদন জানাচ্ছি আমরা সবাই।
প্রিয় উপস্থিতি! আগামীকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওলামায়ে কেরাম, ওলামা মাশায়েখ এবং সকল শ্রেণির মুসলমানরা সমাবেশ ডেকেছে। ওটাতে আমরা সবাই উপস্থিত থাকব, ইনশাআল্লাহ। আমাদের সবার একটাই কথা, কাদিয়ানীরা এ দেশে নিরাপত্তার সাথে শান্তির সাথে থাকবে; কিন্তু মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর পরিচয়ে থাকবে। মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহর পরিচয়ে নয়।
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। অমুসলিম হয়ে ইসলামের এই কালিমা ব্যবহার করবে না। নিজেদের আস্তানাকে মসজিদ নাম দিবে না। মসজিদ মুসলমানদের এবাদতখানার নাম। হিন্দুরা যদি মন্দিরের নাম মসজিদ দেয়, আপনি কি মানবেন? তাহলে তুমি অমুসলিম হয়ে কেন তোমার আস্তানার নাম, তোমার উপাসনালয়ের নাম মসজিদ দিচ্ছো? বকশীবাজারে এটা কি মসজিদ নাকি তাদের উপাসনালয়? ওখানে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ কালিমা লিখেছে। এটা স্পষ্ট প্রতারণা। সমস্ত প্রতারণা বন্ধ করতে হবে।
আমরা সকাল-সন্ধ্যা বলে থাকি, ‘রাদিতু বিল্লাহি রাব্বা, ওয়াবিল ইসলামে দ্বীনা, ওয়াবি মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা নাবিয়া।’ হে আল্লাহ! আমি ধন্য, আমি সন্তুষ্ট, আমি সৌভাগ্যবান। তুমি আমার রব, আমি তোমার বান্দা। আল্লাহ! আমি সৌভাগ্যবান, আমি ধন্য। আমি মুসলিম হতে পেরেছি। ইসলাম আমার দ্বীন, আমি মুসলিম।
আকীদায়ে খতমে নবুয়ত। অর্থাৎ নবুয়তের ধারা আল্লাহ তায়ালা হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবুয়ত এবং রিসালাত প্রদানের মাধ্যমে শেষ করে দিয়েছেন। এই আখেরি নবীর মাধ্যমে এই ধারা শেষ। এরপরে নতুন করে কোনো নবী আসবে না। কেয়ামতের আগ মুহূর্তে ঈসা (আ.) আসবেন। ঈসা (আ.) আমাদের অনেক আগের নবী। ৫০০ বছরের বা আরও বেশি। ইয়াহুদীরা ষড়যন্ত্র করে তাকে হত্যা করতে চেয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তাকে রক্ষা করেছেন, হেফাজত করেছেন। ঈসা (আ.)-কে উপরে উঠিয়ে নিয়েছেন। উনি জীবিত আছেন। কেয়ামতের আগে জমিনে আসবেন। উনার ইন্তেকাল হবে, কবর হবে এই জমিনে।
তখন যে আসবেন, তিনি আমাদের নবীজির আগের নবী। তখন তিনি ইনজিলের শরীয়ত বাস্তবায়ন করার জন্য আসবেন না। বরং কোরআনের শরীয়ত বাস্তবায়ন করার জন্য আসবেন। আমাদের নবীর সুন্নাত বাস্তবায়ন করার জন্য আসবেন। তিনি যখন জমিনে অবতীর্ণ হবেন, তাকে ইমামতি করার জন্য বলা হবে। তিনি বলবেন, আমি না। তোমাদের কেউ ইমামতি করো। নবীজির একজন উম্মতের পিছনে নামাজ আদায় করবেন ঈসা (আ.)।
সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.)। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.)। রাহমাতুল্লিল আলামীন হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.)। সাইয়্যেদুল মুরসালিন হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.)। তার নবুয়ত, তার রিসালাত, তার আকীদা, তার বিষয়ে আমাদের ইসলামের শিক্ষা হলো- আকীদায়ে খতমে নবুয়ত।
কোরআনের ঘোষণা অনুযায়ী আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.)। খাতামুন্নাবিয়ীন শব্দটা সুরা আহজাবের ৪০ নম্বর আয়াতে আছে। কিন্তু এর মর্ম, আকীদায়ে খতমে নবুয়তের মর্ম কোরআন কারীমের শতাধিক আয়াতে আছে। বলুন, সুবহানাল্লাহ। শত শত হাদিসের মধ্যেও আছে।
পুরো ইসলামের ভিত্তি ও সবচেয়ে বড় মৌলিক আকীদা হলো আকীদায়ে খতমে নবুয়ত। এই আকীদা শেষ মানে ঈমান শেষ, ইসলামও শেষ। আল্লাহর তাওহীদ ও খাতামুন্নাবিয়ীন (সা.)-কে যদি কেউ না মানে, তাহলে আল্লাহর দেওয়া শরীয়তও পাবে না, কোরআনও পাবে না।
এই আকীদায়ে খতমে নবুয়তের দুশমন-শত্রু এ দেশে অনেক আছে। যারা এই আকীদার বিকৃতি করে, কোরআনের বিকৃতি করে, নবীজির অবমাননা করে, নবীজির সুন্নাহ এবং হাদিসের অবমাননা করে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর শত্রু হলো কাদিয়ানী গ্রুপ। যারা প্রতারণা করে নিজেদের আহমদিয়া জামাত বলে। এটাই প্রতারণা। আহমদিয়া বলায় প্রতারণা। কিন্তু তারা বলে, আহমদিয়া মুসলিম জামাত। (নাউজুবিল্লাহ) এসব প্রতারণা বন্ধ হওয়া দরকার।
এ দেশে মুসলমানদের বাহিরে অনেক ধর্মের লোকেরা আছে। সবাই থাকো। নিজের ধর্ম পরিচয় দিয়ে থাকো। কোনো আপত্তি নেই। নিরাপত্তার সাথে থাকো। তুমিও কারো উপরে জুলুম করবে না, তোমার উপরেও কেউ জুলুম করবে না। আর কৃত্রিম মজলুম সাজবে না। অনেকে নিজেরাই জুলুম করে, কৃত্রিমভাবে নিজেদেরকে মজলুমের রূপে পেশ করে। (নাউজুবিল্লাহ)
কিন্তু তুমি অমুসলিম হয়ে মুসলমানের নাম ব্যবহার করে, মুসলমানের কালিমা ব্যবহার করে, মুসলমানের পরিভাষা ব্যবহার করে সমাজের মধ্যে থাকবে আর প্রতারণা করবে; মানুষকে ধোঁকা দেবে- এটা মানা যেতে পারে না। এটা মানা যেতে পারে না।
আমি সৌভাগ্যবান, আমি আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মত হতে পেরেছি। তিনি আমার নবী, আমি তার উম্মত। আলহামদুলিল্লাহ। সকাল-সন্ধ্যায় এই আকীদার উপর, এই নীতির উপরে মজবুত থাকতে হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহতায়ালা মৃত্যু পর্যন্ত আমাদেরকে মজবুত রাখেন সঠিক ঈমানের উপরে। ওয়া আখিরু দাওয়ানা আনিলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।
অনুলিখন : মাওলানা কাজী ইনজামামুল হক
সহসম্পাদক, বাংলাদেশের খবর


