রাসুল (সা.) মুমিন হৃদয়ে শ্রদ্ধা ও ভক্তির সর্বোচ্চ শিখরে আদিষ্ট। তার প্রতি আমাদের ভালোবাসা নিখাঁদ। স্বপনে তাকে একপলক দেখা দৃষ্টির অসীম কামনা। ব্যাকুল হৃদয়ের তিনিই বাসনা । তিনি থাকেন কল্পনায়, নির্জনে একান্ত ভাবনায়।তিনি থাকেন আমাদের গল্পের উপমায়, কবিতার পঙক্তিতে সুমধুর শব্দের শামিয়ানায়। তাকে স্মরণ রাখতে আমরা ব্যতিব্যস্ত। তাকে পাঠে গল্পের আসর জমাই। সকলই তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসা আর পরম মমতার বহিঃপ্রকাশ।
তিনি মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো দরদি রাসুল, আশিকের ইশক বুঝেন। মোহাব্বত ভরা দিলের তামান্না অনুভব করতে জানেন। তিনি জানতেন তার ইশকে মুমিন মনে কথকতা কলি ফুটবে। তার কত শত উম্মত শয়নে স্মরণে নবী প্রেম আঁকবে, জবানে রাত্রিনিশিতে তারে জপতে চাইবে। ভালোবাসা বহিঃপ্রকাশে উৎকণ্ঠা নিয়ে থাকবে। তাই তো জগতের রহমত, মহামহিমের মহানবী উম্মতকে শিক্ষা দিয়ে গেছেন কীভাবে তারে ডাকবে, কেমন করে তাকে নিবেদন করবে ভালোবাসা আর হৃদয়ের আর্তনাদ। শিখিয়ে গেছেন সেই অমোঘ মমতার বাণী দরুদ পাঠ।
হাদিস শরিফ অধ্যয়নে ‘‘দরুদপাঠ’’ রাসুল প্রেমের কতটা গভীরে নিতে পারে তা আমরা শিখতে পারি বিশ্ববিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ তিরমিজি শরিফ থেকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে, যে ব্যক্তি আমার ওপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পড়ে।’ (তিরমিজি)
নবী সা. তাকে ভালোবাসার পথ কতই না সহজ করে দিয়েছেন প্রিয় উম্মতের জন্য। যারা তাকে ভালোবাসে তাদের প্রতি কত অসীম মায়া দয়ালু নবীর। তিনি কাছে রাখতে চান সমস্ত উম্মাতকে। কেয়ামত দিবসে আমরা তার কাছাকাছি থাকতে আমাদের দরুদের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। দরুদ পাঠে দৃঢ় করতে হবে ভালোবাসার বন্ধন। এই ভালোবাসা বিফলে যাবার নয়।
দরুদ পাঠ শুধু রাসুল সা.-এর নির্দেশ নয়,বরং মহান আল্লাহ পাকেরও আদেশ। মহাগ্রন্থ আল- কোরআনে এরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নবীর উপর রহমত নাযিল করেন এবং ফেরেশতারা তার জন্য রহমতের দুআ করেন। সুতরাং হে মুমিনগণ! তোমরাও তার প্রতি দরুদ পড়ো এবং অধিক পরিমাণে সালাম পাঠাও। (সুরা আহযাব : ৫৬) আল্লাহর এই বাণী নবী সা.এর প্রতি দরুদ পাঠ আমাদের জন্য কর্তব্য বলে জানায়। আমাদেরকে দরুদ পাঠ করার গুরুত্বের সবক দেয়। তাই দরুদ পাঠে আমাদের অবশ্যই সচেষ্ট এবং সক্রিয় থাকতে হবে।
দরুদ পাঠ যেমন ইবাদত তেমনই নেয়ামতও বটে। রাসুল সা. বলেছেন, যে আমার উপর একবার দরুদ পড়বে, বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার উপর দশটি রহমত নাযিল করবেন। (সহিহ মুসলিম ১/১৬৬; জামে তিরমিযি ১/১০১)
সুবহানাল্লাহ, আমরা চলতি পথে,একাকী ঘরে, রাসুল.সা.-এর ভালোবাসায় যখনই উদ্বেলিত হব তখনই যদি ঠোঁটে ঠোঁটে ফুটে ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ মধুমাখা এই বরকত নাম যতই নেব ততই রহমত-বরকতের ফোরাত বইবে জীবনে। কী অপরূপ আমাদের ভাগ্য, কতটা সুপ্রসন্ন আমাদের নসীব রহমতি সে নবীর উম্মত হওয়ায়।
রাসুল সা. আমাদের বার বার তাগিদ করেছেন, দরুদ পাঠ করতে। আঁধারঘেরা মনে আনতে হবে জোছনার আলো। দরুদে পাড়ি দিতে হবে প্রেমের সোপান । অন্য একটি হাদিসে এসেছে. ‘‘আমার উপর দরুদ পাঠকারী যতক্ষণ দরুদ পড়ে ফেরেশতারা তার জন্য দুআ করতে থাকে। সুতরাং বান্দার ইচ্ছা, সে দরুদ বেশি পড়বে না কম। (মুসনাদে আহমদ ৩/৪৪৫; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৬/৪০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৯০৭)
হাদিসের পর্যালোচনায় আমরা সহজেই বুঝতে পারি, দুজাহানের সর্দার, সায়্যিদুনা মোহাম্মদ সা.-এর প্রতি আমাদের ভালোবাসা বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে আমরা যতকিছু করি সকল আয়োজনের ঊর্ধ্বে দরুদের অবস্থান। দরুদ পাঠে বাড়ে রাসুল সা.-এর সাথে মন ও মননের যোগাযোগ। হৃদয়ে ঝরে অযুত সুকুন। নেক আমলের উদ্দীপনা জাগে। প্রশান্তিময় হয় দরুদে মেতে থাকা প্রতিটি সময়। তাই অবসর ও ব্যস্ততায় জবানেও মনের কোণে সবসময়ই জীবন্ত থাকুক দরুদের কলি।
লেখক: কবি গীতিকার, প্রাবন্ধিক। রাজনগর, মৌলভীবাজার

