Logo

ইসলাম

খতমে নবুয়ত; অবিচল ও চিরন্তন সত্য

Icon

মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:২২

খতমে নবুয়ত; অবিচল ও চিরন্তন সত্য

নবুয়ত এমন এক ধারাবাহিকতা, যা মানবজাতিকে যুগে যুগে সত্য ও আলোর পথে পরিচালিত করেছে। আদম (আ.) থেকে শুরু করে অসংখ্য নবি ও রাসুল বিভিন্ন কওমে এসে মানুষকে এক আল্লাহর দিকে ডাক দিয়েছেন। সেই দীর্ঘ ধারার শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছেন আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)- যার আগমনেই নবুয়তের পরিক্রমা সমাপ্ত হয়েছে। এ বিশ্বাস ইসলামের একটি মৌলিক আকীদা, যার ওপর দীনদুনিয়ার স্থায়িত্ব প্রতিষ্ঠিত।

কোরআনের ঘোষণা: খতমে নবুয়ত নিয়ে কোরআনের বক্তব্য অত্যন্ত পরিষ্কার। আল্লাহ তাআলা বলেন- “মুহাম্মদ তোমাদের কারো পিতা নন; তিনি আল্লাহর রাসুল এবং নবীদের সীলমোহর। (সুরা আল-আহযাব-৪০) এ আয়াত শুধু কোনো তথ্য দেয়নি; এক গভীর ঘোষণা দিয়েছে- নবীর আগমন দিয়ে নবুয়তের দরজা বন্ধ। “খাতামান-নাবিয়্যিন” শব্দটি বোঝায় সমাপ্তি, শেষ এবং সীলমোহর- যেখানে আর কোনো সংযোজনের সুযোগ নেই। অর্থাৎ তার পরে আর কোনো নবি আসার প্রয়োজনও নেই, অনুমতিও নেই।

হাদিসের স্পষ্ট সাক্ষ্য: রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও বহুবার বলেছেন যে, তিনি শেষ নবী। বুখারির এক হাদিসে তিনি নবীদের ধারাবাহিকতাকে একটি সুন্দর অট্টালিকার সাথে তুলনা করেছেন, যেটিতে একটি ইটের জায়গা খালি ছিল। তিনি বলেন- “আমি এসে সেই শূন্যস্থান পূরণ করলাম। (সহিহ বুখারি, ৩৫৩৫) এখানে বক্তব্য পরিষ্কার- নবুওয়তের কাঠামো তার মাধ্যমেই পূর্ণ হয়েছে।

অন্য একটি হাদিসে তিনি বলেন-  “আমি শেষ নবী; আমার পরে আর কোনো নবী নেই।- (সহিহ মুসলিম- ২২৮৬) এ বক্তব্য ইসলামের ইতিহাসে কখনোই বিতর্কের বিষয় হয়নি। সাহাবারা, তাবেঈন এবং পরবর্তী উলামায়ে উম্মত একমত- নবী (সা.)- এর পরে নবুওয়ত সম্পূর্ণরূপে শেষ।

সাহাবায়ে কেরামের অবস্থান: সাহাবারা নবীর জীবদ্দশায় যেমন বিশ্বাস করতেন, মৃত্যুর পরেও সেই বিশ্বাসে অটল ছিলেন। মুসয়লিমা কায্যাব যখন নবুওয়তের দাবি করল, তখন হজরত আবু বকর (রা.) দ্বিধাহীনভাবে ঘোষণা করলেন- নবুওয়তের দাবি করা মিথ্যাবাদী, এবং তার অনুসারীদের মোকাবিলা করা ঈমান রক্ষার জন্য অপরিহার্য। তাদের সংগ্রামই প্রমাণ করে, নবীর পরে কারো নবী হওয়ার স্থান নেই।

এই আকীদা এত গুরুত্বপূর্ণ কেন: খতমে নবুয়ত শুধু বিশ্বাসের একটি অংশ নয়; এটি ইসলামের স্থায়িত্ব, নিরাপত্তা এবং দীনকে বিকৃতি থেকে রক্ষা করার প্রাচীর।

১. কোরআনের পরিপূর্ণতা নিশ্চিত হয় যদি নবী আসতেই থাকত, তাহলে নতুন ওহি আসত, আর কোরআনের চূড়ান্তত্ব হারিয়ে যেত।

২. শরিয়তের স্থায়িত্ব বজায় থাকে প্রতিটি নবীর সঙ্গে নতুন আইন আসলে আজকের ইসলাম হাজার খণ্ডে বিভক্ত হয়ে যেত।

৩. উম্মতের ঐক্য অটুট থাকে নবুয়তের দাবি মানেই নতুন সম্প্রদায়, নতুন বিভাজন, নতুন বিশৃঙ্খলা।

৪. মানুষের দ্বীন অনুসরণের পথ এক থাকে নবীর পরে আর কেউ আল্লাহর পক্ষ থেকে বার্তা আনবে না-এটি জানা থাকায় মানুষ কোরআন-সুন্নাহর পথে স্থির থাকতে পারে।

শেষ নবীর পর দায়িত্ব কার : যেহেতু নবী (সা.)-এর মাধ্যমে নবুয়ত শেষ, তাই তার রেখে যাওয়া দায়িত্ব উম্মতের ওপর ন্যস্ত হয়। হাদিসে বলা হয়েছে- “উলামারা নবীদের উত্তরসূরি। (আবু দাউদ- ৩৪৪১ 

উলামা, দ্বীনের দাঈ এবং সত্যের কারিগরগণ নবীর উত্তরাধিকার বহন করেন- তবে তারা নবী নন, কোনো ওহি তাদের ওপর নাজিল হয় না। তারা শুধু কোরআন ও সুন্নাহর আলো মানুষকে পৌঁছে দেন।

নবুয়ত অস্বীকারের পরিণতি : মুহাম্মদ (সা.)- কে শেষ নবী মানা ঈমানের অংশ। তাই কেউ যদি তার পরে নবী আসার বিশ্বাস পোষণ করে বা কারো নবুওয়তের দাবি সত্য বলে ধরে নেয়, তবে সে কোরআন-হাদিসের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ইসলামের আকীদা অনুযায়ী এটি বিপজ্জনক বিভ্রান্তি। নবুয়তের দাবি করা ব্যক্তি যেমন মিথ্যাবাদী, তার অনুসারীরাও এই আকীদা-বিরোধী অবস্থানে পড়ে যায়।

আমাদের করণীয় : খতমে নবুয়তের আকীদা দৃঢ়ভাবে হৃদয়ে ধারণ করা। কোরআন ও সহিহ সুন্নাহর জ্ঞান অর্জন করা। মিথ্যা নবী কিংবা বিভ্রান্ত মতবাদ থেকে নিজে বাঁচা এবং অন্যকে সতর্ক করা। প্রিয় নবীর সুন্নাহ আঁকড়ে থাকা। দ্বীনের জ্ঞান প্রচারে দায়িত্বশীল হওয়া।

পরিশেষে বলতে চাই, খতমে নবুওয়ত শুধু একটি ঈমানের বিষয় নয়; এটি দীনকে পরিপূর্ণ রূপে প্রতিষ্ঠা করার আল্লাহর হিকমত। রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর আগমনে নবুয়তের ইতিহাস পূর্ণতা পেয়েছে, দীন সম্পূর্ণ হয়েছে, এবং মানবজাতি একটি স্থায়ী জীবনবিধান পেয়েছে। এখন দায়িত্ব আমাদের- এই দীনকে ধারণ করা, রক্ষা করা এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছে দেওয়া।

লেখক : ইসলাম বিষয়ক প্রবন্ধকার

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ইসলাম ধর্ম

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর