আমাদের সমাজে একটি প্রচলিত বিষয় হলো- ইসলাম ধর্ম নারীদের স্বাধীনতা দেয়না কিংবা চার দেয়ালে বন্দী করে রাখতে চায়। কিন্তু ইসলাম বলে অন্য কথা। যেমন, মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনে সূরা আন-নিসা নাজিল করেছেন। নিসা শব্দের অর্থ হলো ‘নারী’। এই পুরো সূরার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাআলা নারীর অধিকার, বিবাহ ও পারিবারিক বিধান, সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাসহ নানান বিষয় বর্ণনা করেছেন।
আল্লাহ তা’আলা সূরা আন-নিসা তে বলেছেন, ‘মাতা-পিতা এবং আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষের অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীরও অংশ আছে; তা অল্পই হোক অথবা বেশীই হোক, (প্রত্যেকের জন্য) নির্ধারিত অংশ।’ (সূরা আন-নিসাঃ ৪:৭) এই সূরার ১১ নম্বর আয়াত থেকে কয়েকটি আয়াত এবং সর্বশেষ আয়াতে আরও বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন এই বিষয়ে। তিনি আরও বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! যবরদস্তি করে নারীদের উত্তরাধিকার হওয়া তোমাদের জন্য বৈধ নয়। তোমরা তাদেরকে যা দিয়েছ তা থেকে কিছু আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রেখো না, যদি না তারা স্পষ্ট খারাপ আচরণ করে। আর তোমরা তাদের সাথে সৎভাবে জীবন যাপন করবে; তোমরা যদি তাদেরকে অপছন্দ কর তবে এমন হতে পারে যে, আল্লাহ যাতে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন তোমরা তাকেই অপছন্দ করছো’ (সূরা আন-নিসাঃ ৪:১৯)
মহান আল্লাহ তাআলা আরও বলেছেন, কোনো ব্যক্তি স্ত্রীর সহিত কলহে লিপ্ত হয়ে যেন তাঁকে অবজ্ঞা, অবহেলা না করে কিংবা কষ্ট না দেয়। একই সাথে তিনি বলেছেন, নারীদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। নারী-পুরুষের সমান অধিকার এবং অর্জনের বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘আর যা দ্বারা আল্লাহ তোমাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন তোমরা তার লালসা করো না। পুরুষ যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ এবং নারী যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ। আর আল্লাহ’র কাছে তার অনুগ্রহ প্রার্থনা কর, নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে সর্বজ্ঞ’। (সূরা আন-নিসাঃ ৪:৩২)। তিনি আরও বলেন, ‘তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ নারীদের ছাড়া অন্যান্য সকল নারীদেরকে মোহরের অর্থের বদলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে চাওয়া তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে। একই আয়াতে আরও বলা হয়েছে- অবৈধ যৌন সম্পর্কের জন্য নয় (সূরা আন-নিসাঃ ৪:২৪)। এই আয়াতে তিনি নারীর অধিকার সুরক্ষার সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছেন-
সূরা আন-নিসার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা নারীর অধিকার, উপার্জন, স্বাধীনতা ও মর্যাদা এবং বিবাহ ও মর্যাদা সংক্রান্ত বিষয়ে বর্ণনা করেছেন। সুতরাং, যারা মনে করে ইসলাম ধর্মে নারীদের মর্যাদা কিংবা অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে সেটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। কারণ, আল্লাহ তাআলা পবিত্র মদিনায় নিজে সূরা আন-নিসা নাজিল করেছেন নারীদের দিকনির্দেশনাসহ নারীদের বিভিন্ন বিষয়ে বর্ণনার উদ্দেশ্যে। উল্লেখ করেছেন- তাঁদের অধিকার, সম্মান, মর্যাদাসহ নানান বিষয়।
সূরা আন-নিসা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে- ইসলাম ধর্ম নারীর অধিকার, সম্পত্তি, মর্যাদা ও স্বাধীনতাকে মূল্যায়ন করে। এটি দ্বারা বুঝতে পারি, নারীর প্রতি আল্লাহ তাআলা অবিচার করেননি। তিনি এমন কোনো নির্দেশনা দেননি যাতে করে নারীদের মর্যাদা কিংবা স্বাধীনতায় চুল পরিমাণ ব্যাঘাত ঘটে।
লেখক : শিক্ষার্থী, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ঢাকা

