Logo

ইসলাম

জমাদিউস সানি মাসের দ্বিতীয় জুমা : বরকত ও নেক আমলের দিন

Icon

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:১০

জমাদিউস সানি মাসের দ্বিতীয় জুমা : বরকত ও নেক আমলের দিন

ইসলামী ক্যালেন্ডারের প্রতিটি মাসেই রয়েছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিন। জমাদিউস সানি মাসের দ্বিতীয় জুমা মুসলিমদের জন্য বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। এটি শুধু সাধারণ শুক্রবারের নামাজ নয়, বরং আধ্যাত্মিক পুনরুজ্জীবন, নেক আমল বৃদ্ধি এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের এক সুবর্ণ সুযোগ

জুমার মাহাত্ম্য

জুমা অর্থাৎ শুক্রবার, ইসলামে প্রতিটি মুসলিমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিন। আল্লাহ তাআলা কোরআনে নির্দেশ দিয়েছেন: যারা ঈমান এনেছ, যখন জুমার দিনের আজান দেওয়া হয়, তখন ব্যবসা থামিয়ে জুমার নামাজের জন্য হাজির হও, এবং আল্লাহকে স্মরণ করো যাতে তোমরা কল্যাণ লাভকরো। (সূরা জুমা: ৯) এই আয়াত আমাদের মনে করায় যে, জুমা কেবল ফরজ নামাজের জন্য নয়, বরং আত্ম-পর্যালোচনা এবং নেক আমল বৃদ্ধির এক মহান সময়। বিশেষ করে জমাদিউস সানি মাসের দ্বিতীয় জুমা মাসের মাঝামাঝি সময়ে মুসলিমদের জন্য আত্মশুদ্ধি ও ইবাদত পুনঃসংগঠনের সুবর্ণ সুযোগ।

দ্বিতীয় জুমার বিশেষ তাৎপর্য

যদিও সরাসরি হাদিসে "জমাদিউস সানি মাসের দ্বিতীয় জুমা" উল্লেখ নেই, তবে শুক্রবারের গুরুত্ব বহু হাদিসে উল্লেখিত। নবী করিম (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি শুক্রবারে ভালো আমল করে, সে এমন এক প্রতিদান পায় যা অন্য দিনের তুলনায় অনেক গুণ বেশি। (তিরমিজি) অতএব, এই দিনে নামাজ, দোয়া, কোরআন পাঠ ও সদকা আল্লাহর নৈকট্য লাভের বিশেষ সুযোগ বৃদ্ধি করে।

জুমার দিনে করণীয় আমল

১. নামাজে খুঁটিনাটি মনোযোগ: জুমার নামাজ শুধুই ফরজ নয়, এটি আধ্যাত্মিক পুনর্নবীকরণের একটি সময়। দুই রাকাতের নামাজ ও খুতবার আগে কোরআন পাঠের মাধ্যমে হৃদয় আলোকিত হয় এবং আল্লাহর স্মরণে জীবন সমৃদ্ধ হয়।

২. খুতবা মন দিয়ে শোনা: নবী করিম (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি খুতবা শোনার সময় মন

দিয়ে শুনে, আল্লাহ তাকে সপ্তাহের পাপ থেকে মুক্তি দেন। (সহিহ মুসলিম) মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনা আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে এবং নেক আমল করার প্রেরণা যোগায়।

৩. সদকা ও দান: জুমার দিনে সদকা ও দান আল্লাহর কাছে বিশেষভাবে গ্রহণযোগ্য। হাদিসে এসেছেঃ সদকা কখনো কমিয়ে দেয় না, বরং তা প্রতিপালকের কাছে বৃদ্ধি পায়। (সহিহ মুসলিম) পরিবার, প্রতিবেশী ও দরিদ্রদের সাহায্য করা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের পথ।

৪. কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া: কোরআন পাঠের গুরুত্ব জুমার দিনে দ্বিগুণ। বিশেষ করে জমাদিউস সানি মাসের দ্বিতীয় জুমায় সূরা যাসিন, সূরা আল-মুমিনুন বা অন্যান্য সূরা পাঠ করা বরকত বৃদ্ধি করে। নবী করিম (সা.) বলেছেন: কোরআন পড়া হৃদয়কে শক্তিশালী করে এবং শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা করে। তিরমিজি আত্ম-পর্যালোচনা ও আত্মসংযম

দ্বিতীয় জুমা এমন একটি দিন, যখন আমরা নিজের আচরণ, নেক আমল এবং জীবনধারার প্রতি মনোযোগ দেই। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন নেক আমল শুরু করা এই দিনের অন্যতম বরকত। এটি একধরনের আত্মশুদ্ধি, যা আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনে স্থায়ী পরিবর্তন আনে। পরিশেষে বলতে চাই, জমাদিউস সানি মাসের দ্বিতীয় জুমা কেবল একটি সাধারণ শুক্রবার নয়। এটি আল্লাহর নৈকট্য লাভ, আত্মশুদ্ধি, নেক আমল বৃদ্ধির এবং সমাজে সদকা ও দান করার এক অনন্য সুযোগ। কোরআন ও হাদিসের আলোকে বোঝা যায়, এই দিনের প্রতিটি মুহূর্তই মূল্যবান। মুসলিমরা এই দিনে মনোযোগ দিয়ে নামাজ, খুতবা শোনা, কোরআন পাঠ এবং দোয়া-সদকা দ্বারা আল্লাহর বরকত অর্জন করতে পারে। আল্লাহ আমাদের সকলের নেক আমল গ্রহণ করুন এবং জীবনকে আলো ও শান্তি- তে ভরিয়ে দিন। জুমা মুবারক!

লেখক : ইসলাম বিষয়ক প্রবন্ধকার, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ইসলাম ধর্ম

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর