যেকোনো বিপদ মানুষকে আল্লাহর দিকে ধাবিত করে। বান্দার ওপর যখন বিপদ আসে তখন সে আল্লাহর কাছে ফিরে আসে। ফলে আল্লাহপাক ছোট-বড় বিপদ দিয়ে বান্দাকে পরীক্ষা করে থাকেন। "যে ব্যক্তি আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করবে আল্লাহ তার জন্য (বিপদ ও পরীক্ষা থেকে) বের হওয়ার রাস্তা সৃষ্টি করে দিবেন এবং তাকে রুজি প্রদান করবেন তার ধারণাতীত উৎস থেকে।" [সূরা আত-ত্বালাক, আয়াত: ২-৩]
ইসলামে ধৈর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি গুণ। আল্লাহ ধৈর্যশীলদের প্রতিদান দেবেন এবং তাদের সাথে থাকবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যেমনটি (সূরা আলে ইমরান: ২০০) আয়াতে বলা হয়েছে, "তোমরা ধৈর্য ধারণ কর, আর ধৈর্য ধারণে প্রতিযোগিতা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।" (২-সূরা বাকারাঃ আয়াত-১৫৩)
মাঝে মাঝে যখন মানব জীবনে সকল আশা ভরসা শেষ হয়ে যায় এবং সব কিছু অন্ধকার মনে হয়, তখন আল্লাহ সফলতা এনে দেন। আল্লাহর নিকট আশা করতে আমাদেরকে উৎসাহিত করার জন্য তার প্রতি পুরোপুরি নির্ভর ও বিশ্বাস করার জন্য এবং কখনও তার সাহায্যের আশা ত্যাগ না করার জন্যই এমনটি হয় (আল্লাহ করেন)। বিপদগ্রস্ত অবস্থায়ও প্রত্যেকের এ কথা জেনে সন্তুষ্ট থাকা উচিত যে, সে ছোট খাট বিপদাক্রান্ত হয়েছে এবং বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে। আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে বিপদগ্রস্ত করে পরে তাকে ধ্বংস থেকে রক্ষা করেন, তখন সম্ভবত তিনি তাকে (সে বিপদ দ্বারা) পরীক্ষা করেন। যে কষ্ট সহ্য করে এবং
ধৈর্যশীল হওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর বিধানের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে, সে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তার কোন গোপন কল্যাণ হবে।
নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-কে ধৈর্য ধারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ধৈর্যশীলদের সাফল্য সুনিশ্চিত, কারণ আল্লাহ তাদের সাথে থাকেন। ধৈর্য শুধু প্রতিকূলতাতেই নয়, আনন্দ ও উদ্বেগের সময়েও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করাকে বোঝায়। ইসলাম মানবতার ধর্ম। মানব চরিত্রের উৎকর্ষ সাধনই এর মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আদি যুগ থেকে নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন।
সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মোহাম্মাদ রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাঠিয়েছেন মানবতার উৎকর্ষের পূর্ণতা প্রদানের জন্য।
মহানবী (সাঃ) বলেন, আমাকে পাঠানো হয়েছে সুন্দর চরিত্রের পূর্ণতা প্রদানের জন্য। (মুসলিম ও তিরমিজি)। এবং এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা কোরআন কারিমে বলেন, 'হে মুহাম্মাদ, নিশ্চয়ই তুমি মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত। (সুরা কলম, আয়াত: ৪)। মানব চরিত্রের উত্তম গুণাবলির অন্যতম হলো ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা। পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন আয়াতে মহান আল্লাহ নিজেকে ধৈর্যশীল ও পরম সহিষ্ণু হিসেবে পরিচয় প্রদান করেছেন। ধৈর্যের আরবি হলো সবর। সহিষ্ণুতার আরবি হলো হিলম। সবর ও হিলম শব্দদ্বয়ের মাঝে কিঞ্চিৎ তাত্ত্বিক পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে। সাধারণত সবর তথা ধৈর্য হলো অপারগতার কারণে বা অসমর্থ হয়ে প্রতিকারের চেষ্টা বা প্রতিরোধ না করা। আর হিলম, অর্থাৎ সহিষ্ণুতার মানে হলো শক্তি-সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও প্রতিশোধ গ্রহণ না করা। এ অর্থে হিলম সবর অপেক্ষা উন্নত পর্যায়।
ধৈর্য তিন প্রকার। যথা: অন্যায় অপরাধ হতে বিরত থাকা, ইবাদত আল্লাহর আনুগত্য ও সৎকর্মে কষ্ট স্বীকার করা, বিপদে অধীর না হওয়া। কোনো ব্যক্তি যদি ধৈর্য অবলম্বন করে, তবে তার জীবনে পূর্ণতা ও সফলতা অনস্বীকার্য। কারণ প্রথমত, অন্যায় অপরাধ তথা পাপকার্য থেকে বিরত থাকা সকল প্রকার অকল্যাণ ও গ্লানি থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায়। দ্বিতীয়ত, ইবাদত ও সৎকর্ম সম্পাদন করা সফলতার একমাত্র সোপান। তৃতীয়ত, প্রতিকূলতায় দৃঢ় পদ থাকা লক্ষ্যে পৌঁছার একমাত্র মাধ্যম। সুতরাং পরিপূর্ণ ধৈর্যই মানবজীবনকে পূর্ণতা দিতে পারে। আমাদের উচিত সকল অবস্থায়, যেকোনো অযাচিত পরিবেশে ও পরিস্থিতিতে নিজেকে সংযত রেখে দৃঢ়তার সঙ্গে লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া। তবেই আল্লাহর সাহায্য আমাদের সাথী হবে, আল্লাহ আমাদের সঙ্গী হবেন। যেমন, হযরত মুসা (আ.) নদীপাড়ে এসে নদী পারাপারের উপায় না দেখে সমূহ বিপদ দর্শনে উম্মতকে সান্ত্বনা দিয়ে দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে দৃপ্তকণ্ঠে বলেছিলেন, "কখনোই নয়! (আমরা ধরা পড়ব না, পরাজিতও হব না, কারণ) আমার সঙ্গে আছেন আমার প্রতিপালক; সত্বর তিনি আমাকে পথনির্দেশ করবেন।' (সুরা শোআরা, আয়াত: ৬২)।
লেখক : সহ সম্পাদক, সমাজকলাণ বিভাগ, পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (কেন্দ্রীয় পুনাক) মোহাম্মাদুর, ঢাকা

