Logo

ইসলাম

ঋণগ্রহীতার ৬ করণীয়

Icon

মুফতি মুহাম্মাদ ইয়াসীন

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৬

ঋণগ্রহীতার ৬ করণীয়

এক. নির্দিষ্ট সময়ে ঋণ পরিশোধ করার প্রাণপণ চেষ্টা করা। নিজকে যত দ্রুত সম্ভব দায়বদ্ধতা থেকে মুক্ত করা যায় তার জন্য সচেষ্ট হওয়া। এক্ষেত্রে অনেকের মধ্যে উদাসীনতা দেখা যায়। তারা মানুষের কাছে ঋণী হওয়া সত্ত্বেও তা পরিশোধ করার প্রতি কোনো মনোযোগ দেয় না।

দুই.  শুরু থেকেই সময়মত পরিশোধের প্রাক নিয়ত রাখা এবং এর জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা। আর আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করা। নিয়ত, দোয়া ও সত্যিকার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে আল্লাহর সাহায্য সঙ্গে থাকে। তিনি পরিশোধ বা মুক্তির ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু ঋণ নেওয়ার সময়ই খারাপ নিয়ত রাখা বা ঋণ নিয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন হয়ে পড়া খুবই অন্যায়। এতে শুধু আল্লাহর সাহায্যই হাতছাড়া হয় না, জানমালের বরকতও নষ্ট হয়ে যায়। হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি পরিশোধের নিয়তে মানুষের সম্পদ ঋণ নেয়, আল্লাহ তাকে পরিশোধের ব্যবস্থা করে দেন। আর যে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে নেয়, আল্লাহ তা ধ্বংস করে দেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৩৮৭

তিন. নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তো অবশ্যই, চেষ্টা করা, তার আগেই পরিশোধ করার। টালবাহানা, মিথ্যা কথা ও মিথ্যা ওয়াদার তো প্রশ্নই আসে না। এধরনের আচরণ তো যে কারো সাথেই নাজায়েজ। আর যে বিপদে ঋণ দিয়ে অনুগ্রহ করেছে তার সাথে তো আরো ভয়াবহ। বস্তুত সামর্থ্য সত্ত্বেও এরূপ আচরণ খুবই অন্যায়। হাদীসে এসেছে, বিত্তবানের টালবাহানা জুলুম। (সহীহ বুখারী, হাদীস ২৪০০)

চার. সময়মত পরিশোধ না করলে ঋণদাতা থেকে কখনো কষ্টদায়ক আচরণ প্রকাশিত হতে পারে। এক্ষেত্রে সবর করা ও পাল্টা জবাব না দেওয়া কর্তব্য। ওজর থাকলে তাকে নম্রভাবে বুঝিয়ে বলা উচিত। একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক লোকের কাছ থেকে একটি উটনী ঋণ নিয়েছিলেন। সে তা চাইতে এসে কঠোর ব্যবহার করল। তখন উপস্থিত সাহাবীগণ তার সাথে অনুরূপ ব্যবহার করতে চাইলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে বাধা দিয়ে বললেন, ‘তাকে বলতে দাও। পাওনাদারের কিছু বলার আছে।’ এরপর তাঁদেরকে তাকে একটি উটনী কিনে দিতে বললেন। তাঁরা খুঁজে এসে বললেন, আমরা এর সমকক্ষ উটনী পাইনি, এর চেয়ে উৎকৃষ্টই শুধু পেয়েছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটাই কিনে দাও। জেনে রেখ, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সে, যে পরিশোধে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর। (সহীহ বুখারী, হাদীস ২৩৯০)

পাঁচ. ঋণ দেওয়ার জন্য দাতার শোকর আদায় করা, তার জন্য দোয়া করা। এতে সে খুশি হবে এবং ঋণদানে উৎসাহ বোধ করবে। আবদুল্লাহ ইবনে আবী রাবিয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনাইনের যুদ্ধের সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছ থেকে ত্রিশ বা চল্লিশ হাজার দিরহাম ঋণ নিয়েছিলেন। যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে তিনি তা পরিশোধ করলেন এবং বললেন, আল্লাহ তোমার পরিবারে ও সম্পদে বরকত দান করুন। ঋণের বিনিময় তো হল পরিশোধ ও কৃতজ্ঞতা। (সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৪৬৮৩)

ছয়. ঋণ বান্দার হক, যা পরিশোধ করতে হয় অথবা দাতা কর্তৃক মাফ পেতে হয়। এছাড়া মুক্তির কোনো পথ নেই। আল্লাহ তাআলা তা মাফ করেন না। এজন্য তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিশোধ করে নেওয়া উত্তম, মৃত্যুর আগে-আগে তো অবশ্যই। কিন্তু আল্লাহ না করুন তার আগেই যদি কারো মৃত্যুক্ষণ এসে যায়, তবে কাউকে ওসিয়ত করে যাওয়া উচিত।

লেখক : মুহাদ্দিস, দিলু রোড মাদ্রাসা, নিউ ইস্কাটন ঢাকা।


প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ইসলাম ধর্ম

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর