ধন-সম্পদ, সন্তানসন্ততি কোনো কাজে আসবে না
মাওলানা সাইফুল ইসলাম সালেহী
প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:০৯
সমাজে খুব সুন্দর সুন্দর বাড়ি ঘর ও দালান কোটা নির্মাণ করা হচ্ছে। একজন খুব সুন্দরভাবে সাজিয়ে বাড়ি ঘর নির্মাণ করলে অন্য মানুষেরা চেষ্টা করে তার থেকে আরো সুন্দরভাবে সাজিয়ে বাড়ি নির্মাণ করতে হবে। একজনে একটি জমিন ক্রয় করলে অন্যরা জমিন ক্রয় করার চেষ্টা করে। এই সমাজে চলছে ধন সম্পদের প্রতিযোগিতা। ব্যংক ব্যলেন্সের প্রতিযাগিতা। মান সম্মান ও বিখ্যাত হওয়ার প্রতিযোগিতা। এই সমাজে মেম্বার চেয়ারম্যান ও বড় নেতা হওয়ার প্রতিযোগিতা চলে। এই সমাজে ব্যবসা বাণিজ্য ও বিভিন্ন ধরনের কমিটি হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা চলে। শক্তি ও বংশের প্রতিযোগিতা চলে।
মানুষরা অর্থ সম্পদ ও প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতার মধ্যে ডুবে আছে, তারা শুধু এই নেশার মধ্যে আছে। তারা দুনিয়াকে বেশী গুরুত্ব দিয়েছে, তারা দুনিয়াতে সফল হতে চায়। জগতের মানুষেরা ধন সম্পদ ও দুনিয়াকে এতোই ভালবাসে যে, মনে হয় তারা সারাজীবন এই দুনিয়াতে থাকবে। তারা এই ধন সম্পদ ও প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা করতে করতে তাদের একদিন মৃত্যু হবে। তখন তাদের চির জীবনের জন্য ধন সম্পদ ও প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন, প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদরকে মোহাচ্ছন্ন রাখে। যতক্ষণ না তোমরা কবরসমূহে উপস্থিত হচ্ছ। (সূরা তাকাছুর, আয়াত: ১,২)
প্রাচুর্যের প্রতিযাগিতার নেশার মধ্যে যারা ডুবে আছে আসলে তাদের ভিতরে আল্লাহর ভয় নাই। নাই পরকালের ভয় ও নাই জাহান্নামের ভয়। তারা দুনিয়াকে বেশী ভালবাসে ও আখিরাতের প্রতি উদাসীন। তারা বুঝতেছে না এই সব প্রতিযোগিতার জন্য তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই সব প্রতিযোগিতার কারণে তারা আল্লাহর ইবাদাত করে না ও হাশর নশরের চিন্তা করে না। এই সব প্রতিযোগিতা ও বিলাস জীবনের জন্য জাহান্নামে থাকতে হবে। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে কবর ও জাহান্নাম সম্পর্কে সাবধান করেছেন। আল্লাহ বলেন: এটা কখনও উচিত নয়। তোমরা সত্ত্বরই জেনে নেবে। অতঃপর এটা কখনও উচিত নয়। তোমরা সত্ত্বরই জেনে নেবে। কখনই নয়; যদি তোমরা নিশ্চিত জানতে। তোমরা অবশ্যই জাহান্নাম দেখবে, অতঃপর তোমরা তা অবশ্যই দেখবে দিব্য প্রত্যয়ে, (সূরা তাকাছুর,আয়াত:৩-৭)
ধন সম্পদ ও টাকা পয়সা কিয়মতের দিন কোন কাজে আসবেন না। মানুষ অন্যায় অবিচার ও ঝুলুম করে ধন সম্পদ জমা করতেছে। এই ধন সম্পদই তাকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। অবৈধভাবে ধন সম্পদ জায়গা জমিনের প্রতিযোগিতা করা কাম্য নয়। এই পৃথিবীতে বহু সম্পদশালী মানুষ ছিল, তারা আজ পৃথিবীতে বেচেঁ নাই। কারণ, আবু লাহাব ছিল। আবু লাহাবের অনেক ধন সম্পদ ও টাকা পয়সা ছিল, কিন্তু সেইগুলো কোন কাজে আসে নাই। আল্লাহ বলেন: তার ধন সম্পদ ও তার উপার্জন তার কোন উপকারে আসেনি। (সূরা লাহাব, আয়াত:২)
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন: এরপর অবশ্যই সেদিন তোমরা সুখ সম্পদ সম্বন্ধে জিঞ্জাসিত হবে। (সূরা তাকাছুর, আয়াত:৮) প্রিয় নবী (সা.) বলেন, মহামহিমান্বিত আল্লাহ কিয়ামাতের দিন বলবেন: হে আদম সন্তান! আমি তোমাকে ঘোড়ায় ও উষ্ট্রে আরোণ করিয়ছি, নারীদের সাথে বিয়ে দিয়েছি। তোমাকে উপযুক্ত বাসস্থান দিয়েছি এবং শাসনকায চালানোর সুযোগ দিয়েছি। এবার বল তো, এগুলোর জন্য কি ধরণের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছ? (মুসলিম, হাদিস নং৭৪৩৮)
প্রাচুর্য, ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা, সন্তানসন্ততি, ক্ষমতা ইত্যাদির প্রতিযোগিতা আমাদের ভুলিয়ে রেখেছে আল্লাহকে। গাফিল করে রেখেছে আখিরাত থেকে। আমাদের জন্য অন্য একটা জগৎ অপেক্ষা করছে এবং সেখানে জবাবদিহিতার একটি মঞ্চ অপেক্ষা করছে। তা থেকে আমাদের দূরে সরিয়ে রেখেছে। আল্লাহ বলেন: হে মুমিনরা! তোমাদের সন্তান ও সম্পদ যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ হতে গাফিল করে না দেয়। (সূরা মুনাফিকুন : ৯)
লেখক : আলেম, গবেষক।

