বিবাহের গুরুত্ব বুঝানোর নিমিত্তে সকল শ্রেণীর যুববদেরকে প্রিয় নবী (সা.)বলেন: হে যুবক সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহ করার সামর্থ রাখে, তারা যেন বিবাহ করে। কেননা, বিবাহ তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং যৌনতাকে সংযমী করে। আর যাদের বিবাহ করার সামর্থ্য নেই, সে যেন সাওম তথা রোজা রাখে; কেননা, রোজা তার যৌনতাকে দমন করবে। (সহীহ বুখারি, নিকাহ, হাদিস নং-৪৭৭৮)
হাদিসের ভাষ্যমতে বিবাহ করলে যেসব কল্যাণ অর্জিত হয় :
১- পারিবারিক সম্পর্ক বজায়, পরস্পর ভালোবাসা বিনিময়, আত্মসংযম ও হারাম কাজ থেকে নিজেকে হিফাযত করতে বিবাহ একটি উত্তম মাধ্যম ও উপায়।
২- (হালালভাবে) বংশ পরিক্রমা ঠিক রেখে সন্তান জন্ম দেওয়া ও বংশ বিস্তারে বিবাহ একটি উত্তম পদ্ধতি।
৩- নানা রোগ-ব্যাধিমুক্ত ও নিরাপদে মানুষের যৌন চাহিদা মিটাতে ও মনোবাসনা পূরণ করতে বিবাহ একটি সুন্দরতম পদ্ধতি।
৪- বিবাহের মাধ্যমে সন্তান লাভের দ্বারা পিতৃত্ব ও মাতৃত্বের স্বাদ ভোগ করা যায়।
৫- বিবাহে রয়েছে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্য শান্তির আবাস, প্রশান্তি, শালীনতা ও সচ্চরিত্র।
ইসলামী শরীয়তে বিবাহের হুকুম: আর যে ব্যক্তি বিয়ে না করলে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে তাহলে ঐ ব্যক্তির জন্য বিয়ে করা ফরজ। আর যাদের যিনায় পতিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তাদের জন্যও বিয়ে করা ওয়াজিব। যাদের যৌন চাহিদা রয়েছে তবে যিনায় পতিত হওয়ার আশঙ্কা নেই, তাদের জন্য বিয়ে করা সুন্নাত। (মেশকাতুল মাসাবিহ নিকাহ অধ্যায়)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা মহান আল্লাহর কর্তব্য। প্রথমজন হলেন আল্লাহর পথে জিহাদ পালনকারী। অতঃপর মুক্তিপণ আদায়ে কাজ করা চুক্তিবদ্ধ দাস এবং পবিত্র জীবনের লক্ষ্যে বিবাহকারী।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৬৫৫)
কাজেই নিজের ঈমান, আমলকে সুন্দর করতে বিবাহ ছাড়া অন্য কিছুর বিকল্প নেই। যাদের পরিমিত সম্পদ আছে তাদের জন্য বিয়ে করাতে কাল বিলম্ব করা অনুচিত।
বর্তমান সময়ে বড় বড় অপরাধ সংগঠিত হয় চোখ এবং লজ্জাস্থানের যথাযথ হেফাজত না করার কারণে। অন্যায় কর্মকাণ্ডে অবাধে বিচারণ করার জন্যই আজ পৃথিবীতে এত অন্যায় অবিচার। এই বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন: “(হে মুহাম্মাদ) তুমি ঘোষণা করে দাও, নিশ্চয় আমার প্রভু হারাম করে দিয়েছেন প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল ধরনের অশ্লীলতা, পাপকর্ম, অন্যায় বিদ্রোহ, আল্লাহ তা‘আলার সাথে কাউকে শরীক করা; যে ব্যাপারে তিনি কোনো দলীল-প্রমাণ অবতীর্ণ করেন নি এবং আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে অজ্ঞতাবশত কিছু বলা”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৩৩]
দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে পুরুষরা যেমন আদিষ্ট তেমনিভাবে মহিলারাও। কোনো যুবক-যুবতী যদি চরিত্রহীন বা চরিত্রহীনা হয়ে থাকে তা হলে এর মূলে রয়েছে কুদৃষ্টির অবাদ বিচরণ এবং চোখকে মন্দ কিছু থেকে বিরত রাখা ছাড়া গুনাহ থেকে নিজেকে বিরত রাখাটা দুঃসাধ্য ব্যাপার। সুতরাং চোখকে মন্দ কিছু দেখা থেকে হেফাজত করা অতীব জরুরি। রাসুল (সা.) বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক আদম সন্তানের জন্য যিনার কিছু অংশ বরাদ্দ করে রেখেছেন। যা সে অবশ্যই করবে। চোখের যিনা হচ্ছে অবৈধভাবে কারোর দিকে দৃষ্টি ক্ষেপণ, মুখের যিনা হচ্ছে অশ্লীল কথোপকথন, হাতও ব্যভিচার করে, তবে তার ব্যভিচার হচ্ছে অবৈধভাবে কাউকে হাত দিয়ে ধরা, পাও ব্যভিচার করে। তবে তার ব্যভিচার হচ্ছে কোনো ব্যভিচার সংঘটনের জন্য রওয়ানা করা, মুখও ব্যভিচার করে। তবে তার ব্যভিচার হচ্ছে অবৈধভাবে কাউকে চুমু দেওয়া, কানের ব্যভিচার হচ্ছে অশ্লীল কথা শ্রবণ করা, মনও ব্যভিচারের কামনা-বাসনা করে। আর তখনই লজ্জাস্থান তা বাস্তবায়িত করে অথবা করে না”। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২১৫২,২১৫৩,২১৫৪)
লেখক : প্রাবন্ধিক, শিক্ষক, শ্রীপুর, গাজীপুর।

