Logo

ইসলাম

বিয়ে সামাজিক স্থিতির সোপান

Icon

শোয়াইব বিন হোসাইন

প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৩

বিয়ে সামাজিক স্থিতির সোপান

পৃথিবীতে একমাত্র বুঝমান প্রাণী মানব সম্প্রদায়। মানুষ ছাড়া বাকী প্রাণীকূল নির্বোধ। মানুষ তাই ভালোমন্দ যাচাই করে। কাজ করার আগে ভাবে। কাজের কোন পদ্ধতি সঠিক ও যথার্থ তা বুঝে নিতে চায়। একদম রান্নাঘর থেকে নিয়ে রাষ্ট্রভবন পর্যন্ত প্রতিটি কাজেই প্রয়োজন অনুভব করে শৃংখলার। বোধহীন অবলা প্রাণীর ন্যায় তারা অন্যের ক্ষেতে হানা দেয়না। নিয়মানুবর্তিতা ও যথা প্রক্রিয়া অবলম্বনেই তারা শান্তির খোঁজ পায়! মানব জীবনে বিয়ের ব্যাপারটাও শৃংখলার অংশ। এটা মানব ফিতরাতেরও অবশ্যম্ভাবী দাবি!

একটি চারাগাছ বীজতলা থেকে তুলে এনে বিরাট ভূখন্ডে রোপন করতে হয়। তার যত্ন নিতে হয়। নিয়মিত সেচের মাধ্যমে সদা সজীব রাখতে হয় চারাটি। এককথায় কৃষকের কাঁধে চেপে বসে বিরাট দায়িত্ব। তেমনি সদ্য পরিণীতা স্ত্রীর বিষয়টিও। বাবা-মার ঘর থেকে বিদেশ-বিভুঁইয়ে একদম অপরিচিত এক সংসারে পা রাখতে হয় তাঁকে। দায়িত্বশীল স্বামীর নিবিড় সাহচার্য ও পবিত্র প্রেমের বন্ধন তাঁকে এনে দেয় পূর্ণতার মুকুট। বিনিময়ে অর্জিত হয় পৃথিবীর পরম প্রাপ্তি। এভাবেই পৃথিবী ও তার স্পন্দন যুগ যুগ টিকে থাকে।

পৃথিবীর স্রষ্টা, সর্বময় ক্ষমতাবান মহান আল্লাহ তায়া’লারও নিরংকুশ সমর্থন রয়েছে বিশুদ্ধ এই বন্ধনের প্রতি। বস্তুত আল্লাহপাক মানব ফিতরাতের স্রষ্টা হবার দরুন তার যথার্থ দাবিগুলোর কেবল সমর্থনই দেননি বরং সহজে পাওয়ার যাবতীয় সুযোগও তিনি তৈরি করে দিয়েছেন। বিয়ের বিষয়টিও তেমন সহজলভ্য একটি সুকুমার বিধান। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিয়ের সহজতার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে ইরশাদ করেন: “সবচে বেশি বরকতপূর্ণ বিয়ে সেটাই যাতে খরচা হয় কম”! (আসসুনানুল কুবরা লিননসা’ঈ-৫৬৬৫)

তবে প্রবৃত্তি পূজায় লিপ্ত, অবিবেচক পৃথিবীবাসী ব্যাপারটাকে ব্যাপক কঠিন বানিয়ে রেখেছে। ফলে পবিত্র বন্ধনের অভাবে পৃথিবী তার সুস্থতা হারাচ্ছে। অন্যায়-অনাচারের কালো ধোঁয়ায় নোংরা হচ্ছে দুনিয়া!

হাদিসগ্রন্থ পাঠ করে জানা যায়, মহানবী হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন “নিশ্চয় বিয়ে নজর অবনমনকারী ও লজ্জাস্থান সংরক্ষণে সহায়ক”! (সহীহ বুখারী-৫০৬৬)

হাদিসে পাকের এই বানীটির বড়ো তাৎপর্য রয়েছে। আমরা কেবল এই একটি হাদীসের উপর আমল করে সমাজ থেকে যৌন হয়রানি ও ইভটিজিং এর মতো অশ্লীল ও জঘন্য অপরাধের টুটি চেপে ধরতে পারি। সত্যিই তো, যদি নজর ও লজ্জাস্থানের যথাযথ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয় তবে চলমান সমস্যার অর্ধেক এমনিই নির্মূল হয়ে যায়। আর তা বিয়েকে সহজ করেই কেবল সম্ভব হবে বলে মনে করি। কিন্তু বর্তমান হালের বায়ু ভিন্নস্রোতে প্রবহমান। উল্লিখিত সমস্যার সমাধানে বহু পদক্ষেপের কথা শোনা গেলেও প্রকৃতপক্ষে সেগুলো কার্যকরী ও টেকসই পূর্ণ নয়। মৌলিকভাবে তাই উদ্ভুত সমস্যার সমাধান কেবলমাত্র বিয়ে! প্রেম মানব স্বভাবের সহজাত চাহিদা। এটা অস্বীকারের কোনো উপায় নেই। প্রথম মানব হযরত আদম আলাইহিস সালামও এই টান অনুভব করেছিলেন।

জান্নাতের মতো পরম সুখের ঠিকানাও তাঁর প্রেমের অভাব পূরণ করতে পারেনি। তাঁর একাকী মনের বিরহ ও প্রেমপূর্ণ হৃদয়ের উত্তপ্ত অণল প্রশমিত করতেই মহান আল্লাহ তায়ালা মা হাওয়া আলাইহাস সালামকে সৃষ্টি করেছেন। ফলে তিনি ফিরে পেয়েছেন কাংখিত সেই প্রশান্তি যার অভাব তাঁকে বেকারার ও বেচাইন করে রেখেছিলো। আল্লাহপাক বিয়ের মাধ্যমে পাওয়া সেই আত্মিক প্রশান্তির বর্ণনা এভাবে দিয়েছেন: “আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্য থেকে একটি হলো, তিনি তোমাদের জন্য আপন আপন সত্তা থেকে জোড়াসমূহ সৃষ্টি করেছেন, এবং তোমাদের পরস্পরের মধ্যে তৈরি করে দিয়েছেন প্রেম ও দয়া”! (সূরা রূম, আয়াত-২১), শুধু মানুষই নয় বরং বিশ্ব প্রকৃতির চারপাশেই প্রেমের এই বন্ধন পরিলক্ষিত হয়।

পার্থক্যের বিষয় হলো অন্যান্য জীবজন্তু প্রেমের বাস্তবায়নে স্বাধীন। তাদের নেই তেমন কোনো নিয়ম-কানুন। প্রকৃতির স্বতঃস্ফূর্ত এই প্রকাশক্ষেত্রে কিন্তু মানুষের জন্যেও শক্ত কোনো বাঁধা নেই। বিয়ের মতো সহজ অথচ পবিত্র বন্ধন ছাড়া। দুঃখজনক হলেও সত্য আজ এই সহজ, পবিত্র বন্ধনই পরিণত হয়েছে সোনার হরিণে। যার জন্যে সমাজ আজ কলুষতার পথে রওয়ানা দিয়েছে। নৈতিকতা ভেঙ্গে পড়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়ে গেছে অপরাধ!

এই সমাজে বিয়ের মতো পবিত্রতম বন্ধন কঠিন হয়েছে ঠিক সেদিন থেকেই, যেদিন থেকে মানুষ বিনা বাক্যে পুঁজিবাদকে লুফে নিয়েছে। পাপ-অপরাধ, অন্যায়-অনীতি আর লাগামহীন অনিয়মকে প্রশ্রয় দেবার ফলে মানুষের মস্তিষ্ক সরল-সঠিক  ভাবনা থেকে দূরে সরে গিয়েছে। পাপপুণ্যের হিসেব এখন আর মূখ্য নয়। ক্যারিয়ার, উন্নতি আর প্রগতির ছুটন্ত চাকায় পিষ্ট হয়েছে নৈতিকতা, মানবতা ও আত্ম-জিজ্ঞাসার অবসর। এসব অনৈতিক চিন্তা-ভাবনার বক্রতাই মূলত আজকের সমাজের রসদ! কথিত চিন্তক, গবেষক,  বুদ্ধিজীবী ও অভিভাবকশ্রেণীসহ প্ল্যান করে ধেয়ে আসা এন, জি, ও গোষ্ঠীর চতুর্মুখী হামলায় বাতাসের ডগায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য। ইসলাম যেখানে উন্নতি ও প্রগতির মাপকাঠি বানিয়েছে তাক্বওয়া তথা আল্লাহর ভয়-ভক্তিকে সেখানটায় যবে জায়গা করে নিয়েছে অর্থ-সম্পদ, পদ-পদবী তখন হালত যা হবার তাই হয়েছে।

যুবক যেনো চারিত্রিক সূচিতা অর্জন করে বিশ্ব বিজয়ী না হতে পারে তার যাবতীয় আয়োজন সিস্টেমেই হয়ে যায়! গোটা সমাজ বিস্ময়ে অভিভূত হয় তাঁর বিয়ের কথা আপন মুখে বলতে শুনে! অনোন্যপায় হয়ে যৌবন তখন বিসর্জন দিতে হয় গার্লফ্রেন্ড নামক কাঠের পুতুলের নিকট অথবা আবাসিক হোটেলের কেবিনে! একজন চরিত্রহারা যুবকের দ্বারা পার্থিব কল্যান সাধিত হলেও ইসলাম ও মুসলমানের হারানো ঐতিহ্য আদৌ ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তাইতো আজ আজাদীর পরিবর্তে গোলামীর জিন্দেগীই সুখকর মনে হয়! 

আগামীর সমাজ বিনির্মানে বিয়ের সহজায়নের বিকল্প কিছু নেই। আর্থিক অক্ষমতাকে এক্ষেত্রে বহুলোক প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখাতে চায়। তাদের দাবী আংশিক সত্য। কিন্তু অযথা বসে থাকা বেকার সমাজের উপর বিয়ের দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে হলেও সে সংকট অনেকাংশেই কমানো যেতো। মহান আল্লাহ তায়া’লাই স্বয়ং সেই ওয়াদা দিয়েছেন। ইরশাদ করেছেন: যদি (বিবাহোপযোগী) কেউ অভাবে (দিনাতিপাত) করে, তবে আল্লাহই তাঁকে ধনাঢ্যতা দান করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রাচুর্যময়”। (সূরা  আন নূর,আয়াত- ৩২)

বাস্তব কথা বিশ্বাসের দুর্বলতা। “অল্পে তুষ্টি” যেদিন থেকে হারিয়ে গেছে, পৃথিবীতে গোলমালটা সেদিনই লেগেছে মূলত! 

লেখক : ফাযেল, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ।

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ইসলাম ধর্ম

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর