আজ বিশ্ব মেডিটেশন দিবস
ইসলামে অন্তর্দৃষ্টি ও মানসিক শান্তি
ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৩১
প্রতি বছর ২১ ডিসেম্বর বিশ্বজুড়ে উদযাপন করা হয় বিশ্ব মেডিটেশন দিবস। এটি শুধু আন্তর্জাতিক একটি অনুষ্ঠান নয়; এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে জীবনের ব্যস্ততা, চাপ, দুশ্চিন্তা এবং মানসিক অস্থিরতার মধ্যে ধ্যান বা মেডিটেশন আমাদের অন্তরের শান্তি এবং মানসিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।
ইসলামে মেডিটেশনকে “তফাক্কুর” বলা হয়। এটি কেবল আধ্যাত্মিক প্রশান্তি দেয় না, বরং আমাদের নৈতিক ও মানসিক শক্তিকে বৃদ্ধি করে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের উন্নতি সাধন করে।
ইসলামে আল্লাহ তাআলা মানুষকে গভীরভাবে চিন্তা করার নির্দেশ দিয়েছেন। কোরআনে আল্লাহ বলেন, “তারা কি পৃথিবীটিতে ঘুরে দেখেছে না যে, আকাশ ও পৃথিবী কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে? সত্যিই, এতে বিশ্বাসী লোকদের জন্য লক্ষণসমূহ রয়েছে।” (সূরা আল-জাতিয়া, আয়াত ৩)
এই আয়াত আমাদের শেখায় যে প্রকৃতি ও সৃষ্টির দিকে মনোযোগী হওয়া আমাদের আত্মজ্ঞান বৃদ্ধি করে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে: প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরজ আছে যে, প্রতিদিন অন্তত একবার নিজের ওপর তফাক্কুর করবে।- (সহীহ মুসলিম :২৬৮৭) ইসলামী ধ্যানের মূল লক্ষ্য হলো আল্লাহর স্মরণে মনোনিবেশ, আত্মপর্যালোচনা এবং নৈতিক উন্নতি অর্জন করা।
মেডিটেশনের বৈজ্ঞানিক ও মানসিক গুরুত্ব
আজকের বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত মেডিটেশন বা ধ্যান করলে স্ট্রেস হরমোন কমে, ঘুমের মান বৃদ্ধি পায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি উন্নত হয়। এটি কেবল শারীরিক স্বাস্থ্য নয়, মানসিক প্রশান্তি এবং মানসিক স্থিতিশীলতাও বৃদ্ধি করে। ইসলামে এই ধরনের মানসিক প্রশান্তি অর্জনের প্রধান পথ হলো আল্লাহর স্মরণ ও তাকওয়া। কোরআনে আল্লাহ বলেন:-যারা বিশ্বাস করে এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখে, আল্লাহ তাদের হৃদয় শান্তি দান করেন।”(সূরা আত-তারক্বিয়াহ : ২৮)
এখান থেকে বোঝা যায় যে ধ্যান মানে কেবল নীরব বসে থাকা নয়; বরং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং স্মরণের মাধ্যমে হৃদয়কে প্রশান্ত করা।
ইসলামী ধ্যানের অনুশীলন
ইসলামে ধ্যান বা তফাক্কুরের জন্য কয়েকটি সুস্পষ্ট পদ্ধতি রয়েছে।
কোরআন পাঠ ও ভাবনা: কোরআন তিলাওয়াতের সময় আয়াতের অর্থ বোঝার চেষ্টা করা। এটি মনকে প্রশান্ত করে এবং আল্লাহর প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি করে।
নামাজের সময় ধ্যান: নামাজ শুধু শারীরিক নয়; এটি আধ্যাত্মিক ধ্যানের মাধ্যমে আল্লাহর স্মরণে মনোযোগী হওয়ার এক অনন্য মাধ্যম। বিশেষ করে সিজদায় হৃদয় পুরোপুরি আল্লাহর স্মরণে মনোনিবেশ করে।
প্রকৃতির পর্যবেক্ষণ: আল্লাহ বলেছেন, নিশ্চয়ই আকাশ এবং পৃথিবীর সৃষ্টি চিন্তাশীল মানুষের জন্য নিদর্শন।”(সূরা আল-আলাক : ১৯-২০) প্রকৃতির দিকে মনোযোগী হওয়া আমাদের আধ্যাত্মিকতা বৃদ্ধি করে এবং মানসিক প্রশান্তি প্রদান করে।
লেখক : কলাম লেখক ও ইসলাম বিষয়ক প্রবন্ধকার ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি

