কিয়ামতের দিন সবচেয়ে বিভীষিকাময় অবস্থা হবে। সেই দিন জমিন খুবই উত্তপ্ত হবে। সেদিন আরশের ছায়া ব্যতীত অন্যকোনো ছায়া অবশিষ্ট থাকবে না। সেই কঠিন দিনে শুধুমাত্র মহামহিমের আনুগত্য ও নৈকট্যশীল ব্যক্তিরাই আরশের নিচে ছায়া পাবে।
হজরত আবু হুরায়রাহ (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন- সাত ধরনের ব্যক্তিকে আল্লাহ তা'আলা সেদিন (কিয়ামতের) দিন) তাঁর ছায়ার নীচে আশ্রয় দিবেন যেদিন আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর কারো ছায়া থাকবে না। সেই সাত শ্রেণীর মানুষের বর্ণনা নিচে পেশ করা হল- ন্যায়পরায়ণ শাসক। যিনি কারো উপর কোনো প্রকার জুলুম করেন না। তার উপর আরোপিত দায়িত্বকে গুরুত্বসহকারে পালন করে। কোরআন ও হাদিস পড়ে আমরা জানতে পারি সাহাবায়ে কেরাম রাষ্ট্রীয় কাজে কোনো প্রকার গাফলতি এবং কোন প্রকার আমানতের খেয়ানত করেননি অথচ এক শ্রেণীর মানুষ দেদারসে জনগণের ন্যায্য অধিকার দেওয়ার ব্যাপারে রাজ্যের অনীহা প্রকাশ করে। যে ব্যক্তি মাসজিদ থেকে বের হয়ে এসে আবার সেখানে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত মসজিদেই তার মন পড়ে থাকে।
আল্লামা নববী (রহ.) বলেন, মসজিদের সঙ্গে অন্তরের সম্পৃক্ততা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, মসজিদের প্রতি অগাধ ভালোবাসা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ গুরুত্বসহকারে মসজিদে পড়া। সার্বক্ষণিক মসজিদে বসে থাকা নয়। বরং মসজিদের প্রতি মনের একটা টান থাকা। (উমদাতুল কারি: ৫/২৬১) সেই দুই ব্যক্তি, যারা পরস্পরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে। যদি একত্রিত হয় আল্লাহর জন্যই হয়, আর যদি পৃথক হয় তাও আল্লাহর জন্যই হয়।
তাদের ভালোবাসায় দুনিয়ার কোনো স্বার্থ নেই। তারা আল্লাহর আনুগত্যের জন্য একত্র হয়েছেন। আর তারা একে অপরকে নেককাজের আদেশ এবং, অসৎ কাজে বাধা প্রদান করে।
এখন আমরা এমন একটা সময়ে অবস্থান করছি, যেই সময়টাতে গুনাহের কাজ প্রবাহিত বৃষ্টির পানির মত চারপাশে ছেয়ে গেছে। একাকী সময়টাকে গুনাহ করার জন্য একটা মোক্ষম সময় হিসেবে বেছে নিচ্ছে একশ্রেণীর যুবক সম্প্রদায়। যুবকদের ব্যাপারে হাদিসে রাসুল সা. বলেন-সে ব্যক্তি, যে একাকী অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে আর আল্লাহর ভয়ে তার দু' চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে। যেসব লোক যৌবনকালে একাকী নির্জনে ইবাদতে নিমগ্ন থাকে। সেই সব যুবক-যুবতীগণ কিয়ামতের দিন আরশের নিচে ছায়া পাবে।
এক শ্রেণীর মানুষ কামভাবকে পূর্ণতায় পৌঁছানোর জন্য নিজেকে গুনাহের সাগরে ডুবিয়ে দেয়। হাদিসে রাসুল সা. পরিস্কার ভাবে বলে দিয়েছেন যে- যাকে কোন উচ্চ বংশীয় সুন্দরী যুবতী কু-কাজ করার জন্য আহবান জানায়। এর উত্তরে সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি। সেই সব যুবক- যুবতী যৌবনকালে আল্লাহর ভয়ে নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।
বর্তমানকালে মানুষ দান করার আগে ঘোষণা করে নিজের নামটা সবার কানে কানে বাজিয়ে দেয়, অথচ হাদিসে বর্ণিত আছে, যে আল্লাহর পথে গোপনে দান করে। যার বাম হাতও বলতে পারে না যে, তার ডান হতে কী খরচ করেছে। অর্থাৎ যারা মানুষের আড়ালে দান করে বেড়ায়। (সহিহ বুখারি ৬৬০, সহিহ মুসলিম ১০৩১)
লেখক : শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, শ্রীপুর, গাজীপুর

