থার্টি ফার্স্ট নাইট বা ৩১ ডিসেম্বরের রাত উদযাপন করা বিষয়ে ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিভঙ্গি জানা প্রতিটি মুসলিমের জন্য অত্যন্ত জরুরি। বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজে এই রাতকে কেন্দ্র করে যেসব কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয়, তার অধিকাংশই ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী এবং আল্লাহর নিকট অপছন্দনীয়।
বিধর্মীদের রীতিনীতি অনুসরণ অবৈধ
থার্টি ফার্স্ট নাইট মূলত খ্রিস্টানদের গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী নববর্ষ উদযাপন, যা অমুসলিমদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। ইসলামে অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালন করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে মুসলমানদেরকে সতর্ক করে
বলেছেন, "ইহুদি ও খ্রিস্টানরা কখনো তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্মের অনুসরণ করো।" (সুরা বাকারা: ১২০) এই আয়াত থেকে স্পষ্ট হয় যে, অন্য ধর্মাবলম্বীদের রীতিনীতি ও উৎসব-অনুষ্ঠান অনুসরণ করা মুসলমানদের জন্য বৈধ নয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও স্পষ্টভাবে বলেছেন, "যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদের দলভুক্ত।" (আবু দাউদ: ৪০৩১) অর্থাৎ যে ব্যক্তি অমুসলিমদের অনুকরণ করবে, সে তাদের সাথেই গণ্য হবে আল্লাহর নিকট। এটি অত্যন্ত ভয়ংকর একটি বিষয়, যা প্রতিটি মুসলমানের জন্য গভীরভাবে চিন্তা করার বিষয়।
আতশবাজি-পটকা ফোটানো নিষিদ্ধ
থার্টি ফার্স্ট নাইটে যেসব কর্মকাণ্ড হয়, তার মধ্যে অন্যতম হলো আতশবাজি ও পটকা ফোটানো। এটি একাধিক কারণে ইসলামে হারাম ও নিষিদ্ধ। আতশবাজিতে হাজার হাজার টাকা নিমিষেই পুড়ে ছাই হয়ে যায়, যা সুস্পষ্ট অপচয় ও অপব্যয়। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে কারীমে বলেছেন, "নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই এবং শয়তান তার প্রতিপালকের প্রতি অতিশয় অকৃ তজ্ঞ।" (সূরা বনী ইসরাঈল: ২৭)।
যারা অর্থ-সম্পদ অপচয় করে, তারা শয়তানের ভাই হিসেবে গণ্য হয়। এর চেয়ে ভয়াবহ আর কী হতে পারে? একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের উচিত প্রতিটি টাকা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সঠিক পথে ব্যয় করা। আর আতশবাজি শুধু অপচয়ই নয়, এটি থেকে অগ্নিকাণ্ড, দুর্ঘটনা, শ্রবণশক্তি হ্রাস এবং পরিবেশ দূষণসহ নানাবিধ ক্ষতি হয়। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "ক্ষতি করা যাবে না এবং ক্ষতির প্রতিদান ক্ষতি দিয়ে দেওয়া যাবে না।" (ইবনে মাজাহ: ২৩৪০, মুসনাদে আহমাদ: ২৮৬৫)। আতশবাজি থেকে মানুষ, পশু-পাখি এবং পরিবেশের যে ক্ষতি হয়, তা ইসলামে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। উচ্চ শব্দে মানুষের কষ্ট হয়, বিশেষত অসুস্থ মানুষ, শিশু এবং বয়স্কদের জন্য এটি অত্যন্ত কষ্টদায়ক। এমনকি পশু-পাখিরাও এই উচ্চ শব্দে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে।
গান-বাজনা ও মদ্যপান হারাম
থার্টি ফার্স্ট নাইটের আরেকটি বড় সমস্যা হলো সাউন্ড বক্সে উচ্চস্বরে গান-বাজনা এবং নাচ-গানের আয়োজন করা। ইসলামে গান-বাদ্য হারাম এবং এ বিষয়ে কুরআন ও হাদীসে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, "মানুষের মধ্যে কেউ কেউ অজ্ঞতাবশত আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য লাহওয়াল হাদীস্থ (অসার কথাবার্তা/গান-বাদ্য) ক্রয় করে এবং আল্লাহর পথকে উপহাস করে। তাদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।" (সূরা লুকমান: ৬) উক্ত আয়াতে কালিমায় 'লাহওয়াল হাদীস' বলতে ইসলামী গবেষকেরা গান-বাদ্য এবং অসার বিনোদনকে বুঝিয়েছেন। ইবনে আব্বাস, ইবনে মাসউদসহ অনেক সাহাবী এই ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও স্পষ্টভাবে বলেছেন, "আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু লোক আসবে যারা ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে।" (সহীহ বুখারী: ৫৫৯০)
এখানে বাদ্যযন্ত্র এবং গান-বাজনাকে ব্যভিচার ও মদের সাথে একসাথে উল্লেখ করা হয়েছে, যা এর গুরুতরতা প্রমাণ করে। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, "গান হচ্ছে ব্যভিচারের সিঁড়ি এবং অন্তরের ব্যাধি।" গান-বাজনা মানুষের অন্তরকে আল্লাহর যিকির থেকে দূরে সরিয়ে দেয় এবং নানাবিধ পাপের দিকে নিয়ে যায়।
থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন সম্পূর্ণ নাজায়েজ
পরিশেষে বলা যায়, থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করা একজন মুসলমানের জন্য সম্পূর্ণভাবে হারাম-নাজায়েজ ও গুনাহের কাজ। এতে জড়িত প্রতিটি কর্মকাণ্ড আতশবাজি, গান-বাজনা, মদ্যপান, বেপর্দা, অপচয় সবকিছুই ইসলামে নিষিদ্ধ। আমাদের উচিত এই ধরনের অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে জীবন পরিচালনা করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করুন এবং সকল প্রকার হারাম ও গুনাহের কাজ থেকে হেফাজত করুন। আমীন।
লেখক : শিক্ষার্থী, শরীফবাগ ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা, ধামরাই, ঢাকা- ১৩৫০

