Logo

ইসলাম

অতিথি সেবার অনন্য নজির

Icon

মাওলানা আব্দুর রহমান

প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:০০

অতিথি সেবার অনন্য নজির

মেহমান কদর করা মানবীয় একটি বৈশিষ্ট্য। অনুপম চরিত্রের প্রতীক। মেহমানের আদর আপ্যায়ন সর্বযুগের মহৎ ও শ্রেষ্ঠ মানুষদের নৈমিত্তিক আচারও বটে। আর ইসলাম অতিথিআপ্যায়নকে বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেছে

হযরত আবু হুরায়রা রা. সূত্রে বর্ণিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী সে যেন মেহমানের সম্মান করে। যে আল্লাহ পরকালে বিশ্বাশ কাবা যেন আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখে। যে আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে সে হয়তো ভালো কথা বলবে নতুবা চুপ থাকবে। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

দরবারে রেসালাতের সান্নিধ্যের পরশে ধন্য এক মনীষীর সশ্রদ্ধ ও সসম্মানের অতিথিসেবার বিরল নজির রয়েছে, যা দুনিয়ার সবমেজবানের আদর্শ ও দৃষ্টান্ত। তা হলো, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালামের নিকট এক ব্যক্তি এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ক্ষুধার্ত ও ক্লান্ত। তিনি তার এক স্ত্রীর কাছে খাবার তলব করে খবর পাঠান। উত্তরে জানানো হল শপথ আল্লাহর, যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন। আমার কাছে পানি ছাড়া আর কিছু নেই। এরপর আরেক স্ত্রীর কাছে পাঠান। সেখান থেকেও অনুরূপ উত্তর আসে। এভাবে একে একে সবার কাছে পাঠান। প্রত্যেকেই একই উত্তর দেন। পানি ছাড়া আর কিছু নেই।

তখন তিনি উপস্থিত সাহাবাদের লক্ষ্য করে বলেন, আজ রাতে তাঁর মেহমানদারী করবে কে? (যে মেহমানদারি করবে, আল্লাহ তার ওপর রহম করুন)। আবু তালহা আনসারী রা. বলেন, হে আল্লাহর রাসূল আমি তাঁর মেহমানদারী করব। তিনি মেহমানসহ বাড়ি ফিরলেন। স্ত্রীকে বললেন, খাবার কী আছে?

স্ত্রী বললেন, তার ও বাচ্চাদের সামান্য কিছু খাবার আছে। তিনি বললেন, ঠিক আছে তুমি বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে দাও।

মেহমান আসার পর খাবার যা আছে তাঁর সামনে পেশ করবো। মেহমান ঘরে প্রবেশের পর খাবার পরিবেশন শেষে তিনি যখনই খেতে যাবেন, তখনই তুমি ব্যতিটি ঠিক করার মতো কিছু একটা করতে গিয়ে তা নিভিয়ে দেবে। এদিকে আমরা খাওয়ার ভান করব। যাতে মেহমান খেয়ে পরিতৃপ্ত হয় যে কথা সেই কাজ মেহমানকে তৃপ্তিসহ খাওয়ালেন। কিন্তু স্ত্রী, সন্তানাদিসহ তিনি উপোস রাত কাটান। পরদিন ভোরে রাসুলের দরবারে গমন করলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেন, তোমাদের অতিথিসেবায় মহান আল্লাহ মুগ্ধ হয়েছেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ আয়াত নাজিল করেন।

ইরশাদ হয়েছে- 'আর মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে যারা মদীনাকে নিবাস হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং ঈমান এনেছিল (তাদের জন্যও এ সম্পদে অংশ রয়েছে), আর যারা তাদের কাছে হিজরত করে এসেছে তাদেরকে ভালবাসে। আর মুহাজরিদেরকে যা প্রদান করা হয়েছে তার জন্য এরা তাদের অন্তরে কোন ঈর্যা অনুভব করে না। এবং নিজেদের অভাব থাকা সত্ত্বেও নিজেদের ওপর তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়। যাদের মনের কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়েছে, তারাই সফলকাম।' (সূরা হাশর, আয়াত: ৯)

আজ সমাজে মেহমানের তেমন কদর দেখা যায় না। মেহমান আসলে আমরা মনক্ষুন্ন হই। অথচ ইসলামে মেহমানদারির গুরুত্ব অনেক বেশি। মেহমানের কদর করা ঈমানের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। আল্লাহ আমাদের সহিহ বুঝ দান করুন। যথাযথ মেহমানের কদর করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

লেখক : মুহাদ্দিস, কর্ণপুর জামিয়া হামিদিয়া দারুল উলুম মাদরাসা, শ্রীপুর, গাজীপুর

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

ইসলাম ধর্ম

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর