হোলি আর্টিজান মামলার রায় প্রকাশ, ৭ আসামির আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৫, ১১:৪৫
-685252733fc97.jpg)
গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার মামলায় নিহত পাঁচ সরাসরি হামলাকারীর বিরুদ্ধে অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। একইসঙ্গে পরিকল্পনা ও সহায়তার অভিযোগে দণ্ডপ্রাপ্ত সাত আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ রদ করে তাদের প্রত্যেককে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) হাইকোর্টের ওয়েবসাইটে ২২৯ পৃষ্ঠার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়।
রায়ে বলা হয়, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলায় সরাসরি অংশ নেয় পাঁচ জঙ্গি— রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল এবং খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল। তারা ঘটনাস্থলেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হন। সাক্ষ্য-প্রমাণে এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬(১)(ক)(অ) ধারার অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। রায়ে আদালত উল্লেখ করেন, যদি তারা বেঁচে থাকতেন, তবে প্রত্যেককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যেত।
এদিকে এই মামলায় বিচারিক আদালতের দেওয়া সাত আসামির মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে করা আপিলে হাইকোর্ট বলেন, এরা কেউ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না কিংবা সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেননি। তাই তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৬(১)(ক)(অ) ধারা প্রযোজ্য নয়। তবে, পরিকল্পনা, অর্থ ও অস্ত্র সংগ্রহ, প্রশিক্ষণসহ হত্যাকাণ্ডে প্ররোচনার বিষয়গুলো সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ৬(১)(ক)(আ) ধারায় তারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া সাত আসামি হলেন- রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, হাদিসুর রহমান, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন এবং শরিফুল ইসলাম খালেদ।
রায়ে আরও বলা হয়, হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহতা, নিষ্ঠুরতা এবং এর ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির ক্ষতি বিবেচনায় সাত আসামির প্রত্যেককে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অনাদায়ে তাদের আরও পাঁচ বছর কারাভোগ করতে হবে।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত হোলি আর্টিজান বেকারিতে সংঘটিত ওই সন্ত্রাসী হামলায় ১৭ জন বিদেশিসহ মোট ২২ জন নিহত হন। জিম্মিদের উপর বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালায় জঙ্গিরা, ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান পুলিশের দুই কর্মকর্তা।
ঘটনার দীর্ঘ তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার পর ২০১৯ সালের নভেম্বরে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। এরপর আসামিরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে হাইকোর্ট ২০২৩ সালের অক্টোবরে রায় প্রদান করেন, যার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি এবার প্রকাশিত হলো।
এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। তারা বলেন, এটি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দেশের দৃঢ় অবস্থানের প্রমাণ। মামলাটি দেশের ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত জঙ্গি হামলার বিচারিক উদাহরণ হয়ে থাকবে।
এই রায়ের মাধ্যমে দীর্ঘ প্রায় ৯ বছরের বিচার প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটল।
এনএমএম/এমএইচএস