সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক গ্রেপ্তার

বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৫, ০৮:৫৮

সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। ছবি : সংগৃহীত
সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে (অব.) গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকাল ৮টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডির নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সকাল ৮টার কিছু পর সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে তার ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেছি। তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বি এম খায়রুল হক ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন। তিনি ২০১১ সালের ১৭ মে অবসর গ্রহণ করেন। পরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ১৩ আগস্ট খায়রুল হক পদত্যাগ করেন। এরপর থেকে তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।
একাধিক মামলা
সরকার পতনের পরপরই এ বি এম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের হয়। গত ১৮ আগস্ট ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য ইমরুল হাসান তার বিরুদ্ধে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেন। এরপর ২৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় এবং ২৮ আগস্ট শাহবাগ থানায় দুর্নীতি ও রায় জালিয়াতির অভিযোগে আরও দুটি মামলা দায়ের করা হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের বিতর্ক
দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত রায়গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায়। প্রধান বিচারপতি হিসেবে খায়রুল হক ওই রায়ে নেতৃত্ব দেন। সাত বিচারকের আপিল বেঞ্চে শুরুতে বলা হয়েছিল, পরবর্তী দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে। কিন্তু চূড়ান্ত রায়ে সে অংশ গায়েব হয়ে যায়। এতে দেশে রাজনৈতিক সংঘাতের নতুন দ্বার উন্মুক্ত হয় বলে বিশ্লেষকদের মত।
ক্ষমতার অপব্যবহার ও সুবিধাভোগ
খায়রুল হকের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিতর্কিত রায় প্রদান, রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব ও ব্যক্তিগত চিকিৎসায় রাষ্ট্রীয় তহবিল ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। তিনি প্রধান বিচারপতি হওয়ার সময় কয়েকজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে উপেক্ষা করে নিয়োগ পান। যা বিচার বিভাগের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিরূপ প্রভাব ফেলেছিল বলে অনেকে মনে করেন।
আইন কমিশনের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় ২০১৩ সালে ব্যক্তিগত রোষানলে পড়ে একজন গাড়িচালককে জোর করে চাকরি থেকে অবসর দিতে বাধ্য করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে ওই চালক মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তিনি চাকরি ফেরত চেয়ে আবেদন করেছেন।
সাবেক এ প্রধান বিচারপতির গ্রেপ্তার দেশের রাজনৈতিক-আইনি অঙ্গনে নতুন উত্তাপ ছড়িয়েছে। এখন দেখার বিষয়, তার বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলো কোন দিকে মোড় নেয়।
এনএমএম/এমবি