Logo

আইন ও বিচার

জুলাই হত্যাকাণ্ডে প্রথম চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের নারাজি শুনানি রোববার

Icon

বাংলাদেশের প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২৫, ২১:৩০

জুলাই হত্যাকাণ্ডে প্রথম চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের নারাজি শুনানি রোববার

আব্দুল্লাহ আল আবির। ছবি : সংগৃহীত

জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল আবিরকে হত্যা এবং নাহিদ হাসান ও সোহেল রানা নামে অপর দুই শিক্ষার্থীকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ও বেধড়ক পেটানোর মামলা থেকে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ১০ নেতাকর্মীসহ সব আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে দাখিল করা চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের নারাজি শুনানি রোববার (১০ আগস্ট) অনুষ্ঠিত হবে। 

জুলাই হত্যাকাণ্ডের কোনো মামলায় এটিই প্রথম চূড়ান্ত প্রতিবেদন। মাত্র ৬০ দিনের মধ্যে এ মামলার তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। ঢাকার এডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমানের আদালতে স্পর্শকাতর এ মামলার শুনানি হবে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্পেশাল প্রসিকিউটরিয়াল অ্যাডভাইজার এহসানুল হক সমাজী অংশগ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে। 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার আসামি গুলশানের বিতর্কিত ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী ও দোসর তানভীর আলী ও তার সহযোগীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন উল্লেখ করে মহানগর দায়রা আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এডিশনাল পিপি) আজিজুল হক দিদার গত ১৭ জুলাই নারাজি আবেদন দাখিল করেন। 

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পিপি দিদার বলেন, ‘স্পর্শকাতর এই মামলায় পুলিশ অত্যন্ত তড়িঘড়ি করে দায়সারাভাবে তদন্ত শেষ করেছে। মাত্র সাত দিনে তদন্তে আসামিদের অব্যাহতির সুপারিশ জানিয়ে অতি গোপনে আদালতে ফাইনাল রিপোর্টটি দাখিল করা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের কোনো আইনজীবীকে এ বিষয়টি জানানো হয়নি। সাত মাস পর আকস্মিকভাবে সাধারণ নিবন্ধন (জিআর) শাখায় গিয়ে বিষয়টি জানতে পারি।’

তড়িঘড়ি করে দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন আর বিষয়টি গোপন রাখার অভিপ্রায় সবটাই সন্দেহজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই অভ্যুত্থানের প্রতিটি হত্যা-নির্যাতনের ঘটনার ন্যায়বিচার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পুলিশের দেওয়া ওই ফাইনাল রিপোর্ট বাতিল করে মামলাটির পুনঃতদন্ত চাওয়া হয়েছে।’

আবেদনে বলা হয়, ‘তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা মনগড়া ও আসামিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ফাইনাল রিপোর্ট দিয়েছেন। বাদী বা সাক্ষীর কোনো ধরনের জবানবন্দি নেওয়া হয়নি। সাক্ষ্য-প্রমাণ সবই বিদ্যমান আছে।’ 

চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা রোমেন মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তদন্তের সময় আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ করার মতো উপযুক্ত তথ্য-উপাত্ত ও সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যেটুকু তথ্য পাওয়া গেছে তার ভিত্তিতেই তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এমই (মেমো অব এভিডেন্স) পেশ করা হয়েছিল। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদনের বিষয়ে একমত পোষণ করলে আইন অনুযায়ী ওই ফাইনাল রিপোর্ট আদালতে দাখিল করা হয়েছে। এখানে প্রভাবিত হওয়ার কিছু নেই। এখন সংক্ষুব্ধ বা বাদী পক্ষ আদালতে নারাজি দিতেই পারেন। পুনঃতদন্ত চাইতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আদালত পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।’

মামলা সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৯ জুলাই বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর গুলশানের কালাচাঁদপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আন্দোলরত শিক্ষার্থী আবিরকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তানভীর আলীর নির্দেশে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুলসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ওই হামলা চালান। এ ঘটনায় নিহত আবিরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হাসান মাহমুদ বাদী হয়ে ১৮ আগস্ট আদালতে মামলা করেন। 

আদালত আবেদনটি এজাহার হিসেবে রুজু করতে গুলশান থানাকে নির্দেশ দেন। গত বছরের ২০ আগস্ট এজাহার রুজু করে গুলশান থানা। এতে তানভীর ও বাবুলসহ মোট ১০ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫০ থেকে ২০০ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। এজাহারভুক্ত অপর আট আসামি হলেন, উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শিমুল, গুলশান থানা ছাত্রলীগের নেতা আনিসুর রহমান সুজন, মানিক, সোহাগ, গুলশান থানা শ্রমিক লীগের মহসিন ওরফে কাঁকড়া মহসীন, গুলশান থানা যুবলীগের জামিল হোসেন ও শহিদুল ইসলাম এবং গুলশান থানা আওয়ামী ওলামালীগ সহসভাপতি আব্দুল হামিদ। 

মামলাটির তদন্ত করেন গুলশান থানার তৎকালীন সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) রোমেন মিয়া (বর্তমানে সুনামগঞ্জের ছাতক থানায় কর্মরত)। তিনি মামলার মাত্র ৬০ দিনের মাথায় তদন্ত শেষে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ জানিয়ে গত বছরের ২২ অক্টোবর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। 

এতে প্রধান আসামি তানভীর আলীকে কানাডার নাগরিক হিসেবে দেখানো হয়েছে। আলামত হিসেবে তার কানাডীয় পাসপোর্টের ফটোকপি আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে তার বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) থাকলেও পুলিশের রিপোর্টে এর কোনো তথ্য তুলে ধরা হয়নি। ফাইনাল রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, মামলার বাদী হাসান মাহমুদ এবং সাক্ষীদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। মামলাটি ‘তথ্যগত ভুল’। 

মামলায় বর্ণিত ঘটনার সঙ্গে আসামিদের জড়িত থাকার কোনো তথ্য বা সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে সব আসামিকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আবেদন জানিয়ে ‘চূড়ান্ত রিপোর্ট’ দাখিল করা হলো।

এ হত্যা মামলায় অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা তানভীর আলীর বিরুদ্ধে অন্য একটি ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তদন্ত করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ২০ জুলাই সন্ধ্যায় রামপুরা এলাকায় গুলিবিদ্ধ নাহিদ হাসান ঢাকার সিএমএইচে গত এক বছর ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার শরীরে তিনটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। বর্তমানে আরও একটি অস্ত্রোপচারের অপেক্ষায় আছেন তিনি। আন্দোলনে তার সহযোদ্ধা ও তানভীর কর্তৃক নির্যাতনের শিকার তিতুমীর কলেজ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা সোহেল রানা জানান, তিনি সুবিচারের আশায় আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এতে সাবেক সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ২২ জনের নাম উল্লেখসহ ২০-৩০ জনকে আসামি করা হয়। আসামির তালিকার ২ নম্বরে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং ৩ নম্বরে তানভীর আলীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা যায়, অভিযোগটির তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়া শুরু হবে। 

এম এ জলিল উজ্জ্বল/এইচকে

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

আদালত জুলাই অভ্যুত্থান

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর