দেশের বিচার বিভাগীয় সংস্কার মডেল এখন পরিবর্তনশীল বিশ্বের অনুপ্রেরণা

আইন ও আদালত ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২১

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশের বিচার বিভাগীয় সংস্কার মডেল এখন পরিবর্তনশীল বিশ্বের অনুপ্রেরণা। ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সংঘটিত অবিস্মরণীয় গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিচার বিভাগের সংস্কারের একটি জোরালো দাবি জনমানসে উত্থাপিত হয়। কারণ জুলাই অভ্যুত্থান ছিল মূলত ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার এক যৌথ আকাক্সক্ষার প্রতিফলন, যা ন্যায়ভিত্তিক ও গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের অপরিহার্য উপাদানও বটে। এই পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ২০২৪ সালের ১০ আগস্ট বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বাংলাদেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতির দায়িত্বগ্রহণ করেন, যা জাতির বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করে।
গত শনিবার সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি হিসেবে তিনি এমন এক কঠিন সময়ে দায়িত্ব গ্রহণে করেছিলেন যখন বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা ছিল পর্বতসম। বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক পুনর্গঠন ছিল এক অপরিহার্য সময়ের দাবি। এমন এক প্রেক্ষাপটে জনগণের প্রত্যাশা এবং জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে সামনে রেখে প্রধান বিচারপতি ২০২৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। যার মাধ্যমে বিচারব্যবস্থাকে আধুনিক, দক্ষ এবং সুশৃঙ্খল করার এক যুগোপযোগী কর্মসূচি শুরু হয়।
প্রধান বিচারপতি ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ এমন একটি কৌশলগত পরিকল্পনা, যার মূল লক্ষ্য বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা। স্বাধীনতা, সততা ও দক্ষতার নীতির সঙ্গে দেশের বিচারব্যবস্থাকে পরিচালিত করা। এক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টিভঙ্গি এই যে, বিচার বিভাগ কেবল ন্যায়বিচার প্রদান করেই সন্তুষ্ট থাকবে না; বরং নিজের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচারের আদর্শ সমাজে এমনভাবে প্রতিফলিত করবে, যেন বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা ও প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা দৃশ্যমান হয়। মূলত জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের এই সংস্কার উদ্যোগ বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থাকে জনগণকেন্দ্রিক ও সময়োপযোগী করে তোলার এক অনন্য প্রচেষ্টা।
তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বিচার বিভাগ, আইনজীবী, উন্নয়ন সহযোগী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে বিচার বিভাগের সংস্কারে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বিশেষ করে, প্রধান বিচারপতির বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতার বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দেন।
প্রধান বিচারপতির গৃহীত বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য ছিল বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের হারানো আস্থা ফিরিয়ে আনা। প্রধান বিচারপতির এই সংস্কার উদ্যোগের সফল বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণ, সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব নিশ্চিতকল্পে আইন মন্ত্রণালয়, বার কাউন্সিল, একাডেমিয়া এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে ইতোমধ্যে একটি জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ভিত্তিক কাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে, যা জাতির এই ক্রান্তিকালে বিচার বিভাগের সার্বিক মানোন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে, এই সমন্বিত প্রক্রিয়ার কারণে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের এই নবযাত্রাকে একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা হিসেবেই সংজ্ঞায়িত করা বাঞ্ছনীয়।
জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের বিচার বিভাগের এই ইতিবাচক রূপান্তর থেকে যে মূল্যবান শিক্ষা দৃশ্যমান, তা অন্যান্য পরিবর্তনশীল দেশের জন্যও সমরূপে তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশের বিচার বিভাগের এই রূপান্তরের অভিজ্ঞতা দেখিয়ে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরপরই বিচার বিভাগের জন্য যত দ্রুত সম্ভব একটি স্পষ্ট সংস্কার রূপরেখা ঘোষণা করা কতটা জরুরি। প্রধান বিচারপতি ঘোষিত বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ বাংলাদেশের জনগণকে নতুন করে আশার আলো দেখিয়েছে এবং একই সঙ্গে প্রমাণ করেছে, জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনাই হতে পারে একটি টেকসই বিচার বিভাগের মূল ভিত্তি।
বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে সেই বিরল উদাহরণগুলোর একটি, যেখানে বিচার বিভাগ জাতীয় রূপান্তরের রূপক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। মূলত প্রধান বিচারপতির দূরদর্শী নেতৃত্ব ও সাহসী উদ্যোগের ফলেই বাংলাদেশের বিচার বিভাগ জুলাই বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে জন-আকাক্সক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সক্ষম হয়েছে। তাই বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা আজ বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্যও অনুপ্রেরণার উৎস। বাংলাদেশের বিচার বিভাগ দেখিয়েছে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য, অংশিদারিত্ব ও সংবিধাননিষ্ঠ প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিচার বিভাগ জাতি পুনর্গঠনের এক অনন্য চালিকাশক্তিতে পরিণত হতে পারে।
বিকেপি/এমবি