বিক্রয় হচ্ছে পানির দরে, বাড়ছে ওয়াকিটকির অবৈধ ব্যবহার

আইন ও আদালত ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪৫

বাংলাদেশে ওয়াকি-টকি অবৈধভাবে ব্যবহার করা আইনসিদ্ধ নয়। এটি সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি সংবেদনশীল বিষয়, বিশেষ করে নিরাপত্তা ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে। এর ব্যবহার সাধারণত বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (ইঞজঈ) ও বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কর্তৃক কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
সাধারণ মানুষের জন্য অনুমোদিত তরঙ্গ ব্যবহার ছাড়া ওয়াকি-টকি ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাইরে এর ব্যবহার অনুমোদিত নয়। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১ এর ধারা ৫৫(১) অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি লাইসেন্স ছাড়া ওয়াকি-টকি ব্যবহার করতে পারে না। তবে কিছু নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের জন্য জরুরি ও যৌক্তিক কারণ বিবেচনা করে বিটিআরসি ওয়াকি-টকি আমদানি ও ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারে।
অনুমোদনহীন ওয়াকি-টকি সেট (পিএমআর ও এসবিআর) কেনা-বেচা ও ব্যবহার থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা রয়েছে বিটিআরসির। বিটিআরসি নির্দেশনা দিয়েছে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১ (সংশোধিত-২০১০) এর ধারা ৫৫ (১) অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি লাইসেন্স ছাড়া বাংলাদেশ ভূখণ্ড বা আঞ্চলিক সমুদ্রসীমা বা আকাশসীমায় বেতার যোগাযোগের উদ্দেশ্যে কোনো বেতার যন্ত্রপাতি স্থাপন, পরিচালনা বা ব্যবহার করবেন না বা কোনো বেতার যন্ত্রপাতিতে কমিশন বরাদ্দ করা ফ্রিকোয়েন্সি ছাড়া অন্য কোনো ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করবেন না।
সংশ্লিষ্ট আইনের বিধানের আলোকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে আবেদনের ভিত্তিতে এবং প্রয়োজনের যৌক্তিকতা বিবেচনায় নিয়ে ওয়াকি-টকি সেট আমদানি ও ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদন ব্যতীত বিভিন্ন তরঙ্গে ব্যবহার্য ওয়াকি-টকি সেট (পিএমআর ও এসবিআর) ক্রয়, বিক্রয় এবং ব্যবহার সরাসরি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১ (সংশোধিত-২০১০)-এর লঙ্ঘন। অনেক ক্ষেত্রে তা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্যও হুমকিও হতে পারে।
এছাড়াও ওয়াকিটকির মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে অপরাধ সংঘটন করলে পরে অপরাধী শনাক্তকরণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে; যা সার্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।’
জরিমানা ও শাস্তি : অনুমোদন ছাড়া ওয়াকি-টকি ব্যবহার করলে জরিমানাসহ কঠোর শাস্তির বিধান আছে। অবৈধ ওয়াকি-টকি বিক্রি, কেনা এবং ব্যবহারের বিরুদ্ধে বিটিআরসি নিয়মিত অভিযান ও ব্যবস্থা নেয়। এছাড়া অবৈধভাবে ব্যবহৃত ওয়াকি-টকি সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করা হয়।
লাইসেন্স-মুক্ত ওয়াকি-টকি : কিছু লাইসেন্স-মুক্ত ওয়াকি-টকি (যেমন, কিছু নির্দিষ্ট ঋজঝ রেডিও) সাধারণ ব্যবহারের জন্য বৈধ, তবে সেগুলিরও নির্দিষ্ট ক্ষমতা এবং চ্যানেল সীমা মেনে চলতে হয়। দণ্ডবিধি ১৮৬০ অনুযায়ী বাংলাদেশে অবৈধভাবে ওয়াকি-টকি ব্যবহার করলে, এর বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রয়েছে। এটি অন্তত ৩ বছর কারাদণ্ড অথবা জরিমানা, অথবা উভয় হতে পারে। ধারা ৩৭১ (ভারতীয় দণ্ডবিধির অধীনে): যারা অবৈধভাবে টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে, তাদের জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন, ২০০১ আইনে অবৈধভাবে ওয়াকি-টকি ব্যবহার করলে শাস্তির বিধান রয়েছে। এর আওতায়, কারাদণ্ড কিংবা জরিমানা হতে পারে। এছাড়া অবৈধ টেলিযোগাযোগ ব্যবহার একটি তথ্যপ্রযুক্তির অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইন অনুযায়ী এর শাস্তি হতে পারে।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী মোসাম্মৎ মাকসুদা বেগম এবং অ্যাড. শাহ আলম বাংলাদেশের খবরকে জানান, অনুমোদন ছাড়া ওয়াকি-টকি ব্যবহার করলে অন্যদের যোগাযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং জরুরি অবস্থার সময় এটি একটি বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে। অবৈধ ওয়াকি-টকি ব্যবহার অপরাধমূলক কাজেও ব্যবহার হতে পারে, তাই এর নিয়ন্ত্রণ জরুরি। বিটিআরসি কর্তৃক নির্ধারিত নিয়ম মেনে চলা এবং বৈধ লাইসেন্স ছাড়া ওয়াকি-টকি ব্যবহার থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব।
তাহলে, যদি আপনি ওয়াকি-টকি ব্যবহার করতে চান, তবে নিশ্চিত হন যে এটি বৈধভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বিকেপি/এমবি