
বীমা খাতের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ ধোয়া বা বৈধ অর্থের আড়ালে দেখানোর একটি প্রক্রিয়া। সহজভাবে বলতে গেলে, কেউ অপরাধ বা অবৈধ কর্মকাণ্ড থেকে আয় করা টাকা বীমা পলিসি বা বিনিয়োগের মাধ্যমে বৈধ অর্থের আকারে ঢেকে দেয় এই মানিলন্ডারিং। অবৈধ অর্থকে এমনভাবে রূপান্তর করা হয় যাতে তা আইনের চোখে বৈধ মনে হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বীমা খাতে মানিলন্ডারিং-এর সাধারণ তিন ধাপে করা হয়। অবৈধ অর্থকে আর্থিক ব্যবস্থায় ঢোকানো অর্থাৎ নগদ টাকা দিয়ে বীমা প্রিমিয়াম পরিশোধ করা। লেনদেনকে জটিল করা, যাতে উৎস বোঝা কঠিন হয়। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন বীমা পলিসি বা দেশে বিদেশে লেনদেন করা হয়। এছাড়া পলিসি থেকে অর্থ উত্তোলন করে ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে বৈধ ব্যবসা বা ব্যক্তিগত খরচে ব্যবহার করা হয়।।
বিভিন্নভাবে বীমা শিল্পে মানিলন্ডারিং হয়।নকল বা অতিমূল্যায়িত পলিসি- পলিসি কিনে প্রিমিয়াম বেশি পরিশোধ করা এবং পরে ফেরত পাওয়া অর্থ।ক্লেমিং ট্রিকস- ক্ষতির সত্যতা না দেখিয়ে বা ফিকশনাল ক্ষতির জন্য ক্লেইম করা।অপ্রত্যাশিত বিনিয়োগ পলিসি- অবৈধ অর্থ বীমা প্রিমিয়ামে ঢোকানো এবং পরবর্তীতে ফেরত পাওয়া।রিইনস্যুরেন্স চেইন ব্যবহার- বিভিন্ন দেশে রিইনস্যুরেন্স লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর করা। বীমা শিল্পে মানিলন্ডারিং হলো অবৈধ অর্থকে বীমা পলিসি বা বীমা লেনদেনের মাধ্যমে বৈধ আয় হিসেবে দেখানোর প্রক্রিয়া, যা আন্তর্জাতিক ও জাতীয় আইন দ্বারা নিষিদ্ধ।
বীমা শিল্পে মানি লন্ডারিং বলতে অবৈধভাবে অর্জিত অর্থকে বীমা পলিসির মাধ্যমে “পরিষ্কার” করে বৈধ করার প্রক্রিয়াকে বোঝায়। অপরাধীরা অবৈধ অর্থ দিয়ে প্রিমিয়াম পরিশোধ করে এবং পরবর্তীতে পলিসি নগদায়নের মাধ্যমে সেই অর্থ বৈধভাবে ফিরে পায়। জীবন বীমা, বিশেষত যেখানে দ্রুত নগদ উত্তোলনের ব্যবস্থা থাকে, সেটি মানি লন্ডারিংয়ের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
এ ক্ষেত্রে নানা কৌশল ব্যবহার করে থাকে। অতিরিক্ত প্রিমিয়াম প্রদান করে অর্থাৎ অপরাধীরা অবৈধ অর্থ দিয়ে তাদের বীমা প্রিমিয়াম অতিরিক্ত পরিশোধ করে, তারপর তা ফেরত চায়। একটি জীবন বীমা পলিসি কেনা হয় এবং পরে তা নগদায়নের মাধ্যমে টাকা তোলা হয়, যা অবৈধ অর্থকে বৈধ টাকায় পরিণত করে। অবৈধ অর্থ কোনো তৃতীয় পক্ষের নামে পলিসি করে, যা পরে সেই সুবিধাভোগী টাকা হাতে পায়।
বীমা শিল্প ঝুঁকিপূর্ণ : জীবন বীমার বিনিয়োগমূলক বৈশিষ্ট্য, বিশেষ করে দ্রুত নগদ টাকা তোলার সুবিধা, এটিকে অর্থ পাচারের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলে। বীমা পলিসির সুবিধাভোগী তৃতীয় পক্ষ হওয়ায় অর্থ পাচারের একটি লুকানো পথ তৈরি হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কয়েকজন বীমা বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে জোর দিতে হবে আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার। বীমা খাতের সাথে যুক্ত সকলকে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। অর্থপাচার রোধে সরকার ও বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এর মতো সংস্থাগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বেশি প্রয়োজন।
মানি লন্ডারিং এর শাস্তি : বাংলাদেশেমানি লন্ডারিংএ শাস্তিঅন্যূন ৪ বছর এবং অনধিক ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড। এছাড়াও, অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির মূল্যের দ্বিগুণ অথবা ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড এবং বাজেয়াপ্ত হতে পারে। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ অনুযায়ী এই শাস্তি প্রযোজ্য।
ব্যক্তিরক্ষেত্রে কারাদণ্ড ছাড়াও জরিমানা হতে পারে। প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে অপরাধের সাথে জড়িত সম্পত্তির মূল্য ও অন্য আনুষঙ্গিক বিষয় বিবেচনা করা হয়। মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ অনুযায়ী ২৭টি অপরাধকে পূর্বনির্ধারিত অপরাধ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে অর্জিত অর্থ লন্ডারিংয়ের চেষ্টা করা হয়।
বিকেপি/এমবি