Logo

আইন ও বিচার

দেশে শিশু গৃহকর্মী সুরক্ষায় আইন নেই

Icon

আইন ও আদালত ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৩৭

দেশে শিশু গৃহকর্মী সুরক্ষায় আইন নেই

শিশুশ্রম নিয়ে আইন আছে। কিন্তু গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুদের সুরক্ষায় আইন নেই। অথচ দেশে প্রতিনিয়ত ৪০ শতাংশ শিশু, আর রাজধানীতে প্রায় ৫০ শতাংশ শিশু নানা ধরনের সহিংসতার শিকার হয়। তারা মারধরসহ নানা নিপীড়ন সহ্য করছে। তাই সুনির্দিষ্ট আইন ও এর যথাযথ প্রয়োগ এসব শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবে বলে মনে করেন শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।

তারা মনে করেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) আলোকে সরকার চলতি বছরের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে অঙ্গীকারবদ্ধ। সরকারের এ প্রতিশ্রুতি ও ঘোষণা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুর অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন এবং তার সফল বাস্তবায়ন। 

বাংলাদেশের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশই শিশু। এসব শিশুর একটি বড় অংশ শ্রমজীবী। তাদের মধ্যে অনেকে গৃহকাজে নিয়োজিত। শ্রমজীবী শিশুদের প্রকৃত সংখ্যার হালনাগাদ কোনো তথ্য নেই। কারণ, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জাতীয় শিশুশ্রম জরিপে গৃহকর্মী শিশুর তথ্য অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে ২০০৭ সালে আইএলও-ইউনিসেফ পরিচালিত একটি জরিপ সূত্রে জানা যায়, তখন বাংলাদেশে গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ছিল প্রায় চার লাখ ২০ হাজার। দেশের সামগ্রিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার বিবেচনায় ২০২৫ সালে এসে সংখ্যাটি বেড়েছে বলে মনে করছেন শিশু সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা সংস্থার প্রতিনিধিরা।

শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের খবরকে জানান, বাংলাদেশের বিদ্যমান কোনো আইনে গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুর অধিকার ও সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি। এ জন্য তারা আইনি সুরক্ষা থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত। শ্রম আইন, ২০০৬ অনুসারে গৃহকর্মীদের অধিকারের বিষয়টি স্পষ্টতই শ্রম আইনের বিধিবিধান বহির্ভূত। শ্রম আইনের ১ (৪) ধারায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, এ আইন গৃহকর্মীদের বেলায় প্রযোজ্য হবে না। শিশু আইন, ২০১৩ অনুযায়ী শিশু আইনের বিধিবিধানগুলো মূলত সেসব শিশুদের সুরক্ষার জন্য কাজ করে, যেসব শিশু কোনো অপরাধের কারণে আইনের সংস্পর্শে বা বিচার ব্যবস্থার সংস্পর্শে আসে।

শিশু আইনের ৪৪ নম্বর ধারাতে কারখানায় কর্মরত শিশু শ্রমিকের অধিকার বিষয়ে বলা হয়েছে। এ ধারা অনুসারে, কোনে ব্যক্তি যদি কোনো শিশুকে কারখানায় বিপজ্জনক কাজ করান এবং অর্থনৈতিকভাবে বা অন্য কোনোভাবে শোষণ করেন, তবে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সুতরাং এ আইনেও গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুর অধিকার সুরক্ষিত হয়নি। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০- এর বিধিবিধান নারী-শিশুর ওপর নির্যাতন দমনে প্রণীত। এ আইনের বিভিন্ন ধারায় হত্যা, নারী ও শিশু পাচার, পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা, নারী ও শিশু অপহরণ, ধর্ষণ ইত্যাদি অপরাধের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। অনেক গৃহকর্মীর ক্ষেত্রে এগুলো প্রযোজ্য হলেও বিশেষ কোনো দৃষ্টি দেয়া হয়নি। 

শুধু গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি অনুযায়ী ১৪ বছরের নিচে কোনো শিশুকে গৃহকর্মে নিয়োগ করা যাবে না উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে ১২ বছর বয়সী শিশুদেরও গৃহকাজে নিয়োগ দেয়া যাবে, যদি কাজটি তার জন্য ক্ষতিকারক না হয়, অথবা এর ফলে তার শিক্ষা গ্রহণকে বাধাগ্রস্ত না করে। 

গৃহকর্মী শিশুদের সুরক্ষায় বাংলাদেশে আসলে কোনো আইন নেই। শুধু গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি ২০১৫ রয়েছে। কিন্তু সেই নীতিমালার অনুকরণেও কোনো আইন নেই। এতদিনেও নীতিমালা অনুযায়ী গৃহকর্মী শিশুদের সুরক্ষায় কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

বিকেপি/এমবি

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

আইন ও আদালত

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর