কাবিননামা জালিয়াতি
ভুয়া কাজীদের দৌরাত্ম্যের প্রতিকার

আইন ও আদালত ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৪৪

প্রতীকী ছবি
বাংলাদেশে কাবিননামা জালিয়াতি ও ভুয়া কাজীদের দৌরাত্ম্য একটি গুরুতর সামাজিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব প্রতারণার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় ভুক্তভোগীরা আইনি সহায়তা ও ন্যায়বিচারের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার কালান্দিগঞ্জে কাজীর জালিয়াতির ঘটনা অনেকেই জানেন। কালান্দিগঞ্জ ফাজিল মাদরাসার শিক্ষক ও নিকাহ রেজিস্ট্রার আলী আজগর একাধিক কাবিননামায় ভুয়া তথ্য সংযুক্ত করে প্রতারণা করেছেন। ছেলের পক্ষকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার কাবিননামা প্রদান করা হলেও মেয়ের পক্ষকে ১১ লাখ ২০ হাজার টাকার কাবিননামা দেওয়া হয়। এ ঘটনায় উভয় পক্ষ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
এছাড়া চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার কাদলা ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজী মো. মাহমুদুল হাসান ও তার সহযোগী মোহাম্মদ উল্লাহ আশরাফ মুনতাসীর শাকিলের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া কাবিননামা তৈরি করেছেন। এ ঘটনায় আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার অনুমানপুর দাখিল মাদরাসার সহকারী সুপার আব্দুল লতিফ ও মালিয়াট ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার মো. সোলায়মান হোসেনের সিল ও স্বাক্ষর জাল করে একাধিক বিয়ে পড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার আব্দুর রহমান একই বিয়েতে দুই ধরনের কাবিননামা প্রদান করেছেন। এ ঘটনায় আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
কাবিননামা জালিয়াতির শাস্তি
কাবিননামা জালিয়াতি একটি গুরুতর অপরাধ। এর জন্য সংশ্লিষ্ট আইনসমূহে শাস্তির বিধান রয়েছে।
দণ্ডবিধি, ১৮৬০ : কাবিননামা জালিয়াতি প্রতারণা ও জালিয়াতির অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ : যদি কাবিননামা জালিয়াতি ভোক্তার অধিকার লঙ্ঘন করে, তবে এই আইনের আওতায়ও শাস্তির বিধান রয়েছে।
মুসলিম পারিবারিক আইন : কাবিননামা জালিয়াতি বিবাহ ও তালাকের বৈধতা ও কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায়
কাবিননামা জালিয়াতি বা ভুয়া কাজীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া উচিত। ভুয়া কাবিননামা বা প্রতারণার প্রমাণ হিসেবে রেকর্ড, সাক্ষী ও অন্যান্য নথি সংগ্রহ করা জরুরি। নিকাহ রেজিস্ট্রারদের কার্যক্রম মনিটরিং ও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা নেওয়া প্রয়োজন।