ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গঠনে সাংবাদিকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ
আইন ও আদালত ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৫৪
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী।
ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গঠনে সাংবাদিকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী।
তিনি বলেছেন, প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে দেশের বিচার বিভাগে যে অগ্রগতি হয়েছে, তা শুধু প্রশাসনিক বা প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নয়। বরং জনআস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও প্রকৃত ন্যায়বিচারের বাস্তবায়ন। এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা বিশ্বমানের, দক্ষ, স্বচ্ছ ও জনগণবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে সাংবাদিকরা এই সংস্কারযাত্রা ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গঠনের প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে থাকবেন।
গতকাল শনিবার দুপুরে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে ব্র্যাক সিডিএমে সুপ্রিম কোর্ট রিপোর্টার্স ফোরামের (এসআরএফ) সদস্যদের নিয়ে আয়োজিত কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে সুপ্রিম কোর্ট ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সমন্বয়ে এ আয়োজন করা হয়।
বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় প্রতিষ্ঠার দ্বারপ্রান্তে উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বলেন, এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য অধ্যাদেশের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। তাই আলাদা সচিবালয় ঘোষণার জন্য এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতা বাকি রয়েছে।
প্রধান বিচারপতির রোডম্যাপ প্রসঙ্গে রেজিস্ট্রার জেনারেল বলেন, ২০২৪ সালের ১১ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণ করেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। একই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর তিনি বিচার বিভাগীয় সংস্কারের জন্য একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। এই রোডম্যাপটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, পৃথকীকরণ এবং প্রাতিষ্ঠানিক উৎকর্ষ নিশ্চিত করতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নির্ধারণ করেছে। প্রধান বিচারপতির এই দৃষ্টিভঙ্গির কেন্দ্রে রয়েছে প্রয়োজনীয় আইনি ও কাঠামোগত সংস্কার।
এর মধ্যে মাসদার হোসেন মামলার রায় অনুযায়ী একটি পৃথক সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, বিচার বিভাগের জন্য স্বতন্ত্র ও পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ, অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি ও পদায়নের স্বচ্ছ নীতি প্রণয়ন, গবেষণা, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মেধার বিকাশ, উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগের জন্য নির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন এবং দুর্নীতি দূরীকরণে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক বিচারসেবা নিশ্চিতকরণ।
তিনি আরো বলেন, একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হলো উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগ আইন প্রণয়ন। সুপ্রিম কোর্টের একটি গবেষণা টিমের বিস্তারিত গবেষণা শেষে গত বছরের ২৮ অক্টোবর আইন মন্ত্রণালয়ে একটি খসড়া অধ্যাদেশ জমা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট অর্ডিন্যান্স, ২০২৫’ অনুমোদিত হয়। এর মাধ্যমে গঠিত হয় ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল’, যার সভাপতি প্রধান বিচারপতি। এই কাউন্সিল এরই মধ্যে স্বচ্ছ ও মেধাভিত্তিক নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করেছে।
পৃথক সচিবালয় নিয়ে হাবিবুর রহমান বলেন, বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক পৃথকীকরণের লক্ষ্যে গত বছরের ২৭ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট আইন মন্ত্রণালয়ে একটি আলাদা সচিবালয় গঠনের প্রস্তাব পাঠায়।
এতে একটি খসড়া অধ্যাদেশ ও সংগঠন কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর উদ্দেশ্য সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ বাস্তবায়ন এবং উচ্চ আদালতের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা। এই উদ্যোগ দ্বৈত প্রশাসনের অবসান ঘটিয়ে প্রকৃত বিচারিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে। এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য অধ্যাদেশের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।
বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা প্রধান বিচারপতির সংস্কার এজেন্ডার অন্যতম অংশ জানিয়ে তিনি আরো বলেন, এই এজেন্ডা সুপ্রিম কোর্ট রিপোর্টারদের উদ্যোগে ও ইউএনডিপির সহযোগিতায় সক্রিয়ভাবে অগ্রসর হচ্ছে। প্রধান বিচারপতির নির্দেশে এই বিষয়ে বিস্তর গবেষণাও শেষ করেছে একটি গবেষণা দল।
এছাড়া বাণিজ্যিক বিরোধগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য স¤প্রতি দেশব্যাপী বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। এই আদালতগুলো ব্যবসায়ী, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, আমদানি-রফতানি, বিমান-নৌপরিবহন, নির্মাণ-অবকাঠামো প্রকল্প, ফ্র্যাঞ্চাইজি, বিতরণ ও লাইসেন্সিং, প্রযুক্তি উন্নয়ন ইত্যাদি সম্পর্কিত বিরোধ নিষ্পত্তি করবে। একইসঙ্গে ট্রেডমার্ক, কপিরাইট, পেটেন্ট, শিল্প নকশা, ডোমেইন নাম, ভৌগোলিক নির্দেশক, বীমা, অংশীদারিত্ব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সেবা খাত এবং শেয়ারহোল্ডার বা যৌথ উদ্যোগ সংক্রান্ত বিরোধ এই আদালতের আওতায় থাকবে।
কর্মশালা আয়োজনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসহ প্রধান বিচারপতির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এসআরএফ সভাপতি মাসউদুর রহমান বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বিটে সাংবাদিকদের জন্য এ ধরনের কর্মশালায় অনেক শেখার রয়েছে। আমরা ভবিষ্যতেও এমন আয়োজন আরও চাই। এ আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করায় সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।
বিকেপি/এমবি

