Logo

আইন ও বিচার

বিদেশির সঙ্গে বিবাহ : দেশে কোন আইনে বৈধ, কোন শর্তে সম্ভব

Icon

আইন ও আদালত ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:২২

বিদেশির সঙ্গে বিবাহ : দেশে কোন আইনে বৈধ, কোন শর্তে সম্ভব

বাংলাদেশে প্রতি বছরই অনেক বিদেশী নাগরিক আসছেন পড়াশোনা, ব্যবসা, এনজিও কার্যক্রম বা কূটনৈতিক কাজে। এর মধ্যে কিছু বিদেশী নাগরিক বাংলাদেশের নাগরিকদের সঙ্গে প্রেম, সম্পর্ক ও পরে বিবাহে আবদ্ধ হন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- এই ধরনের আন্তর্জাতিক বা আন্তঃদেশীয় বিবাহ বাংলাদেশে কোন আইনে সম্পন্ন হয় এবং তার আইনি বৈধতা কীভাবে নিশ্চিত করা যায়?

বাংলাদেশে বিবাহের আইন ধর্মভিত্তিকভাবে আলাদা। বিদেশী নাগরিক যদি বাংলাদেশের নাগরিককে বিয়ে করতে চান, তবে প্রথমেই দেখা হয় উভয়ের ধর্মীয় পরিচয় অনুযায়ী কোন আইন প্রযোজ্য হবে তা। যদি বিদেশী নাগরিক মুসলিম হন, তবে Muslim Family Laws Ordinance, 1961 Ges Muslim Marriages and Divorces (Registration) Act, 1974 প্রযোজ্য। এই আইনে নির্ধারিত বিধি অনুসারে- কাজীর মাধ্যমে মুসলিম রীতি অনুযায়ী বিবাহ সম্পন্ন করতে হবে, দুজন সাক্ষী থাকতে হবে, উভয়ের পূর্ণ সম্মতি থাকতে হবে এবং বিদেশী নাগরিককে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে হয়, যদি তিনি মুসলিম না হন। বিবাহ শেষে নিকাহনামা রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। এটি বাংলাদেশে সম্পূর্ণ বৈধ ও আইনি শক্তিসম্পন্ন বিবাহ হিসেবে গণ্য হয়।

হিন্দু নাগরিকের ক্ষেত্রে : বাংলাদেশে Hindu Marriage Registration Act, 2012 অনুযায়ী হিন্দুদের বিবাহ নিবন্ধন করার বিধান আছে। বিদেশী নাগরিক যদি হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেন, তাহলে হিন্দু শাস্ত্রমতে বিবাহ সম্পন্ন করা যাবে এবং তা আইন অনুযায়ী নিবন্ধন করা যাবে। ধর্মান্তর না হলে এই বিবাহ বাংলাদেশে আইনত বৈধতা পাবে না।

খ্রিষ্টান নাগরিকের ক্ষেত্রে : Christian Marriage Act, 1872 অনুযায়ী বাংলাদেশে খ্রিষ্টান নাগরিকদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। কোনো বিদেশী নাগরিক ও বাংলাদেশি খ্রিষ্টান নাগরিকের বিবাহ এই আইনের অধীনে চার্চ বা নির্ধারিত Marriage Registrar দ্বারা সম্পন্ন হতে হবে। দুই পক্ষই খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী হতে হবে।

অন্য ধর্ম বা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হলে : যদি এক পক্ষ মুসলিম এবং অন্য পক্ষ অমুসলিম (যেমন খ্রিষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, বা নাস্তিক) হন এবং কেউ ধর্মান্তর না নেন, তবে ধর্মীয় আইনে এই বিবাহকে বৈধ হিসেবে গণ্য করা হয় না।

Special Marriage Act, 1872 (বিশেষ বিবাহ আইন) : যদি দুইজন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হন (অথবা একজন বিদেশী যিনি কোনো ধর্মে অন্তর্ভুক্ত নন), তারা চাইলে Special Marriage Act, 1872-এর অধীনে নাগরিকভাবে (civil marriage) বিবাহ করতে পারেন।

এই আইন অনুসারে- District Registrar / Marriage Registrar-এর সামনে বিবাহের আবেদন দিতে হয়, উভয় পক্ষের বয়স, অবিবাহিত থাকা ও সম্মতি প্রমাণ করতে হয়, ১৪ দিন আগে লিখিত নোটিশ দিতে হয়, নোটিশ শেষে কোনো আপত্তি না এলে রেজিস্ট্রার কর্তৃক বিবাহ solemnize করা হয়,

বিবাহের রেজিস্ট্রেশন সনদ প্রদান করা হয়। এই বিবাহ ধর্মনিরপেক্ষ, আইনি এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।

Special Marriage Act-এর অধীনে বাংলাদেশি ও বিদেশী নাগরিকের বিবাহে কোনো বাধা নেই- যদি বিদেশী নাগরিকের ভিসা বৈধ থাকে এবং তার নিজ দেশের আইনেও এমন বিবাহের নিষেধ না থাকে।

বিদেশী নাগরিকের আইনি শর্তসমূহ : বিদেশী নাগরিককে অবশ্যই বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা সহ দেশে থাকতে হবে। বিবাহের সময় নিজ দেশের অবিবাহিত সনদ প্রয়োজন, যা তার দেশের দূতাবাস বা হাইকমিশন থেকে সংগ্রহ করতে হয়। এই সনদটি বাংলাদেশে নোটারি পাবলিক দ্বারা আটেস্ট ও ফরেন মন্ত্রণালয় কর্তৃক যাচাইকৃত হতে হয়। বিবাহের পর উভয়ে চাইলে জাতীয় পরিচয়পত্রে বৈবাহিক অবস্থা হালনাগাদ করতে পারেন। বিদেশী নাগরিক বিবাহের মাধ্যমে বাংলাদেশি নাগরিকত্বও Citizenship Act, 1951-এর ৫(১)(প) ধারা অনুসারে আবেদন করে পেতে পারেন- যদি নির্দিষ্ট সময় (সাধারণত ২ বছর) একত্রে বৈবাহিক জীবনযাপন করেন এবং বাংলাদেশে বসবাস করেন।

বিবাহ নিবন্ধনের পর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি : বিবাহ বাংলাদেশে সম্পন্ন হলে তার রেজিস্ট্রেশন সনদ বিদেশী নাগরিকের নিজ দেশে স্বীকৃত করতে হয়। এজন্য সনদটি বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্বারা বৈধায়িত (attested) করে নিজের দেশের দূতাবাসে জমা দিতে হয়।

আইনি জটিলতা ও সতর্কতা : ভিসা মেয়াদোত্তীর্ণ বা অবৈধ অবস্থায় বিবাহ করলে তা আইনত বৈধ বিবেচিত হয় না। ভুয়া সনদ, মিথ্যা তথ্য বা পূর্বে বিবাহিত অবস্থা গোপন করলে দণ্ডবিধির ৪২০ ও ৪৬৮ ধারায় ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। বিদেশী নাগরিক যদি বিবাহের মাধ্যমে নাগরিকত্ব নিতে চান, তবে যাচাই-বাছাই শেষে গৃহ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রয়োজন। বাংলাদেশে বিদেশী নাগরিক ও স্থানীয় নাগরিকের বিবাহ কোনো নিষিদ্ধ বিষয় নয়। তবে তা হতে হবে বৈধ ধর্মীয় বা নাগরিক আইনের আওতায়, যথাযথ রেজিস্ট্রেশন ও নথিপত্রসহ।

বিবাহের আগে সংশ্লিষ্ট পক্ষের উচিত আইনজীবীর পরামর্শ নেয়া এবং দূতাবাসের অনুমোদিত নথি সংরক্ষণ করা, যাতে ভবিষ্যতে নাগরিকত্ব, সম্পত্তি, বা সন্তানদের আইনি অবস্থান নিয়ে কোনো জটিলতা না হয়। 

বিকেপি/এমবি

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

আইন ও আদালত

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর