Logo

আইন ও বিচার

‘হ্যাঁ’ ‘না’ ভোট : আইন কী বলে?

Icon

আইন ও আদালত ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:২১

‘হ্যাঁ’ ‘না’ ভোট : আইন কী বলে?

বাংলাদেশে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজের মধ্যে এক প্রশ্ন বারবার উত্থাপিত হচ্ছে “রাষ্ট্র পরিচালনায় বা সংবিধান-পরিবর্তনে কি জাতীয়ভাবে ‘হ্যাঁ বা না’ রূপে একটি গণভোট (রেফারেনডাম) করা যেতে পারে?” কোনো আইনি কাঠামো রয়েছে, কি নেই এবং বাস্তবতায় কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

আইনি ও সংবিধানগত ভিত্তি : Referendum Act, 1991: বাংলাদেশে রেফারেনডামের জন্য একটি নির্দিষ্ট আইন রয়েছে- Referendum Act, 1991। এই আইন অনুসারে একটি বিল-সংক্রান্ত (কনস্টিটিউশন বা প্রস্তাবিত সংবিধানমূলক সংশোধনী) বিষয়ে রেফারেনডাম আয়োজনের বিধান রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আইনটি বলছে কোনো বিল পাস হওয়ার পূর্বে বা পরে জনগণের সাক্ষাৎ নিতে রেফারেনডাম করা যাবে, যদি সেই বিল সংবিধানের প্রারম্ভিকা বা প্রিম্বল পরিবর্তনের বিষয় হয়। 

বাংলাদেশ সংবিধানের আর্টিকেল ১৪২ অনুসারে- Notwithstanding anything contained in this Constitution- (a) any provision thereof may by way of addition, alteration, substitution or repeal be amended by Act of Parliament: Provided that „ (i) no Bill for such amendment shall be allowed to proceed unless the long title thereof expressly states that it will amend a provision of the Constitution; (ii) „ presented to the President for assent„ And (1A) Notwithstanding anything contained in clause (1), when a Bill „ provides for the amendment of the Preamble or any provisions of articles 8, 48, 56 or this article, is presented to the President for assent, the President, shall „ cause to be referred to a referendum the question whether the Bill should or should not be assented to.’  

এই ধারা স্পষ্ট করে দিয়েছে সংবিধানের প্রারম্ভিকা বা মূল ধারা (Article 8, 48, 56, 142) সংশোধনের ক্ষেত্রে রেফারেনডামের বিধান থাকতে পারে।

কার্যকর ও বাধ্যতামূলক রেফারেনডামের সীমাবদ্ধতা : যদিও উপরের উপাদান রয়েছে, তবুও দেখা যায় যে রেফারেনডাম নিয়মিত প্রক্রিয়া হিসেবে চালু হয়নি। যেমন-চলতি সময়ে রাজনৈতিক দল ও গবেষকরা বলছেন, সংবিধান সংশোধনে রেফারেনডাম বাধ্যতামূলক করা উচিৎ। এছাড়া আন্তর্জাতিক Direct Democracy প্রয়োগের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ে রেফারেনডাম আয়োজনের আইনি সুযোগ রয়েছে, তবে এটি স্বাভাবিক বা সুনির্দিষ্টভাবে প্রয়োগ হয়ে আসেনি।

১৯৯১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর একটি রেফারেনডাম অনুষ্ঠিত হয়েছিল- 1991 Bangladeshi constitutional referendum, যেখানে জনগণ ভোট দিয়েছিল- Should or not the President assent to the Constitution (Twelfth Amendment) Bill, 1991-এর বিষয়ে। ১৯৮৫ সালের ২১ মার্চ রেফারেনডাম করা হয়েছিল 1985 Bangladeshi military rule referendum– যেখানে ভোট ছিল- Do you support the policies of President Ershad প্রভৃতি। পাশাপাশি, সাম্প্রতিক সময়ে National Consensus Commission-এর মাধ্যমে সংলাপ হচ্ছে এবং নির্বাচন কমিশন ও সরকারের কাছে রেফারেনডাম-পরিকল্পনার প্রস্তাব এসেছে। 

আইন ও সংবিধান অনুযায়ী নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর জন্য রেফারেনডাম চেয়ে দেখা গেছে বা প্রস্তাব হয়েছে: সংবিধানের প্রারম্ভিকা বা মৌলিক ধারা সংশোধন (Article 8, 48, 56, 142) দেখা গেছে সকল রাজনৈতিক দল এ বিষয়ে সম্মত। বড় জাতীয় কাঠামোগত সিদ্ধান্ত, যেমন সিন্ডিকেট সরকার বা রাষ্ট্র পরিচালনায় বড় রূপান্তর। তবে সাধারণ নীতিগত বা রাজনীতির বিষয় যেমন সরকারের পদক্ষেপ, নীতিমালা পরিবর্তন ইত্যাদিতে রেফারেনডাম আইনত স্বাভাবিক নিয়ম হিসেবে নেই।

আইনসিদ্ধ কিনা? :  হ্যাঁ, বাংলাদেশে জাতীয় স্তরে রেফারেনডামের আইনগত ভিত্তি রয়েছে, বিশেষ করে সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে। তবে সাধারণ-প্রশাসনিক বা সব ধরনের “হ্যাঁ/না” ভোটের জন্য আইন নিজে স্পষ্টভাবে সবক্ষেত্রে অনুমোদন দেয়নি। অর্থাৎ সব বিষয়ে রেফারেনডাম বাধ্যতামূলক কিংবা স্বয়ংক্রিয় নয়। আইন প্রয়োগ ও রেফারেনডামের প্রকৌশল (logistics), ভোটার তালিকা, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব, প্রশ্নপত্র প্রস্তুতি, ফলাফল কার্যকরকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে এখনো বাস্তব প্রয়োগে চ্যালেঞ্জ রয়েছে।

রেফারেনডামে ভোটারদের সামনে সুনির্দিষ্ট ও স্পষ্ট প্রশ্ন থাকবে কি না, তা গুরুত্বপূর্ণ। ভোটবিধি ও সংস্থা : Election Commission of Bangladesh-এর সক্ষমতা, সময়সূচি, তত্ত্বাবধান, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাটাও জরুরি। রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রিমাইস (premise): যদি অনেক মানুষ মনে না করে যে ভোট সাংবিধানিক রূপ নেবে বা ফল মানা হবে না, তাহলে রাজনৈতিক বিশ্বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আইন ও সংবিধানগত গ্যারান্টি : রেফারেনডামের ফলাফলকে আইনগতভাবে কার্যকর করার নিশ্চয়তা থাকতে হবে- উদাহরণস্বরূপ, সংবিধান সংশোধন হলে সেই সংশোধন প্রক্রিয়া কী হবে সে বিষয় স্পষ্ট থাকতে হবে।

বিরোধী দল ও নাগরিক অংশগ্রহণ : রেফারেনডাম সঠিকভাবে আইনমুখী ও গ্রহণযোগ্য হতে হলে সর্বদলীয় অংশগ্রহণ, সচেতনতা ও বিতর্কের সুযোগ থাকা অনিবার্য।

বাংলাদেশে “হ্যাঁ বা না” জাতীয় ভোট (রেফারেনডাম) আইনগতভাবে সম্ভব। বিশেষত সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে। কিন্তু এটি এখনো স্বয়ংক্রিয় নিয়মে পরিণত হয়নি। রেফারেনডামের মূল উদ্দেশ্য হলো জনতার ভাগ নেওয়া এবং “সংবিধানতান্ত্রিক সিদ্ধান্তে জনমত প্রতিফলিত করা”। তবে তা সার্থক হবে বা না হবে তা নির্ভর করে আইন, প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক পরিবেশ ও জনসচেতনতার মিলিত প্রক্রিয়ার ওপর।

নাগরিক, রাজনৈতিক দল ও সংস্থাসমূহের জন্য এক সংবাদসংক্রান্ত পরামর্শ থাকবে রেফারেনডামের প্রশ্ন-নির্ধারণ, প্রচারণার সময়কার নিয়ন্ত্রণ, ফলাফল প্রক্রিয়া ও বাস্তবায়ন সবকিছুই জনমত ও গণতান্ত্রিক বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করবে।

আপনি জানেন কি?

বাংলাদেশে ৩ বার গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ২ বার অনুষ্ঠিত হয় প্রশাসনিক গণভোট এবং ১ বার অনুষ্ঠিত হয় সাংবিধানিক গণভোট।

প্রথম গণভোট: প্রশাসনিক গণভোট হয় ১৯৭৭ সালে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসন কার্যের বৈধতা দান। ফলাফল ৯৮.৮০% 'হ্যাঁ' ভোট।

দ্বিতীয় গণভোট: প্রশাসনিক গণভোট ১৯৮৫ সালে। হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সমর্থন যাচাইয়ের লক্ষ্যে হ্যাঁ-না ভোট। ফলাফল ৯৪.১৪% হ্যাঁ ভোট।

তৃতীয় গণভোট: সাংবিধানিক গণভোট অনুষ্ঠিত হয়- ১৯৯১ সালে। সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী আইন প্রস্তাব। ফলাফল ৮৪.৩৮% হ্যাঁ ভোট।

বিকেপি/এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

আইন ও আদালত

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর