Logo

আইন ও বিচার

আলোর নিচে অন্ধকার

ঢাকার আদালতপাড়ায় চোর-ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য

Icon

আইন ও আদালত ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৪০

ঢাকার আদালতপাড়ায় চোর-ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য

ঢাকার আদালতপাড়া যেখানে প্রতিদিন আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী ও সরকারি কর্মকর্তাদের হাজারো মানুষের পদচারণা। বিচারবিভাগের কেন্দ্রবিন্দু এ এলাকা হওয়ার কথা নিরাপত্তার দিক থেকে সবচেয়ে সুরক্ষিত জায়গা। কিন্তু বাস্তব চিত্র একেবারে উল্টো। ঢাকা জজ কোর্ট ও সিএমএম কোর্টের আশপাশের অলিগলি, গাড়ি পার্কিং এলাকা ও সিঁড়িঘরে চলছে চুরি, ছিনতাই ও পকেটমারের দৌরাত্ম্য। আদালতের দরজার নিচেই যেন অন্ধকারের রাজত্ব।

প্রতিদিন সকাল থেকে আদালতের গেট খুলতেই ভিড় শুরু হয়। মামলা পরিচালনা, জামিনের কাগজ, হাজিরা সব মিলিয়ে এলাকা জনাকীর্ণ থাকে। এই সুযোগেই সক্রিয় হয় ছিনতাইকারীদের চক্র। বিচারপ্রার্থী নারীর ব্যাগ কেটে টাকা-পার্স উধাও। আইনজীবীর গাড়ির সাইড মিরর, ব্যাটারি কিংবা মোটরসাইকেল চুরি হচ্ছে প্রায়ই। সন্ধ্যার পর আদালত ভবনের আশপাশের গলিতে সক্রিয় নেশাগ্রস্ত চোর ও পকেটমাররা।

স্থানীয় দোকানিরা বাংলাদেশের খবরকে বলছেন, “প্রতিদিন কিছু না কিছু হারায়। কখনো মোটরসাইকেল, কখনো ব্যাগ। পুলিশ আসে, যায়, কিন্তু চোর ধরা পড়ে না।”

রাত নামলে আদালত এলাকার পরিবেশ বদলে যায়। কোর্ট ভবন বন্ধ হয়ে গেলেই গলিগুলো নেশাগ্রস্ত যুবকদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়। বিচারপ্রার্থী নারী বা আইনজীবীরা অনেক সময় সন্ধ্যার পর নিরাপদে গাড়ি পর্যন্ত হাঁটতে পারেন না।

একজন তরুণ আইনজীবী বলেন, “বিচারের স্থানেই আমরা এখন নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে থাকি। এ যেন বিচারালয়ের ছায়ায় অপরাধের রাজত্ব।”

সি এম এম কোর্ট ও জজ কোর্টের আশেপাশে পুলিশের ফাঁড়ি থাকলেও, নিয়মিত টহল নেই বললেই চলে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অনেক সময় পুলিশ টহল দেয় দিনে, কিন্তু চুরি-ছিনতাই হয় সন্ধ্যার পরে। একজন কোর্টকর্মচারী বলেন, “চোরেরা জানে কখন পুলিশের টহল হয়। তারা সময় বুঝে কাজ করে। ফলে ধরা পড়ে না।”

কোর্টপাড়া এলাকায় কয়েকটি সরকারি অফিস ও কোর্ট ভবনে সিসিটিভি থাকলেও, বেশিরভাগই নষ্ট বা অচল। পার্কিং জোনে ক্যামেরা নেই, রাস্তার আলো অনেক জায়গায় নিভে থাকে। ফলে অপরাধীরা খুব সহজেই অন্ধকারের সুযোগ নেয়।

ঢাকা বারের এক সিনিয়র সদস্য বলেন, “এটা লজ্জাজনক যে, দেশের বিচারব্যবস্থার কেন্দ্রস্থলে নাগরিকরা নিরাপদ নয়। আদালতপাড়ার ভেতরে অপরাধ বাড়া মানে আইনের মর্যাদার ওপরই আঘাত।”

অনেক আইনজীবী বলেছেন, তারা নিজের মোটরসাইকেল এখন আর কোর্টের আশপাশে রাখতে চান না। বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষও আতঙ্কে থাকেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা নিয়মিত টহল দিচ্ছি এবং কয়েকজন চোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে আদালত এলাকায় জনগণের ভিড় বেশি থাকায় অপরাধীরা সুযোগ নেয়।” তবে স্থানীয়রা বলছেন, এই বক্তব্য বাস্তবতার প্রতিফলন নয়। অপরাধের হার কমেনি, বরং বাড়ছে।

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মাহবুব আলম বলেন, “আদালত এলাকায় অপরাধ মানে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতা। সেখানে বিশেষ টহল, সিসিটিভি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ এবং আলাদা নিরাপত্তা ইউনিট থাকা উচিত।”

সমাধানের প্রস্তাব : আদালতপাড়ায় স্থায়ী টহল পুলিশ পোস্ট স্থাপন করা। প্রতিটি পার্কিং এলাকায় কার্যকর সিসিটিভি ক্যামেরা ও লাইটিং ব্যবস্থা। স্থানীয় দোকানি, কোর্ট কর্মচারী ও আইনজীবীদের নিয়ে নিরাপত্তা কমিটি গঠন। রাতে পুলিশের মোবাইল টহল বৃদ্ধি ও স্পট চেকিং চালু করা।

বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার হৃদয় বলা হয় আদালতপাড়াকে। সেখানে যদি মানুষ নিজের ব্যাগ, গাড়ি কিংবা জীবন নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে না পারে তবে তা শুধু অপরাধ নয়, ন্যায়বিচারের ভাবমূর্তির ওপরও এক অন্ধকার ছায়া। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নেয়, তবে “আলোর নিচে অন্ধকার” কথাটি রাজধানীর আদালতপাড়ার প্রতিচ্ছবি হিসেবেই থেকে যাবে।

বিকেপি/এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

আইন ও আদালত ছিনতাই

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর