Logo

আইন ও বিচার

রপ্তানি-আমদানি কার্যক্রমে আইন ও বিধিনিষেধ

Icon

আইন ও আদালত ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৮

রপ্তানি-আমদানি কার্যক্রমে আইন ও বিধিনিষেধ

বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হলো রপ্তানি ও আমদানি বাণিজ্য। দেশের রাজস্ব, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও বাণিজ্যিক উন্নয়নের সাথে এই খাত প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। 

তবে এই খাতে সফলভাবে ব্যবসা পরিচালনার জন্য বেশ কিছু আইন, নীতি ও আন্তর্জাতিক বিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক।

রপ্তানি-আমদানি ব্যবসার প্রাথমিক অনুমোদন : 

রপ্তানি বা আমদানি কার্যক্রম শুরু করতে হলে প্রথমেই ব্যবসায়ীকে নিম্নোক্ত অনুমোদন ও নিবন্ধন নিতে হয়।  ট্রেড লাইসেন্স সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা থেকে সংগ্রহ করতে হয়। 

ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর ও ভ্যাট নিবন্ধন: 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক প্রদান করা হয়। ইমপোর্টার ও এক্সপোর্টার রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট চট্টগ্রাম বা ঢাকা অফিস থেকে প্রধানত বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো) বা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে হয়। ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট ও ওপেনিং অব এলসি আমদানি-রপ্তানির আর্থিক লেনদেনের বৈধতা নিশ্চিত করে।

প্রযোজ্য প্রধান আইনসমূহ : 

রপ্তানি-আমদানি কার্যক্রমে নি¤œলিখিত আইন ও বিধিমালা মেনে চলা অপরিহার্য।

রপ্তানি ও আমদানি (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ১৯৫০ (The Imports and Exports (Control) Act, 1950)। এই আইনের অধীনে সরকার কোন পণ্য রপ্তানি বা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা বা শর্ত আরোপ করতে পারে। সরকার প্রতি অর্থবছরে রপ্তানি-আমদানি নীতি আদেশ (Import Policy Order & Export Policy Order)

 প্রকাশ করে। 

কাস্টমস আইন, ২০২৩ (The Customs Act, 2023) পণ্য আমদানি-রপ্তানির সময় শুল্ক, কর ও ঘোষণা (Declaration)  সম্পর্কিত বিধি-বিধান নির্ধারণ করে। 

কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স, বিল অব এন্ট্রি, ম্যানিফেস্ট ও হ্যান্ডলিং প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২। আমদানিকৃত পণ্যের উপর ভ্যাট ও শুল্ক নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৪৭ (Foreign Exchange Regulation Act, 1947) রপ্তানি আয় দেশে ফেরত আনা ও বৈদেশিক লেনদেন বৈধভাবে সম্পন্ন করার নিয়ম নির্ধারণ করে।

স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (BSTI) আইন, ২০১৮ অনুযায়ী আমদানি পণ্যের মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে BSTI অনুমোদন প্রয়োজন হয়।

রপ্তানি-আমদানি কার্যক্রমে শুধু দেশের আইন নয়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতিমালাও প্রযোজ্য। যেমনঃ WTO (World Trade Organization) -এর বাণিজ্য নীতি। INCOTERMS 2020 অনুযায়ী পরিবহন ও পেমেন্ট শর্তাবলি। UNCTAD I IMF এর বাণিজ্য ও আর্থিক নির্দেশিকা।

রপ্তানি-আমদানি নীতি আদেশে (IPO/EPO) কিছু পণ্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বা সীমিতভাবে অনুমোদিত থাকে। যেমন-

অস্ত্র, বিস্ফোরক, মাদকদ্রব্য, নকল ওষুধ, অনৈতিক বা পর্নোগ্রাফিক সামগ্রী। কৃষি ও খাদ্যপণ্যে নির্দিষ্ট কোটার বাইরে আমদানি নিষিদ্ধ।

আইন লঙ্ঘনের শাস্তি : 

রপ্তানি-আমদানি নিয়ন্ত্রণ আইন ও কাস্টমস আইনের অধীনে অবৈধ আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে পণ্য জব্দ, লাইসেন্স বাতিল ও আর্থিক জরিমানা হতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে দণ্ডবিধি ৪২০ (প্রতারণা) ও ৪৬৮ (জালিয়াতি) ধারা অনুযায়ী ফৌজদারি মামলা হতে পারে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে সুষ্ঠু রপ্তানি-আমদানি ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য। কিন্তু বৈধ বাণিজ্য পরিচালনা করতে হলে ব্যবসায়ীদের অবশ্যই আইনসমূহ ভালোভাবে জানা ও অনুসরণ করা প্রয়োজন। আইন মেনে ব্যবসা পরিচালনা করলে দেশ যেমন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সমৃদ্ধ হবে, তেমনি উদ্যোক্তাদের জন্যও তৈরি হবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নতুন সম্ভাবনা। 

বিকেপি/এনএ

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

আইন ও আদালত

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর