দেওয়াল লিখন ও পোস্টার সাঁটানো আইনের দৃষ্টিতে কি নিষিদ্ধ!
আইন ও আদালত ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৩২
বাংলাদেশে “দেওয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১২” (Graffiti Writing and Poster Sticking Control Act, 2012) প্রকাশিত হয়েছে। আইনটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সার্বজনীন স্থাপনাসমূহ ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি অনাবশ্যকভাবে আগাছা/দাগ/বিজ্ঞাপন/লেখন দ্বারা দূষিত হওয়া রোধ করা এবং পোস্টার-ব্যানার-গ্রাফিটি সংক্রান্ত নিয়মাবলী প্রণয়ন করা। স্থানীয় প্রশাসন (ইউনিয়ন/উপজেলা/পৌরসভা/জেলা/সিটি কর্পোরেশন)-কে নির্দিষ্ট স্থল নির্ধারণ করার ক্ষমতাও আইনে দেয়া আছে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা নির্ধারিত স্থান ব্যতীত যেকোনো স্থানে দেয়াল-লিখন (গ্রাফিটি) বা পোস্টার লাগানো অনুমোদিত নয়। তবে অনুমতি নিয়ে নির্দিষ্ট শর্ত মেনে এবং নির্ধারিত ফি দিয়ে পোস্টার/গ্রাফিটি যেটি ‘প্রচার/সংশ্লিষ্ট কার্য’ তার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
অনধিকৃতভাবে দেয়াল-লিখন বা পোস্টার লাগালে আদালত জরিমানা কমপক্ষে ৫,০০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত ধার্য করতে পারবে; জরিমানার অর্থ না দিলে সরল কারাদণ্ড ১৫ দিন পর্যন্ত হতে পারে। অভিযুক্তকে যে পোস্টার/লিখন করা হয়েছে তা অপসারণ করতে এবং অপসারণ-ব্যয় আদায়ের বিধানও রয়েছে।
যদি কোনো “লাভগ্রাহী” ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান আইন ভঙ্গ করে, তাহলে জরিমানার রেঞ্জ সাধারণত ১০,০০০ টাকা থেকে ৫০,০০০ টাকা এবং ডিফল্টে ৩০ দিন পর্যন্ত কারাদণ্ড দেয়ার বিধান আছে। দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইন মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সারসংক্ষেপ বিচার প্রক্রিয়া প্রযোজ্য করার সুযোগ দেয়; ফলে দ্রুত জরিমানা ও অপসারণ আদেশ কার্যকর করা যায়।
হাইকোর্টের নির্দেশনা : ঢাকা শহরের ফ্লাইওভার ও সেতুতে বেআইনি পোস্টার/গ্রাফিটি সরানোর নির্দেশনা হাইকোর্ট বিভিন্ন সময় প্রশাসনকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে; আদালত আইনের আত্ত্বিক ব্যাখ্যা করে অপসারণ, জরিমানা ও দায়মুক্তোর নির্দেশ জারি করেছে। ঢাকা উত্তর/দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নিয়মিত চেক ও অপসারণ অভিযান চালায়; অতীতে ডিএনসিসি একাধিক প্রতিষ্ঠানকে অবৈধ গ্রাফিটি/পোস্টার লাগানোর কারণে জরিমানা করেছে।
আইন পাশ হওয়ার পরও সংশ্লিষ্ট রুল-নিয়ম যথাযথভাবে প্রণয়ন/প্রয়োগে সময় লেগেছে; ফলে মাঠে অর্পিত স্থান-চিহ্ননের অভাব ও নিয়ম ভঙ্গ হচ্ছে। অর্থনৈতিক/রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে কেবল অপসারণেই সীমাবদ্ধ থাকা বা অব্যবহৃত বরাদ্দ স্পট ব্যবহার অনিয়ম আকারে ঘটছে।
প্রশাসন কি পোস্টার অপসারণ করে দিতে বলবে? হ্যাঁ; আইন অনুযায়ী উক্ত পোস্টার অপসারণ ও অপসারণ-ব্যয় দায়ী ব্যক্তির ওপর আরোপ করা যেতে পারে। নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের আলাদা বিধি প্রযোজ্য; ২০১২ সালের আইন নির্দিষ্ট শর্তে নির্বাচন-কালীন ব্যতিক্রম করে (ইলেক্টোরাল কর্তৃপক্ষের অনুমতি/শর্তে)।
স্থানীয় আদালত/মোবাইল কোর্ট অভিযোগের ন্যায্যতা, পুনরাবৃত্তি, আর্থিক লাভ প্রভৃতি দেখে জরিমানা বা কারাদণ্ড নির্ধারণ করবে।
দেয়াল-লিখন (গ্রাফিটি) ও পোস্টার লাগানো নিয়ে ২০১২ সালের আইন স্পষ্ট। নির্ধারিত স্থল ছাড়া কোন পোস্টার বা গ্রাফিটি করা দণ্ডনীয়, এবং অপরাধীকে জরিমানা, অপসারণ ও কারাদণ্ডসহ দায়বদ্ধ করা যায়। বাস্তবে সফল বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে স্পষ্ট স্থল নির্ধারণ, নিয়মিত অভিযান ও দ্রুত মোবাইল কোর্ট ব্যবহারের মাধ্যমে কঠোরতা বজায় রাখতে হবে। পাশাপাশি নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইনের প্রতি সম্মান দেখিয়ে অনুমতি নিয়ে কাজ করতে হবে- না হলে জরিমানা, অপসারণ-খরচ ও চলমান আইনি ঝামেলা ভোগ করতে হতে পারে।
বিকেপি/এমবি

