Logo

আইন ও বিচার

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আইন ও বাস্তবতা

Icon

আইন ও আদালত ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪৩

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আইন ও বাস্তবতা

নির্বাচনের দিন বা এর আগে কিংবা নির্বাচনবর্তী সময়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও হিংসা-ঝুঁকি বাড়ে; এমন সময় অবৈধ অস্ত্রের উপস্থিতি গণতন্ত্র ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাকে সরাসরি হুমকির মুখে ফেলে। বাংলাদেশে অবৈধ অস্ত্র- পিস্তল, রিভলভার, রাইফেল, শটগান, রকেট, হাতবন্দুক বা বিস্ফোরক উপকরণ ধরা পড়লে তা দণ্ডনীয় অপরাধ। সরকারি আইন ও মামলা-নথি অনুযায়ী কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে এবং নির্বাচনকালীন বিশেষ বিধানও প্রযোজ্য।

প্রযোজ্য আইন ও শাস্তি : Arms Act, 1878- আইনে বলা আছে, লাইসেন্সবিহীনভাবে অস্ত্র রাখা, বহন বা ব্যবহার করা দণ্ডনীয়; সংশ্লিষ্ট ধারায় শাস্তি কাল বহিবার (সংশ্লিষ্ট অপরাধের ধরনের ওপর নির্ভর করে) সাধারণত জেল (কিছু ক্ষেত্রে সাত বছর পর্যন্ত) এবং জরিমানা। সরকারি সূত্রসমূহে ধারাগুলোর মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের শাস্তি বর্ণিত আছে।  স্টার্টিং ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি যদি অস্ত্র ব্যবহার করে বা অপরাধে ন্যস্ত থাকে, তবে শাস্তি জীবনেও পৌঁছতে পারে কিংবা দীর্ঘ সময় জেল অনিশ্চিত নয়; আইনের বিভিন্ন ধারায় সেভাবে উল্লেখ আছে।

সরকারী ক্ষমতায় জব্দ ও লাইসেন্স স্থগিতকরণ (Election-time special rules অনুযায়ী সরকার/পুলিশ যে কোনো সময়ে নিরাপত্তার স্বার্থে অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করতে পারে; নির্বাচনী সময় আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট পদক্ষেপ (লাইসেন্স বাতিল/সাসপেন্ড/অ্যাকশন) নেয়ার বিধান আছে। অনলাইসেন্স বিক্রেতা বা অনধিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অস্ত্র সরবরাহকারী লোকও শাস্তিযোগ্য; এই ক্ষেত্রে জরিমানা ও কারার বিধান রয়েছে। ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ও সীমান্ত রক্ষী বাহিনী মিলিয়ে শতাধিক অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করেছ্ েএক সূত্র অনুযায়ী প্রথম ৬ মাসে ৪৩৩টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার এবং ১৪৯ জন গ্রেফতার। এসব উদ্ধারই ইঙ্গিত করে যে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অঞ্চলে ও ভেতরের বাজারে অস্ত্র প্রবাহ রয়েছে।

নির্বাচনী মিছিলে অস্ত্রের উপস্থিতি হুমকি ও তৎপরতা বাড়ায়; এতে বিরোধী কর্মীদের উৎপাত, হামলা বা জনহারের ঘটনা ঘটতে পারে। অবৈধ অস্ত্র সন্ত্রাস ও হয়ে ওঠা অপরাধমূলক গ্রুপের হাতিয়ার। সীমান্ত থেকে অবৈধ অস্ত্র প্রবাহ বাড়ালে আইনশৃঙ্খলা চ্যালেঞ্জ বৃদ্ধি পায়। লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সর্তকতা ও স্থানীয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানের ঘাটতি নির্বাচনের কাছাকাছি সময়ে সমস্যা বাড়ায়; আইনের সঙ্গে বাস্তব প্রয়োগে অসঙ্গতি ও দমন নীতি একত্রে না থাকলে ফলাফল সীমিত। অস্ত্র ও গোলাবারু ‘বাজার’-এর তথ্যসংগ্রহ কম এবং সীমান্ত সেক্টরে কড়া নজরদারি প্রয়োজন।

সুপারিশ : নির্বাচন-ঘটিত সময় সীমাবদ্ধতা ঘোষণা: নির্বাচন ঘোষণার সাথে সাথে (অফিসিয়াল গেজেটেড) লাইসেন্সধারীদের জন্য বিশেষ সীমায়ন (ধারা ১৭অ অনুপ্রয়োগযোগ্যতা) কার্যকর করা।

সহ-অভিযান ও ফোকাসড রেডস: সীমান্ত-নিয়ন্ত্রণ, কাস্টমস, BGB ও RAB-সহ যৌথ অভিযান- নির্বাচনের পূর্ববর্তী এক-মাসে টার্গেটেড রেইড।

কমিউনিটি হিটিং ও হটলাইনের প্রচলন: স্থানীয় জনগণকে সচেতন করে সন্দেহজনক অস্ত্র/হতাহত নিয়ে রিপোর্টিং ব্যবস্থা জোরদার করা। লাইসেন্স রিভিউ ও অস্থায়ী বাতিল: উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে অনুমোদিত লাইসেন্স স্থগিত রাখা।

প্রয়োগ ও দণ্ডের কঠোর বাস্তবায়ন: Arms Act অনুযায়ী দ্রুত তত্ত্বীয় ও বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা—জব্দ, মামলা দায়ের ও দ্রুত বিচার। নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার শুধু পুলিশি অভিযান নয়-এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সুরক্ষা। আইন (Arms Act, 1878) স্পষ্টভাবে লাইসেন্সবিহীন অস্ত্র-ধারণ ও অবৈধ সরবরাহ শাস্তিযোগ্য করেছে, আর প্রশাসনিক উদ্যোগ ও মিডিয়া রিপোর্টিং প্রমাণ করে যে উদ্ধার কার্যক্রম আরও জোরদার করা প্রয়োজন। নির্বাচন-নিরাপত্তা বজায় রাখতে মাঠে যৌথ, স্বচ্ছ ও সময়োপযোগী ব্যবস্থা নেওয়া অত্যাবশ্যক। 

বিকেপি/এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

আইন ও আদালত

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর