বিদেশ থেকে স্ত্রীকে তালাক দেয়ার নিয়ম
অ্যাডভোকেট আব্দুল মুকিত
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৫৪
প্রথমেই অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, বর্তমানে প্রবাস থেকে তালাক দেয়ার কোন উপায় নেই বললেই চলে। কয়েক বছর পূর্বে যদিও প্রবাস থেকে অনেকে তালাক দিতে পারতো কিন্তু বিভিন্ন আইনি সমস্যা দেখা দেয়ায় বর্তমানে প্রবাস থেকে তালাক দেয়া বন্ধ আছে।
প্রবাস থেকে হয়তো আপনি আপনার স্ত্রীকে তালাকের ঘোষণা দিতে পারবেন, কিন্তু তালাকনামা নেয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই বাংলাদেশে থাকা কাজীর ভলিউমে স্বাক্ষর দিতে হবে। মোট কথা, প্রবাসে থাকা অবস্থায়ই আপনি তালাকের পুরো প্রক্রিয়া সম্পাদন করতে পারবেন না। তালাকের প্রক্রিয়াগুলো আইনসম্মত উপায়ে করতে হলে আপনাকে অবশ্যই ১ দিনের জন্য হলেও দেশে থাকতে হবে। এখানে একটি কথা বলে রাখি, তালাক দাতাকে হয় তালাদ প্রদানের দিন অথবা তালাক ঘোষণা দেওয়ার ৯০ দিন পরে যখন তালাকের মেয়াদ পূর্ণ হবে, তখন তালাকনামা কাজীর থেকে উত্তোলনের জন্য তাকে অবশ্যই বাংলাদেশে থাকতে হবে। তবে সব থেকে উত্তম হয়, তালাক ঘোষণা দেয়ার সময় তালাক দাতার বাংলাদেশে থাকা।
কিভাবে একজন প্রবাসী তার স্ত্রীকে তালাক দিতে পারবে : এজন্য মতিনকে (ছদ্মনাম) অন্তত ১ দিনের জন্য হলেও বাংলাদেশে আসতে হবে। বাংলাদেশে এসে মতিনকে কাজী অথবা একজন আইনজীবীর কাছে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে মতিনকে তার স্ত্রীকে তালাক প্রাদানের ঘোষণা দিতে হবে এবং যাবতীয় কার্যক্রমগুলো সম্পাদন করতে হবে। একই সাথে তালাকের ঘোষণার ৭ ধারা নোটিশ তার স্ত্রীর বর্তমান ঠিকানায় এবং স্ত্রী যে এলাকাতে স্থায়ীভাবে থাকে উক্ত এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে পৃথক দুটি নোটিশ পাঠাতে হবে অর্থাৎ এখানে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ যে কথাটি আপনাদের জন্য বলবো তা হল, তালাকের ঘোষণা দেয়ার দিন আপনারা অবশ্যই কাজীর কাছে থাকা তালাকের ভলিউমে আপনার স্বাক্ষর এবং টিপসই দিয়ে দিবেন।
এতে করে ৯০ দিন পরে যখন তালাক সম্পূর্ণ হবে তখন তালাকনামা কাজী আপনার মনোনিত প্রতিনিধিকে কোন প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই দিতে পারবেন। অর্থাৎ এখানে আরেকটি কাজ করবেন তা হল তালাকের ৭ ধারা নোটিশের সাথে আপনি যদি ৫০০ টাকার স্ট্যাম্পে হলফনামা করেন তবে উক্ত হলফনামায় এটা উল্লেখ করবেন যে পরিষদ থেকে যখন উক্ত তালাকের মধ্যস্থতার জন্য স্বামী এবং স্ত্রী উভয় পক্ষকে আমন্ত্রণ জানাবে, তখন আপনার অবর্তমানে আপনার প্রতিনিধি হিসাবে কে উক্ত মধ্যস্ততায় উপস্থিত থাকবে? এছাড়া উক্ত ৭ ধারা নোটিশের সাথে আপনি যে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছেন, তার প্রমাণস্বরূপ পাসপোর্টের একটি ফটোকপিও দিয়ে দিতে পারেন। একজন ব্যক্তি তালাক দেশের যেকোন স্থান থেকেই দিতে পারবেন। মনে করুন, আপনারা বিবাহ করেছেন রাজশাহীতে এবং আপনার স্ত্রী বর্তমানে থাকেও রাজশাহীতে।
এক্ষেত্রে আপনি আপনার স্ত্রীকে তালাক ঢাকা থেকে দিতে পারবেন। তালাকের কাজগুলো ১ দিনের মধ্যেই সম্পাদন করে আপনি চাইলে আবার বিদেশে চলে যেতে পারেন। যাই হোক, মতিনের তালাকের ৭ ধারা নোটিশটি পাঠানোর দিন থেকে ১০০ দিন পূর্ণ হবার পরে মতিনের একজন প্রতিনিধির মাধ্যমে স্ত্রীর স্থায়ী ঠিকানার ইউনিয়ন পরিষদ অফিসে পাঠাতে হবে। সেখানে গিয়ে লিখিত আবেদন করে তালাকটি কার্যকর হয়েছে এই মর্মে একটি প্রত্যয়ন পত্র নিয়ে আসতে হবে। এবার উক্ত প্রত্যয়ন পত্রটি নিয়ে মতিনের প্রতিনিধিকে যেতে হবে যে কাজীর মাধ্যমে তালাকটি দেয়া হয়েছে উক্ত কাজীর কাছে সেখানে গিয়ে কাজীর থেকে তালাকনামা নিয়ে আসতে হবে। এভাবে সম্পাদন হয় প্রবাসে থাকা একজন ব্যক্তির তালাকের পুরো প্রক্রিয়া।
বিকেপি/এমবি

