‘অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোই আমাদের মানবিক দায়’
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:০০
মো. মোফাজ্জেল হোসেন, লিগ্যাল এইড আইনজীবী।
অসহায়, দরিদ্র ও নির্যাতিত মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকার পরিচালিত লিগ্যাল এইড কার্যক্রম দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সমাজের প্রান্তিক মানুষের বিনামূল্যে আইনি সহায়তা প্রদান এখন ন্যায়বিচারের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। এ বিষয়ে গতকাল ঢাকার আদালতপাড়ায় কথা হয় জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির প্যানেল আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মোফাজ্জেল হোসেন এর সঙ্গে। বাংলাদেশের খবরকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন: লিগ্যাল এইড কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য কী?
উত্তর : লিগ্যাল এইডের মূল উদ্দেশ্য হলো- যেসব মানুষ আর্থিকভাবে দুর্বল, নির্যাতিত বা সমাজের প্রান্তিক অবস্থানে আছেন, তারা যেন ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হন। অনেকেই মামলা করার সামর্থ্য রাখেন না, আইনজীবীর ফি দিতে পারেন না। আমরা তাদের জন্য বিনামূল্যে পরামর্শ দিই, মামলা পরিচালনা করি, এমনকি প্রয়োজনে আদালতে প্রতিনিধিত্ব করি সম্পূর্ণ বিনা খরচে।
প্রশ্ন : একজন সাধারণ মানুষ কীভাবে লিগ্যাল এইডের সহায়তা পেতে পারেন?
উত্তর : এটা খুবই সহজ। প্রতিটি জেলায় জেলা আইনজীবী সমিতির পাশে বা আদালত প্রাঙ্গণে “জেলা লিগ্যাল এইড অফিস” রয়েছে। সেখানে গিয়ে দরখাস্ত জমা দিলেই যাচাই শেষে সহায়তা মেলে।
এছাড়াও “টোল ফ্রি নম্বর ১৬৪৩০”-এ কল করেও আবেদন করা যায়। গ্রামীণ পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসেও লিগ্যাল এইডের প্রতিনিধি রয়েছে।
প্রশ্ন : এখন পর্যন্ত লিগ্যাল এইডের কার্যক্রম কতটা সফল বলে মনে করেন?
উত্তর : খুবই ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (BLAST), জাতীয় লিগ্যাল এইড বোর্ড (NLASO) এবং বিভিন্ন এনজিও মিলে বছরে প্রায় এক লাখেরও বেশি মানুষ আইনি সহায়তা পাচ্ছে। অনেক নারী নির্যাতন, পারিবারিক বিরোধ ও ভূমি-সংক্রান্ত মামলা সফলভাবে নিষ্পত্তি হয়েছে।
প্রশ্ন : লিগ্যাল এইড কার্যক্রম পরিচালনায় কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে?
উত্তর : সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সচেতনতার অভাব। অনেকে জানেনই না যে, বিনামূল্যে আইনি সহায়তা পাওয়া যায়। তাছাড়া, কিছু জায়গায় পর্যাপ্ত আইনজীবী ও প্রশাসনিক জনবল ঘাটতি রয়েছে। বাজেটও তুলনামূলক কম। তবে সরকার এবং দাতা সংস্থাগুলো এখন এদিকে মনোযোগ দিচ্ছে।
প্রশ্ন : ভবিষ্যতে এই কার্যক্রম কীভাবে আরও বিস্তৃত করা যায় বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর : গ্রাম পর্যায়ে আইনি সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। স্কুল, কলেজ ও মসজিদ-মন্দিরের মাধ্যমে মানুষকে জানাতে হবে তাদের অধিকার সম্পর্কে।
একই সঙ্গে নারীদের ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আলাদা লিগ্যাল এইড ইউনিট চালু করলে সহায়তা আরও কার্যকর হবে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- “সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং ন্যায়বিচারের অধিকারী।” এই মৌলিক অধিকারের বাস্তব প্রয়োগে লিগ্যাল এইড কার্যক্রম একটি মানবিক উদ্যোগ। ‘আইন ও আদালত ’ নামে বাংলাদেশের খবর এর বিশেষ আয়োজনের প্রশংসা শেষে আইনজীবী মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, “ন্যায়বিচার শুধু ধনীদের জন্য নয়, গরিবের কাছেও তা পৌঁছে দিতে হবে- তবেই হবে প্রকৃত আইনের শাসন।
বিকেপি/এমবি

