নির্বাচনের আগে জামিনের হিড়িক
আইনের ফাঁকফোকরে অপরাধীরা ছাড় পাচ্ছে
আইন ও আদালত ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:২৬
জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশের বিভিন্ন আদালতে আসামিদের জামিনের এক অভূতপূর্ব হিড়িক লক্ষ করা যাচ্ছে। বিশেষ করে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কিংবা প্রভাবাধীন মামলার আসামিরা আইনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে একের পর এক জামিন পাচ্ছেন। ফলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আইনজ্ঞ, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এবং সাধারণ নাগরিকেরা। সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট ও দেশের বিভিন্ন জেলা আদালতে সম্প্রতি বিপুলসংখ্যক জামিন আবেদন জমা পড়েছে।
বিচার বিভাগের একাধিক সূত্র জানায়, নির্বাচনের আগে অভিযুক্তদের আইনি সুবিধা নিতে রাজনৈতিক তৎপরতা বেড়ে গেছে। শুধু অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময়েই ঢাকার বিভিন্ন আদালতে প্রায় ৮,০০০ এর বেশি জামিন আবেদন নথিভুক্ত হয়েছে, যার মধ্যে অধিকাংশই রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
আইনজীবী সমাজের একাংশের মতে, এ ধরনের অস্বাভাবিক জামিন প্রবণতা নির্বাচনের আগে অপরাধীদের সক্রিয় হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করছে। এক সিনিয়র অ্যাডভোকেট বলেন, “আইনের অপব্যবহার হচ্ছে। অনেকেই রাজনৈতিক আশ্রয়ে জামিন নিচ্ছেন, এরপর আবার মাঠে সক্রিয় হচ্ছেন। এটা আইনের শাসনের জন্য বিপজ্জনক।”
রাজনৈতিক দলগুলোর সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং এবং জনসংযোগ কর্মসূচিতে এখন নানা অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, কিছু জামিনপ্রাপ্ত আসামি আবারও মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় হয়ে পড়েছে, যা নির্বাচনের সময় সহিংসতার আশঙ্কা বাড়াচ্ছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, “অপরাধীরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকলে নির্বাচনের সময় সংঘর্ষ, সন্ত্রাস এবং নাশকতার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এখনই কঠোর নজরদারি না নিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে।” আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, জামিন আদালতের বিবেচ্য বিষয় হলেও এ সময়ে বিচারব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এক সাবেক বিচারপতি বাংলাদেশের খবরকে বলেন, “যদি আদালত অপরাধের গুরুত্ব, প্রমাণ ও জনস্বার্থ বিবেচনা না করে নির্বিচারে জামিন দেয়, তাহলে জনগণের আস্থা হারিয়ে যাবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্যও এটি বড় চ্যালেঞ্জ।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্কতা: ডিএমপি ও র্যাবের কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনের আগে বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে জামিনপ্রাপ্ত কিছু আলোচিত আসামিকে গোপনে পর্যবেক্ষণ তালিকায় রাখা হয়েছে। নির্বাচনকালীন সময়ে যেকোনো ধরনের অপরাধমূলক তৎপরতা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা রাজনৈতিক কার্যক্রমে অপরাধীরা ঢুকে পড়ছে কিনা তা নজরে রাখছি। আইন কেউই অমান্য করতে পারবে না।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচনের আগে অপরাধীদের জামিন পাওয়া এবং রাজনৈতিক মঞ্চে সক্রিয় হওয়া দেশের স্থিতিশীলতার জন্য বড় ঝুঁকি। তারা বলছেন, প্রশাসনকে এখনই কঠোর হতে হবে, না হলে নির্বাচনকালীন সহিংসতা ও সন্ত্রাসের ঝুঁকি বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। জাতীয় নির্বাচনের আগমুহূর্তে আদালত ও রাজনৈতিক মঞ্চে অপরাধীদের তৎপরতা দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য অশনিসংকেত। আইনের ফাঁকফোকর ও রাজনৈতিক প্রভাব যদি অপরাধীদের রক্ষা করে, তাহলে নির্বাচন শুধু অনিশ্চিতই নয়, সহিংসতাপূর্ণও হয়ে উঠতে পারে। তাই এখনই প্রয়োজন কঠোর নজরদারি, স্বচ্ছ বিচারপ্রক্রিয়া এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ।
বিকেপি/এমবি

