রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের বাজারে নকল, নিম্নমান ও জাল ওষুধের উপস্থিতি বাড়ছে। যা জনস্বাস্থ্য ও রোগ নিয়ন্ত্রণে ভয়াবহ হুমকি। সরকারি আইনগুলোর কঠোর বিধান থাকা সত্ত্বেও উৎপাদক, সরবরাহকারী চেইন, ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ ও কার্যকর তদন্ত, শাসনব্যবস্থা না থাকায় অপরাধীরা অবাধে কাজ করছে। দ্রুত, সমন্বিত ও স্বচ্ছ পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ, চিকিৎসা ব্যর্থতা ও মানুষের মৃত্যু বাড়বে।
যে ধরনের নকল ও নিম্নমান ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে:
সুপরিচিত ব্র্যান্ডের নকল প্যাকেজিং; ভুয়া ব্যাচ নম্বর ও এক্সপায়ারি। কার্যকর উপাদান কম থাকা বা পুরোপুরি অনুপস্থিত; কখনও কখনও ক্ষতিকর উপাদান মিশে থাকা।
অবৈধভাবে পুনঃপ্যাক করা বা মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য পুনর্ব্যবহার। RAB-এর মোবাইল কোর্ট মিটফোর্ড ওষুধ বাজারে নকল ওষুধ জব্দ করে এবং ব্যবসায়ীকে সাজা করা হয়; এটি নিয়মিত উদ্ধার-অভিযানের উদাহরণ।
Drugs Act, 1940 :
ওষুধের আমদানি, উৎপাদন, বণ্টন ও বিক্রয়ে বিধি-নিষেধ আরোপ করে; আইন ভঙ্গ করলে জরিমানা ও জেলশাস্তি ধার্য করা হয়। ভ্রান্তিকরভাবে ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে ১০ বছর পর্যন্ত জেল এবং টাকার জরিমানা ধার্য করা হয়েছে; সরকার সংশোধনী ও নতুন বিধি প্রণয়ন করেছে যাতে কড়া ব্যবস্থা নেয়া যায়।
জঅই, জেলা পুলিশ, উএউঅ (Directorate General of Drug Administration) ও কাস্টমস-এর যৌথ অভিযান ও মোবাইল কোর্ট ব্যবস্থা রয়েছে। যার মাধ্যমে জব্দ, মামলা ও জরিমানা করা হয়। উল্লেখ্য, বাস্তবে দণ্ড প্রয়োগে অনিয়ম দেখা গেছে।
কে দায়ী : উৎপাদক (Manufacturer)/ কারখানা:
যদি উৎপাদন পর্যায়েই নকল/অবৈধ পদ্ধতি থাকে, তারা মূল দায়ী; কঠোর লাইসেন্সিং ও এগচ (Good Manufacturing Practices) লঙ্ঘন করার জন্য দায়ী।
বণিক/ডিস্ট্রিবিউটর ও হোলসেলার-চেইন:
অনুমোদনহীন ব্যাচ বাজারে ছাড়লে দায় বহন করে। দোকানদার/ফার্মাসিস্ট: লাইসেন্স ছাড়া ওষুধ বিক্রি করলে আইনি দায় থাকে। মোবাইল কোর্ট ও স্থানীয় আদালতের রায় আছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা (DGDA) ও পরিবেশ-স্বাস্থ্য বিভাগের তদারকি: নিয়মিত অডিট, লাইসেন্স নবায়ন ও বাজার-নিরীক্ষায় দুর্বলতা থাকলে দায় কিছুটা প্রশাসনের উপরও।
শুল্ক ও সীমান্ত কর্তৃপক্ষ (Customs / BGB): সীমান্ত দিয়ে আগত অবৈধ ইনপুট বা প্রস্তুত পণ্য হাতবদল রোধে ব্যর্থ হলে তাদেরও দায় আছে।
ব্যবস্থা না নেয়ার মূল কারণ :
নিয়ন্ত্রক ও প্রযোজ্য সম্পদের অভাব: উএউঅ-র বিশ্লেষণাগার ও পর্যাপ্ত কর্মী-সংখ্যান সীমিত; নজরদারি কম।
জটিল আইনি প্রক্রিয়া ও প্রমাণ সংগ্রহের সমস্যা: গণনার ব্যাচ-টেস্ট ও ফরেনসিক পরীক্ষার সময় লাগায় মামলা পরিচালনায় দেরি। অভিযুক্তদেরেমধ্যে মামলা ফেলে কার্যকর শাস্তি সীমিত।
বিস্তৃত গুটিকয়েক হাউজিং-চেইন ও হার্ড-টু-ট্র্যাক চ্যানেল: পুরানো বাজার (যেমন মিটফোর্ড) ও অনলাইন/ইনফরমাল চ্যানেলে ক্রেতা আসে- ট্র্যাক করা কঠিন।
কখনো-কখনো কর্পোরেট চাপ ও দুর্বল রাজনৈতিক ইচ্ছা: বৃহৎ ব্যবসায়ীদের যৌথ তদ্যোচন বা প্রভাবের কারণে অনুসন্ধান ধীর বা শিথিল হতে পারে।
চিকিৎসা ব্যর্থতা ও মৃত্যুর ঝুঁকি :
নকল ও নিম্নমান ওষুধ রোগ সঠিকভাবে সেরে না উন্নতি না হওয়া, যা গুরুতর লক্ষণ বা মৃত্যু পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। সংবাদে এমন ঘন ঘটনাও রিপোর্ট হয়েছে।
অ্যান্টিবায়োটিক রোধ (AMR) বৃদ্ধি: কম কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে জীবাণু প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে WHO-I এই ঝুঁকি বিশাল বলে চিহ্নিত করেছে।
সুপারিশ :
দুর্নীতি ও আইনি দুর্বলতা না থাকলে আইন ও সংস্থান যথেষ্ট হলে এই সমস্যার আধােকটি সমাধান সম্ভব। তাই সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা, উএউঅ-র তাৎক্ষণিক সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ, নাগরিক রিপোর্টিং ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি- একত্রে দরকার।
নকল ওষুধ শুধু অর্থনৈতিক অপরাধ নয়- এটি সরাসরি মানুষের জীবনকে বিপজ্জনক করে। রাজধানীতে পুনরাবৃত্তি হওয়া উদ্ধার-ঘটনা ও মিডিয়াতে উঠে আসা ফাঁকিপথ নির্দেশ করে যে সমস্যা পুঙ্খানুপুঙ্খ ও বহুমাত্রিক। দ্রুত, সমন্বিত ও স্বচ্ছ ব্যবস্থা না নিলে আর্থিক লেনদেনের পশ্চাৎপটেই জনস্বাস্থ্যের বিপর্যয় ঘটবে।
বিকেপি/এমবি

