তালাকের পর পুনরায় বিবাহ
মুসলিম ও হিন্দু আইনে ভিন্ন পদ্ধতি ও আইনগত বাস্তবতা
আইন ও আদালত ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:২৬
বিবাহ একটি সামাজিক ও ধর্মীয় বন্ধন। তবে দাম্পত্য জীবনে মতবিরোধ বা ভাঙনের ফলে অনেক সময় বিচ্ছেদ (তালাক বা ডিভোর্স) ঘটে।দায়ের বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক পারিবারিক আইন বা পার্সোনাল ল' অনুযায়ী তালাকের পর পুনরায় বিবাহের পদ্ধতি মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন। মুসলিম আইনে নির্দিষ্ট সময় ও শর্তপূরণের মাধ্যমে পুনর্বিবাহ সম্ভব হলেও, হিন্দু আইনে এখনও বিচ্ছেদ ও পুনরায় বিবাহের বিধান সীমিত।
তালাকের আইনি ভিত্তি: বাংলাদেশে মুসলিম বিবাহ ও তালাক আইন প্রধানত Muslim Family Laws Ordinance, 1961 Ges Muslim Marriage and Divorce (Registration) Act, 1974 অনুযায়ী পরিচালিত হয়। এই আইনের ধারা ৭ অনুযায়ী তালাক কার্যকর হওয়ার আগে স্বামীকে স্থানীয় ইউনিয়পরিষদ/সিটি করপোরেশনের চেয়ারম্যান বা নিকাহ রেজিস্ট্রারকে লিখিত নোটিশ দিতে হয়। তালাকের নোটিশ প্রাপ্তির ৯০ দিনের মধ্যে পুনর্মিলনের (reconciliation) সুযোগ রাখা হয়।
পুনরায় বিবাহের শর্ত: তালাকপ্রাপ্ত দম্পতি পুনরায় একে অপরকে বিয়ে করতে পারেন, তবে কয়েকটি শর্ত মানতে হয়- ইদ্দত মেয়াদ শেষ হতে হবে। মুসলিম আইন অনুযায়ী ইদ্দতের মেয়াদ সাধারণত তিন মাস বা তিন মাসিক সময় পর্যন্ত থাকে। তালাক যদি "তালাক-রাজি" বা "তালাক-আহসান" হয়, তাহলে ইদ্দতের মধ্যে স্বামী পুনর্মিলন চাইলে তালাক বাতিল করতে পারেন। তবে যদি তিন তালাক (তালাক-বায়েন) ঘটে, তখন পুনর্বিবাহ করতে হলে স্ত্রীকে অন্য এক পুরুষের সঙ্গে বৈধ বিবাহ ও সহবাস শেষে, যদি সে স্বেচ্ছায় বিচ্ছিন্ন হয় তবেই প্রাক্তন স্বামী পুনরায় বিয়ে করতে পারেন। পুনরায় বিবাহ করতে হলে নতুন করে কাবিননামা (ঘরশধয ঘধসধ) রেজিস্ট্রেশন করতে হয়, এবং এটি মুসলিম নিকাহ রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
Muslim Family Laws Ordinance, 1961, Section 7(6): Where a talaq has been revoked... the parties shall be deemed to be husband and wife." অর্থাৎ, যদি পুনর্মিলন হয় এবং তালাক কার্যকর হওয়ার আগে স্বামী-স্ত্রী পুনরায় একত্রে তালাক কার্যকর হওয়ার পর পুনরায় সম্পর্ক স্থাপন করতে চাইলে নতুন বিবাহ (নতুন মোহর ও রেজিস্ট্রেশন) বাধ্যতামূলক।
হিন্দু আইনে পুনরায় বিবাহের বিধান: বাংলাদেশে হিন্দু পারিবারিক আইন মূলত Hindu Marriage Registration Act, ২০১২ দ্বারা পরিচালিত, যা শুধুমাত্র বিবাহ নিবন্ধনকে (registration) বৈধ করেছে, কিন্তু বিচ্ছেদ বা ডিভোর্সের কোনো পূর্ণাঙ্গ বিধান দেয়নি। অর্থাৎ, বাংলাদেশে হিন্দুদের মধ্যে এখনো বিবাহ-বিচ্ছেদ আইনত অনুমোদিত নয়। তবে ভারতের Hindu Marriage Act, 1955 পুনরায় বিবাহের সুযোগ যেহেতু হিন্দু আইনে "তালাক" বা অনুযায়ী ডিভোর্স বৈধ হলেও বাংলাদেশে সেই আইন কার্যকর নয়। "ডিভোর্স” বৈধ নয়, তাই আইনত কোনো নারী বা পুরুষ একবার বিবাহের পর স্বামী বা স্ত্রীর মৃত্যু ছাড়া পুনরায় বিবাহ করতে পারেন না। যদি হিন্দু নারী বা পুরুষ দ্বিতীয়বার বিবাহ করেন, এবং পূর্বের সঙ্গী জীবিত থাকেন, তবে তা অবৈধ বিবাহ (ড়িরফ সধৎধমব) হিসেবে গণ্য হয়। ফৌজদারি দণ্ডবিধির ধারা ৪৯৪ অনুযায়ী এটি দ্বিবিবাহ অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়, যার জন্য সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
ব্যতিক্রম ও সামাজিক প্রেক্ষাপট: কিছু সমাজে প্রথাগতভাবে "ত্যাগ" বা "বিচ্ছেদ” বলে অনানুষ্ঠানিক রীতি আছে, তবে তা আদালত বা আইনের চোখে বৈধ নয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী সংগঠন ও আইনবিদরা বহুদিন ধরে দাবি জানাচ্ছেন, হিন্দু বিবাহ-বিচ্ছেদ ও পুনরায় বিবাহ আইন প্রণয়ন করা হোক যাতে নারীর অধিকার সুরক্ষিত হয়।
আইএইচ/

