ন্যায়বিচারে আশার আলো
ঢাকার আদালতে মামলার জট কমছে
আইন ও আদালত ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৩:২৭
বাংলাদেশে বিচারব্যবস্থার দীর্ঘদিনের একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল আদালতের মামলার জট। লক্ষাধিক মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় বছরের পর বছর ধরে পড়ে থাকায় বিচারপ্রার্থীরা হতাশার মধ্যে দিন কাটাতেন। তবে অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকারের বিশেষ উদ্যোগ, আদালত ব্যবস্থার ডিজিটাল রূপান্তর, বিচারক সংখ্যা বৃদ্ধি এবং বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (অউজ) কার্যক্রম জোরদার করার ফলে সা¤প্রতিক সময়ে ঢাকার আদালতগুলোতে মামলার জট দৃশ্যমানভাবে কমছে। এতে বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে নতুন করে ন্যায়বিচারের আশার আলো দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও সংগঠিত অপরাধে জড়িত আসামিদের জামিন বিষয়ে বিচার করা আরও সতর্ক ও আইনি নীতিতে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের আদালতসমূহে মোট ৩৫ লাখেরও বেশি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টগুলোতে মামলা সংখ্যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১৮% কমেছে। শুধুমাত্র ঢাকায় গত এক বছরে প্রায় ২ লাখ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন- ই-জুডিশিয়াল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, অনলাইন কজলিস্ট, ভার্চুয়াল হিয়ারিং এবং বিচারকদের টার্গেটভিত্তিক নিষ্পত্তি তদারকি এই সাফল্যের মূল কারণ।
অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকারের আওতায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিচার ব্যবস্থায় একাধিক সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ই-জুডিশিয়াল প্রজেক্ট- আদালতের ফাইল ডিজিটালাইজেশন, ই-ফাইলিং, মামলার অগ্রগতি অনলাইনে দেখা। এসবের ফলে সময় ও খরচ দুটোই কমেছে। বিচারক নিয়োগ বৃদ্ধি- গত তিন বছরে ২০০-এর বেশি নতুন বিচারক নিয়োগ দিয়ে ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে মামলার চাপ ভাগ করে দেয়া হয়েছে। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (অউজ) পারিবারিক ও দেওয়ানি মামলায় মধ্যস্থতার মাধ্যমে দ্রুত সমাধান জোরদার করা হয়েছে। আইনজীবী প্রশিক্ষণ ও ট্রাইব্যুনাল রিফর্ম- আধুনিক আইন ব্যাখ্যা, প্রমাণ আইন, ও ফৌজদারি বিচারকাজে দক্ষতা বৃদ্ধির কর্মশালা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
গত কয়েক মাসে ঢাকার আদালতে আলোচিত কয়েকটি মামলার জামিন আবেদন খারিজ হওয়ার ঘটনাগুলো জনমনে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। আইনজীবীদের মতে, সন্ত্রাসবাদ, হত্যাকাণ্ড, নারী ও শিশু নির্যাতন, দুর্নীতি ও রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধে জামিনে ছাড় দেওয়া মানে বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারানোর ঝুঁকি।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের একজন সিনিয়র আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখন জামিন প্রদানের ক্ষেত্রে ‘ন্যায়ের ভারসাম্য’ নীতিকে অনুসরণ করা হচ্ছে। অপরাধের প্রকৃতি, সমাজে প্রভাব ও প্রমাণের শক্তি বিবেচনায় জামিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এটি বিচারক স্বাধীনতারই প্রতিফলন।
ঢাকার আদালতের আইনজীবী কে এম খাইরুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় মামলা কমার এই প্রবণতা যদি টেকসই হয়, তাহলে জনগণের আইনের প্রতি আস্থা বহুগুণে বাড়বে। তবে সন্ত্রাসবাদ ও সংগঠিত অপরাধে জামিনে বিচারকরা আরো সতর্ক থাকবেন এটি বিচারনিরপেক্ষতার পক্ষে ভালো সংকেত।
অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকারের উদ্যোগে মামলার জট কমানোর প্রচেষ্টা এখন বাস্তব ফল দিচ্ছে। ডিজিটাল আদালত, নতুন বিচারক নিয়োগ ও বিচারপদ্ধতির আধুনিকীকরণ বাংলাদেশের ন্যায়বিচার ব্যবস্থাকে এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করিয়েছে। তবে আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অর্জন টিকিয়ে রাখতে হবে আদালত ব্যবস্থার স্বচ্ছতা, বিচারক স্বাধীনতা ও প্রযুক্তিগত স্থায়িত্বের মাধ্যমে।
বিকেপি/এমবি

