Logo

আইন ও বিচার

গ্রাম আদালতে আইনের ছায়া

Icon

আইন ও আদালত ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:১৩

গ্রাম আদালতে আইনের ছায়া

গ্রাম আদালতের জরিমানা করার ক্ষমতা বাড়িয়ে আইন সংশোধন করা হয়েছে। জাতীয় সংসদে  এ-সংক্রান্ত ‘গ্রাম আদালত (সংশোধন) বিল-২০২৪’ পাস হয়। তাতে বলা হয়, গ্রাম আদালত সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা জরিমানা করতে পারবেন। এর আগে এটি ছিল সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার টাকা।

সেই সময় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বিলটি পাসের জন্য সংসদে তোলেন। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।

বিলের তফসিলে সাত ধরনের দেওয়ানি মামলার কথা উল্লেখ করা হয়। এসব বিষয় গ্রাম আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তিযোগ্য হবে। সেগুলো হলো- কোনো চুক্তি রসিদ বা অন্য কোনো দলিলমূল্যে প্রাপ্য অর্থ আদায়; কোনো অস্থাবর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার বা তার মূল্য আদায়ের মামলা; স্থাবর সম্পত্তি বেদখল হওয়ার এক বছরের মধ্যে তার দখল পুনরুদ্ধারের মামলা; কোনো অস্থাবর সম্পত্তির জবরদখল বা ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়ের মামলা; গবাদিপশু অনধিকার প্রবেশের কারণে ক্ষতিপূরণের মামলা; কৃষিশ্রমিকদের পরিশোধ্য মজুরি ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের মামলা এবং বকেয়া ভরণপোষণ আদায়ের জন্য স্ত্রীর মামলা।

বিলে বলা হয়েছে, একজন চেয়ারম্যান এবং উভয় পক্ষ মনোনীত দুজন করে মোট পাঁচজন সদস্য নিয়ে গ্রাম আদালত গঠন করা হবে। প্রত্যেক পক্ষের মনোনীত দুজন সদস্যের মধ্যে একজন সদস্যকে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হতে হবে। এ ছাড়া ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলার সঙ্গে কোনো নারীর স্বার্থ যুক্ত থাকলে সংশ্লিষ্ট পক্ষ সদস্য মনোনয়নের ক্ষেত্রে একজন নারীকে সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেবে। চারজন সদস্যের উপস্থিতিতে গ্রাম আদালতের সিদ্ধান্ত দুই-দুই ভোটে অমীমাংসিত হলে চেয়ারম্যান নির্ণায়ক ভোট দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

প্রান্তিক পর্যায়ে সাশ্রয়ী মূল্যে আইনী সহায়তা প্রদানে গ্রাম আদালত স্থানীয় সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। আদালতের দীর্ঘসূত্রিতা এড়িয়ে সহজে ও দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এবং গ্রাম আদালতের কার্যক্রমে নারী নেতৃত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ প্রান্তিক জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। এর জন্য প্রয়োজন সমন্বিত প্রচেষ্টা ও মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা। যার মাধ্যমে গ্রামীণ আদালতগুলোকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ন্যায়বিচারের প্ল্যাটফর্মে পরিণত করা সম্ভব।

গ্রাম আদালতকে শক্তিশালী ও কার্যকর করতে হলে নারীর অন্তর্ভুক্তিকে বাধ্যতামূলক করা জরুরি। প্রান্তিক পর্যায়ে নারীদের নিরপেক্ষ ও দ্রুত বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে গণমাধ্যম, স্থানীয় সরকার ও সব মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত সহযোগিতা প্রয়োজন। উচ্চ আদালতের দীর্ঘসূত্রিতা ও ব্যয়ের বিকল্প হিসেবে গ্রাম আদালত এরই মধ্যে কার্যকর সমাধান হিসেবে কাজ করছে- এখন দরকার আরও প্রচার, প্রশিক্ষণ এবং সামাজিক সচেতনতা।

গ্রামীণ এলাকায় কাঠামোগত ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে নারী এবং প্রান্তিক জনগণ প্রায়ই ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন। প্রধান সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে আইনি অধিকার সম্পর্কে সচেতনতার অভাব, তথ্যের অভাব, প্রক্রিয়ার জটিলতা, পরিবহন সমস্যা এবং সামাজিক ও পারিবারিক সীমাবদ্ধতা। গ্রামীণ আদালত প্যানেলে নারী সদস্যদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সমাজে বিদ্যমান সংশয়, পুরুষ সদস্যদের সহানুভূতির অভাব ও চেয়ারম্যানদের মতামত উপেক্ষা করা অন্যতম চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে আসে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, হিজড়া সম্প্রদায়, দলিত ও দরিদ্র জনগণ গ্রামীণ আদালতের সেবা সম্পর্কে অবগত নন।

জানা যায়, ফেব্রুয়ারি ২০২৪ থেকে আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত গ্রামীণ আদালতে এক লাখ ৩৬ হাজার ৮০৮টি মামলা দায়ের হয়েছে, যার মধ্যে ৩৬ হাজার ৯৬২টি নারী আবেদনকারীর মামলা ছিল। এ সময়ে উচ্চ আদালত থেকে ১৪ হাজার ২১৪টি মামলা রেফার করা হয়েছে। বর্তমানে দায়েরকৃত মামলার মধ্যে ১৫ শতাংশ মামলার আর্থিক মূল্য ৭৫ হাজার টাকার বেশি এবং ২.৫ শতাংশ মামলা স্ত্রী কর্তৃক বকেয়া ভরণপোষণ আদায় সম্পর্কিত। এই বাস্তবতা ইঙ্গিত করে যে, কেবল আইনি সংস্কার যথেষ্ট নয়, বরং সচেতনতা বৃদ্ধি ও সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সমন্বিত প্রচেষ্টা জরুরি।

বিকেপি/এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

আইন ও আদালত

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর