মানবতাবিরোধী অপরাধ
শেখ হাসিনা ও কামালের মৃত্যুদণ্ড
বাংলাদেশের প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৫:০৭
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়ে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ের প্রথম অংশ পড়া শুরু করেন বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে অন্য সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ।
দুই ঘণ্টা ১০ মিনিটের সংক্ষিপ্ত রায় পড়ার পর দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে এদিন সকাল ৯টা ১০ মিনিটের দিকে কড়া নিরাপত্তায় প্রিজনভ্যানে করে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। এ মামলায় এটাই তার শেষ হাজিরা।
শেখ হাসিনা ও কামাল পলাতক থাকলেও এক বছর ধরে কারাগারে রয়েছেন সাবেক এ আইজিপি। তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। ফলে তার শাস্তির সিদ্ধান্ত ট্রাইব্যুনালের ওপর ছেড়ে দিয়েছে প্রসিকিউশন। একইসঙ্গে শেখ হাসিনা ও কামালের সর্বোচ্চ সাজা চাওয়া হয়েছে।
এ রায়কে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ, র্যাব, এপিবিএন, বিজিবির পাশাপাশি মোতায়েন রয়েছে সেনাবাহিনী। সক্রিয় রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও। নিরাপত্তার স্বার্থে দোয়েল চত্বর থেকে শিক্ষাভবনমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সীমিত করা হয়েছে মানুষের চলাচলও।
গত ১৩ নভেম্বর রায় ঘোষণার এ দিন ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়। ৯ কার্যদিন ধরে চলে যুক্তিতর্ক ও পাল্টা যুক্তি। গত ২৩ অক্টোবর রাষ্ট্রের প্রধান আইনকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের সমাপনী বক্তব্য এবং চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেনের যুক্তিখণ্ডন শেষে রায়ের তারিখ নির্ধারণে সময় দেওয়া হয়।
প্রসিকিউশন শেখ হাসিনা ও কামালের সর্বোচ্চ সাজা চেয়েছে। তবে রাজসাক্ষী হওয়ায় মামলার অন্যতম আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের ব্যাপারে ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। যদিও তার খালাস চেয়েছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ। হাসিনা-কামালও খালাস পাবেন বলে দৃঢ় বিশ্বাস রাষ্ট্রনিযুক্ত আমির হোসেনের।
এ মামলায় তিন আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। এর মধ্যে রয়েছে- উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যা ও আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো।
আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার। সাক্ষী করা হয়েছে ৮৪ জনকে। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেয়।
ডিআর/এমবি/ওকেআর/এএইচকে

