Logo

আইন ও বিচার

বাংলাদেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে মানসিক রোগীর সংখ্যা

Icon

আইন ও আদালত ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৬

বাংলাদেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে মানসিক রোগীর সংখ্যা

বাংলাদেশে মানসিক রোগীর সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলেছে। এ অবস্থাকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন “নীরব মহামারি”। কর্মক্ষেত্রে, পরিবারে, রাস্তাঘাটে, গণপরিবহন থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি অফিস পর্যন্ত- অস্বাভাবিক আচরণ, হঠাৎ রাগ, আক্রমণাত্মক ব্যবহার, অনৈতিক অর্থলোভ এবং নেশায় আসক্তি দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে।

উদ্বেগজনক বিষয় হলো অনেকেই নিজেরাই জানেন না তারা মানসিক রোগে আক্রান্ত। দেশের বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মতে অচাপ, দুশ্চিন্তা, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, কর্মক্ষেত্রের চাপ, সামাজিক ভোগান্তি, নেশাজনিত আসক্তি ও পারিবারিক অশান্তির কারণে মানসিক সমস্যা দ্রুত বাড়ছে।

অস্বাভাবিক আচরণের বিস্তার: 

অফিস থেকে বাজার পর্যন্ত। কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও অশোভন ব্যবহার বেড়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অনেক সরকারি-বেসরকারি অফিসে কর্মীদের আচরণ স্বাভাবিক সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সহকর্মীর প্রতি রূঢ়তা, হঠাৎ রাগ, অহেতুক চিৎকার, গালি, হুমকি, অফিস শৃঙ্খলা ভঙ্গ ইত্যাদি মানসিক রোগ।

এক প্রশ্নের জবাবে বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের খবরকে বলেন, এই আচরণগুলোর বেশির ভাগই চাপ-সৃষ্ট মানসিক অসুস্থতা বা ব্যক্তিত্বজনিত সমস্যা থেকে আসে, কিন্তু কর্মচারীরা নিজেদের অসুস্থ ভাবেন না- বরং স্বাভাবিক আচরণ মনে করেন। এছাড়া ঘুষ ও অর্থলোভও মানসিক বিকৃতি হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

বেশ কয়েকটি কর্মক্ষেত্রে দেখা গেছে- কিছু কর্মকর্তা/চাকরিজীবী ‘অর্থ ছাড়া কিছুই বুঝেন না।’ মনোবিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করছেন- চরম অর্থলোভ, সহানুভূতির অভাব, দায়বদ্ধতা না থাকা- এসবই ব্যক্তিত্বগত বিকৃতির (Personality Disorder) লক্ষণ। এছাড়া পাবলিক প্লেসে ঝগড়া-বিবাদ ও বাড়তি আগ্রাসন, বাংলাদেশের বাজার, বাসস্ট্যান্ড, গণপরিবহন কিংবা হাট-বাজারে এখন নিয়মিত একটি দৃশ্য সামান্য কারণে মারামারি, ঝগড়া, ধাক্কাধাক্কি, আঘাত।

গণপরিবহনে সিট নিয়ে মারামারি, সামান্য কথাকাটাকাটিতে হাতাহাতি, যাত্রীদের প্রতি চালকের রূঢ়তা, মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে এই আচরণের পেছনে রয়েছে নিয়ন্ত্রণহীন রাগ. হতাশা, ঘুমের ঘাটতি, নেশা, স্ট্রেস, দীর্ঘদিন চিকিৎসা বঞ্চনা, ফলে সমাজে আকস্মিক আগ্রাসন বাড়ছে, যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকেও প্রভাবিত করছে।

বেপরোয়া গাড়ি চালানো:

অজ্ঞতা নয়, মানসিক অস্থিতিশীলতা ও নেশা, রাস্তায় বেপরোয়া গাড়ি চালানো এখন উদ্বেগজনক পর্যায়ে। ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- বেশির ভাগ দুর্ঘটনার পেছনে আছে চালকের আচরণগত সমস্যা, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস, অস্থিরতা, মাদকাসক্তি এবং দায়িত্ববোধের অভাব। কিছু ড্রাইভার নিজেরাই স্বীকার করেছেন- তারা ঘুম না নিয়েই টানা ডিউটি করেন, মানসিক চাপ ও নেশার কারণে নিয়ন্ত্রণ হারান।

কেন মানসিক রোগ বাড়ছে?:

মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে মানসিক রোগ বৃদ্ধির বড় কারণগুলো হলো- অর্থনৈতিক চাপ ও আয়-ব্যয় অমিল, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, চরম প্রতিযোগিতা ও চাকরি সংকট, টার্গেটের চাপ, পারিবারিক অশান্তি, বিচ্ছেদ, দ্ব›দ্ব, একাকিত্ব, সামাজিক অস্থিরতা, নেশা ও মাদক-  ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিল, চিকিৎসার প্রতি অনীহা, মানসিক রোগকে লজ্জার বিষয় মনে করা, ডিজিটাল আসক্তি ও ঘুমের ঘাটতি, উদ্বেগ, যথেষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ না থাকা।

দেশে অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, শহুরে এলাকায় বসবাসকারীর উচ্চমাত্রার স্ট্রেস, কিশোরদের মধ্যে ডিপ্রেশন, উদ্বেগ, আত্মহতাশা, তরুণদের মধ্যে নেশার প্রবণতা, চাকরিজীবীদের মধ্যে বার্নআউট ও আচরণগত বিকৃতি, পরিবারের মধ্যে সহিংসতা এবং দুর্ব্যবহার। এক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, “মানুষ এখন ক্রমশ ভিতর থেকে হতাশ, ক্ষুব্ধ ও অস্থির হয়ে পড়ছে কিন্তু তারা এটিকে রোগ মনে করছে না। তাই চিকিৎসাও নিচ্ছে না।”

চিকিৎসাবঞ্চনা ও সামাজিক অজ্ঞতা সমস্যা আরও বাড়াচ্ছে। বাংলাদেশে মানসিক রোগ বিষয়ে সামাজিক ধারণা এখনও নেতিবাচক। অনেকে মনে করেন মানসিক রোগ মানেই পাগলামি। পরিবার রোগীকে লুকিয়ে রাখে। স্বীকৃত কাউন্সেলিং সেবা সীমিত। ফলে অনেক রোগী বছর বছর চিকিৎসা ছাড়া জীবন কাটান।

এতে আচরণগত সমস্যা (aggression, irritability, impulsiveness) আরো বাড়ে। বাংলাদেশে মানসিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে এটি চোখে দেখা যায় না এমন অভ্যন্তরীণ সংকট, যা সমাজকে ভেতর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কর্মক্ষেত্রের অশোভন আচরণ, রাস্তায় সংহতি ভাঙন, অনৈতিক অর্থলোভ, নেশায় আসক্তি, বেপরোয়া ড্রাইভিং- সবই একই সমস্যার প্রতিফলন।

বিকেপি/এনএ

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর