আইন কী বলছে?
সামাজিক মিডিয়ায় রাজনৈতিক নেতৃত্বকে ব্যঙ্গ করে কনটেন্ট
আইন ও আদালত ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১০:২৭
বাংলাদেশে ইউটিউব, ফেসবুকসহ অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে রাজনৈতিক দল নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য করে তৈরি হচ্ছে ব্যঙ্গাত্মক ভিডিও, ছবিসহ কনটেন্ট। অনেক সময় এসব এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ছে যে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক নেতাদের মান-সম্মান নষ্ট হচ্ছে, রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। আইন রয়েছে কিন্তু তল্লাশি ও কার্যকর ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। কেন দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো নীরব?
আইনগত অবকাঠামো: Penal Code, ১৮৬০ (বাংলাদেশ) ধারা ৪৯৯- ‘যে ব্যক্তি কোনো মানুষ সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ দেবে বা লিখিত/দর্শনীয় প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রকাশ করবে, যার উদ্দেশ্য ওই ব্যক্তির মান-সম্মান ক্ষুণ্ন করা- সে দোষী হবে।’ Information and Communication Technology Act, ২০০৬ ধারা ৫৭- ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ‘মিথ্যা, ব্যঙ্গাত্মক, বিব্রতকর” প্রকাশ বা এমন দ্রব্য যা “কোনো ব্যক্তির ইমেজ বা ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে পারে’ এমন ক্ষেত্রে মামলা দায়ের করা যায়।
Digital Security Act, ২০১৮: ডিজিটাল মাধ্যমে অপরাধমূলক বিষয় যেমন সাইবার ডিফামেশন, মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো- এই ধরনের অপরাধ-প্রভৃতি আইনে রয়েছে। Cyber Security Act, ২০২৩ অনুমোদন পেয়েছে, যেখানে ডিফামেশন (মানহানিকর প্রকাশ) মামলা-বিচার নিয়ে কারাবাসের ধারা রদ হচ্ছে, শুধুই অর্থদণ্ড থাকবে।
বিকেপি/এনএ
কেন তবুও ব্যবস্থা নিচ্ছে না?: এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে সাইবার ট্রাইব্যুনালে ক্লোজিং এ প্রায় ৯৭ শতাংশ মামলা either খারিজ বা মীমাংসিত হয়েছে। আইনের ধারা থাকলেও বাস্তবায়নে রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রতিবন্ধকতা যেমন-
প্রমাণ সংগ্রহ কঠিন- ইউটিউবে/সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাঙচুর করা কনটেন্ট সহজে মুছে ফেলা হয় কিংবা অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যায়। অভিযোগ দায়ের না হওয়া। ব্যক্তি নেতারা হয়তো নীরব থাকেন বা উচ্চ-প্রোফাইলে মামলা গোপন রাখেন। আইনের ধারা পরিবর্তন- নতুন আইন অনুযায়ী কারাবাস ধারা কমছে- ফলে কার্যকর দমনের ভীতি কমছে। বিশেষভাবে, রাজনৈতিক শক্তি ও সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম-দ্বিতীয়র আন্তঃসম্পর্কের কারণে অনুসন্ধান ও বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা নেয়া বিলম্ব হচ্ছে বলেও বিশ্লেষকরা মন্তব্য করছেন।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে যেসব ভিডিও বা মিম দেওয়া হচ্ছে, সেসব নেতৃবৃন্দকে বিপর্যস্ত ও অপমানিত করে এমন কনটেন্ট। উদাহরণস্বরূপ- নেতার ছবি বা বক্তব্যের সম্পাদিত অংশ ব্যবহার করে একটি হাস্যকর ম্যাকআপ ভিডিও ইউটিউবে তৈরি হচ্ছে, যা দ্রুত ভাইরাল হচ্ছে। এতে নেতার রাজনৈতিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং সমর্থক-বিরোধীর বিভাজন বাড়ছে।
সামাজিক মিডিয়ায় বর্তমান পরিবেশে সহজ-সাধ্য কনটেন্ট উৎপাদন ও শেয়ারিং সম্ভব। ভার্চুয়াল লুপ্তি বা দ্রুত মুছে দেওয়া কনটেন্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে অনুসন্ধান কঠিন করে তোলে। আইন পরিবর্তন হলেও নিয়ন্ত্রণ বা মনিটরিং কাঠামোর অভাব রয়েছে।
রাজনৈতিক নেতাদের মান-সম্মান সংক্রান্ত বিষয় হলে হলেও তারা সাধারণ মানুষ যেমন দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে না; হয়তো কারণ রাজনৈতিক-দৃষ্টিকোণ বা ক্ষমতার দিক থেকে। ফল দেখা যাচ্ছে-ভঙ্গুর সুনামের নেতাকে সামাজিক মিডিয়ায় দ্রুত ‘লং টার্ম ক্ষতি’ হওয়া যাচ্ছে।
সমাধানের পথ কী?: দ্রুত ও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রক্রিয়া ডিজিটাল মিডিয়ায় নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে প্রয়োগযোগ্য ভুল বা অপমানসূচক কনটেন্ট-এর জন্য সে-এর অনুভূতিকে বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত সাড়া দেবে এমন আদালত/ট্রাইব্যুনাল গঠন।
সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্মকে অপমান-ভিত্তিক কনটেন্ট নীতি কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে- রিমুভাল রিকুয়েস্ট ফিচার দ্রুত করা। নেতৃবৃন্দ ও রাজনৈতিক পার্টিকে সচেতন করতে হবে- নিজেদের নামে ভুল বা ব্যঙ্গাত্মক কনটেন্ট দেখা মাত্রই আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছেন কি না তা দ্রুত স্ট্যাটাস দেবেন। জনসচেতনতা বৃদ্ধি: সাধারণ মানুষকে জানতে হবে- ব্যঙ্গাত্মক ভিডিও বা কনটেন্ট কখন আইনের দৃষ্টিতে অপরাধ হতে পারে, কীভাবে তারা নিজেদের রক্ষা করবেন।
আইনের প্রয়োগ শৃঙ্খলা বৃদ্ধি: পুলিশ, সাইবার ইউনিট ও বিচারিক প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত কার্যকর অনুসন্ধান-সাপোর্ট সিস্টেম গঠন করতে হবে।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে সামাজিক মিডিয়ায় ‘ব্যঙ্গাত্মক কনটেন্ট’ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এতে রাজনৈতিক দলের নেতার উপরই বড় ধরনের মান-হানির ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। আইন রয়েছে, কিন্তু সমস্যা হলো এর প্রয়োগ ও বাস্তবতা। যদি দ্রুত না ব্যবস্থা নেয়া হয়, তাহলে শুধুই ব্যক্তিগত সমস্যা নয়। সামাজিক মান ডাউন, রাজনৈতিক উত্তেজনা ও মিডিয়া আস্থার অবনতি হবে।

