Logo

আইন ও বিচার

তালাকের পর শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা যায় কি?

Icon

আইন ও আদালত ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২:১৬

তালাকের পর শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা যায় কি?

প্রতীকী ছবি

তালাকের পর প্রাক্তন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক আইনগতভাবে শেষ হলেও সামাজিক বাস্তবতায় অনেক প্রশ্ন থেকেই যায়। বিশেষ করে শ্বশুর-শাশুড়ি, দেবর, ননদ, ভাবি, শালা-শালিসহ শ্বশুরবাড়ির অন্য আত্মীয়দের সঙ্গে তালাক-পরবর্তী সম্পর্ক রাখা যাবে কি না- এ নিয়ে পরিবারে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও ধর্মীয় বিধান- দুটোকেই বুঝে বিষয়টি দেখা জরুরি।

পারিবারিক আইনে কী বলা আছে: বাংলাদেশে মুসলিম পারিবারিক বিষয়গুলো পরিচালনা হয় প্রধানত মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১, মুসলিম ফ্যামিলি কোর্টস অর্ডিন্যান্স, ১৯৬১,

মুসলিম ব্যক্তিগত (শরিয়ত) আইন এবং বাংলাদেশের সাধারণ দেওয়ানি আইন অনুযায়ী।

তালাকের সঙ্গে সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক শেষ হয়:  তালাক সম্পন্ন হলে নারী-পুরুষের বৈবাহিক সম্পর্ক আইনগতভাবে শেষ হয়ে যায়। তবে শ্বশুর-শাশুড়ি বা অন্য আত্মীয়দের সঙ্গে রক্তসম্পর্ক তৈরি হয়েছিল এমন নয়; এগুলো ছিল ‘সোশ্যাল ও অ্যাফাইনাল রিলেশন’। তালাকের পর এখানকার আত্মীয়তার কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা থাকে না।

শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা কি নিষিদ্ধ:  না। বাংলাদেশের কোনো পারিবারিক আইন, মুসলিম পারিবারিক আইন বা দেওয়ানি আইনে তালাকের পর শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ, যোগাযোগ বা সামাজিক সম্পর্ক রাখাকে নিষিদ্ধ করা হয়নি।

আইনজীবী মাকসুদা খানম বলেন, “তালাক সম্পর্ক শেষ করে, মানুষে মানুষে সম্পর্ক নয়। তাই যোগাযোগ করা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।”

তবে বাধ্যবাধকতা নেই। যেমন কেউ রাখতে চাইলে আইন বাধা দেয় না, তেমনি আইন কাউকে বাধ্যও করে না যে তালাকের পর শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।

এটি সম্পূর্ণভাবে- উভয় পরিবারের মনোভাব, সামাজিক রীতি, ব্যক্তিগত অনুভূতি এবং সন্তান থাকলে তার কল্যাণ- এসবের ওপর নির্ভর করে।

সন্তান থাকলে আরও কিছু বিষয় গুরুত্বপূর্ণ: অভিভাবকত্ব ও দেখা-সাক্ষাৎ- তালাকের পর সন্তানের অভিভাবকত্ব থাকে সাধারণত মায়ের কাছে, তবে হেফাজত (custody), গার্ডিয়ানশিপ (guardianship), দুটি ভিন্ন বিষয়।

শ্বশুর-শাশুড়ি চাইলে আদালতের মাধ্যমে দেখা-সাক্ষাতের আবেদন করতে পারেন।

(মুসলিম ফ্যামিলি কোর্টস অর্ডিন্যান্স)।

সন্তানের স্বার্থে খালাতো/চাচাতো পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ: পরিবার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন- সন্তানের মানসিক সুস্থতার জন্য দুই পক্ষের দাদা-দাদি বা নানা-নানির সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখা অনেক সময় প্রয়োজন।

ধর্মীয় দিক: ইসলাম কী বলে? ইসলামে তালাক বৈধ হলেও অহংকার-বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ রয়েছে। তালাকের পর শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে যোগাযোগ নিষিদ্ধ নয়।

নারীর জন্য ইদ্দতকালীন সময়ে চলাফেরা/মেলামেশায় কিছু বিধিনিষেধ থাকে- কিন্তু যোগাযোগে নয়। ইদ্দতের পর সামাজিক সম্পর্ক রাখা বা বন্ধ করা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।

সম্পর্ক রাখলে কি আইনগত কোনো সমস্যা হয়? :  না, আইনগত কোনো সমস্যা নেই।

তবে তালাকের পর স্ত্রী-শ্বশুরবাড়ির মধ্যে আর কোনো উত্তরাধিকার সম্পর্ক থাকে না।

অভিযোগ বা হয়রানি: অতিরিক্ত যোগাযোগ বা ব্যক্তিগত সীমা অতিক্রম করলে নারীর বিরুদ্ধে বা পুরুষের বিরুদ্ধে

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, হয়রানি-বিরোধী আইন, অথবা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন প্রযোজ্য হতে পারে।

সামাজিক বাস্তবতা: সম্পর্ক রাখা কতটা যুক্তিসঙ্গত? : সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞরা বলেন- যদি সম্পর্ক সৌহার্দ্যপূর্ণ হয়, বিশেষ করে সন্তান থাকলে বা বহু বছরের পারিবারিক অগ্রাধিকার থাকে, তাহলে কিছু যোগাযোগ বজায় রাখা অনেক সময় মানসিক সুস্থতার জন্য উপকারী।

কিন্তু যদি সম্পর্ক নির্যাতন, অবমাননা বা সংঘাতপূর্ণ হয় বা তালাকের কারণ গুরুতর অভিযোগ তাহলে সম্পর্ক না রাখা ব্যক্তির জন্যই নিরাপদ।

তালাক দুটি মানুষের সম্পর্কের অবসান ঘটালেও সামাজিক সম্পর্ক কখনো সেভাবে কেটে যায় না।

বাংলাদেশের পারিবারিক আইন অনুযায়ী শ্বশুর-শাশুড়ি, দেবর-ননদ, শালা-শালি-সবার সঙ্গেই তালাকের পর যোগাযোগ রাখা সম্পূর্ণ বৈধ, তবে এটি ব্যক্তিগত পছন্দ ও পরিবার–পরিস্থিতি নির্ভর সিদ্ধান্ত।

আইনজীবীদের মতে, ‘তালাক আইনি সম্পর্ক শেষ করে, মানুষের সামাজিক সম্পর্ক নয়। কার সঙ্গে সম্পর্ক রাখবেন- এ সিদ্ধান্ত আইন নয়, মানবিকতা ও বাস্তবতা ঠিক করে।’

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

আইন ও আদালত আইনি প্রশ্ন ও উত্তর

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর