Logo

আইন ও বিচার

ঢাকার আদালতপাড়ায় মিলছে ‘ভুয়া জামিনদার’

Icon

মাসুম আহম্মেদ

প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:০০

ঢাকার আদালতপাড়ায় মিলছে ‘ভুয়া জামিনদার’

ঢাকার আদালতপাড়ায় দীর্ঘদিন ধরেই গোপনে সক্রিয় একটি চক্র টাকার বিনিময়ে ভুয়া জামিনদার সরবরাহ করছে। এই সিন্ডিকেট আদালতের ভিড়ে মিশে বিভিন্ন মামলার আসামির পক্ষে নিজেদেরকে ‘জামিনদার’ পরিচয়ে হাজির করে। কিন্তু ব্যবহার করে জাল এনআইডি, ভুয়া নাম-ঠিকানা এবং ভুয়া স্বাক্ষর। ফলে জামিনে বের হওয়া আসামিদের খুঁজে না পাওয়া গেলে আইনি ঝামেলায় পড়েন আসল আইনজীবীরা, এমনকি মামলার সত্যিকারের তদারকি প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হয়।

আদালত সূত্র ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে গতকাল কথা বলে জানা যায়, চক্রের সদস্যরা আদালতপাড়ায় অবস্থান করে মামলার আসামি বা তাদের স্বজনদের প্রলোভন দেখায়। 

জামিনদাতা খুঁজে না পেলে তারা ‘সমস্যা সমাধানের’ আশ্বাস দেয়। একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের ঘুষ বা কমিশনের বিনিময়ে সরবরাহ করে ভুয়া জামিনদার। ভুয়া এনআইডি ব্যবহার করে আদালতের নথিতে স্বাক্ষর করে চক্রের সদস্যরা। আসামি পলাতক হলে বা আদালতে হাজির না হলে ওই ‘জামিনদার’ খোঁজ আর কোথাও মেলে না। এতে আদালতের প্রক্রিয়া জটিল হয়ে পড়ে এবং তদন্তের স্বার্থও ব্যাহত হয়।

ঢাকা বারের এক সিনিয়র আইনজীবী বাংলাদেশের খবরকে অভিযোগ করে বলেন, “জামিনের দরখাস্তে যাদের নিয়ে আসা হয়, তাদের আসল পরিচয় শেষ পর্যন্ত পাওয়া যায় না। আসামি পলাতক হলে দায় এসে পড়ে আইনজীবীর ওপর। পুলিশ, আদালত সবাই আইনজীবীর কাছে জানতে চান স্থানীয় জামিনদার কোথায়।” আরেক আইনজীবী মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, “অনেক সময় আমরা চাপের মুখে পড়ে যাই। সঠিক তথ্য না জেনে জামিনদার দাঁড় করানো হলে পুরো মামলাটাই ঝুঁকিতে পড়ে।” 

ঢাকার আদালতপাড়ায় দায়িত্বরত এক পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “এ ধরনের চক্র বেশ কিছুদিন ধরে সক্রিয়। কিছু ক্ষেত্রে ভুয়া এনআইডি উদ্ধার হয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি। বিষয়টি নিয়ে পৃথক তল্লাশি ও নজরদারি চলছে। তিনি আরও জানান, ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে এনআইডির সত্যতা যাচাই করা হলে এ ধরনের জালিয়াতি অনেকাংশে ঠেকানো সম্ভব। 

জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, “ডিজিটাল ভেরিফিকেশন সেবা এখন অনেক সহজলভ্য।  আদালত, আইনজীবী বা নথিভুক্তি কর্মকর্তারা চাইলে খুব সামান্য সময়েই এনআইডি নম্বর যাচাই করে নিতে পারেন। এতে ভুয়া তথ্য ব্যবহার কঠিন হয়ে পড়বে।” 

এক এনআইডি সাইবার বিশেষজ্ঞ বলেন, “ভুয়া এনআইডি সাধারণত পুরনো ডিজাইনের কার্ড বা স্ক্যান কপি থেকে তৈরি হয়। বর্তমান স্মার্ট আইডি জাল করা কঠিন। আদালতে স্মার্ট আইডি যাচাই বাধ্যতামূলক করা জরুরি।” বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী ও আদালত সংশ্লিষ্টদের অভিমত- জামিনদার হিসেবে যেকোনো নাগরিক দাঁড়ালে তার জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটালি যাচাই করা উচিত।

এতে ভুয়া পরিচয় ব্যবহার কঠিন হবে, আইনজীবীরা নিরাপদ থাকবেন, আদালতের কার্যক্রম স্বচ্ছ হবে, আসামিকে আদালতে হাজির করানো সহজ হবে।

ঢাকা বারের এক নেতা বলেন, “ডিজিটাল ভেরিফিকেশন বাধ্যতামূলক না হলে এই সমস্যা কমবে না।  আমরা শিগগিরই আদালত প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসার পরিকল্পনা করছি।” ঢাকার আদালতপাড়ায় ‘ভুয়া জামিনদার’ চক্র কেবল আর্থিক প্রতারণাই নয়- মামলার স্বচ্ছতা, ন্যায়বিচার ও আইনি প্রক্রিয়াকে বিপন্ন করছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য আদালত পর্যায়ে ডিজিটাল আইডি যাচাই এখন সময়ের দাবি।

বিকেপি/এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

আইন ও আদালত

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর