মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের ফেরাতে কোন পথে অগ্রসর ঢাকা?
আইন ও আদালত ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:১৫
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত প্রত্যর্পণ চুক্তি (ঊীঃৎধফরঃরড়হ ঞৎবধঃু) দুই দেশের বিচারব্যবস্থার সহযোগিতা জোরদার করলেও বাস্তবে এর প্রয়োগ নির্ভর করে আইনি প্রক্রিয়া, মানবাধিকার বিবেচনা ও কূটনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত একাধিক আসামির ভারত পালিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গ আলোচনায় আসায় দুই দেশের এই চুক্তি নতুন করে গুরুত্ব পেয়েছে।
চুক্তির মূল কাঠামো :
ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশ অপরাধে অভিযুক্ত বা দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে একে-অপরের কাছে ফেরত পাঠাতে পারে। চুক্তির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো যে অপরাধের জন্য প্রত্যর্পণ চাওয়া হচ্ছে, তা দুই দেশের আইনে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত হতে হবে।
প্রত্যর্পণযোগ্য অপরাধ সাধারণত উভয় আইনে গুরুতর- যার জন্য নির্দিষ্ট মাত্রার শাস্তি নির্ধারিত। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপরাধ হলে রাষ্ট্র চাইলে অনুরোধ নাকচ করতে পারে। তবে হত্যা, বিস্ফোরক ব্যবহারের মতো গুরুতর অপরাধ রাজনৈতিক ব্যতিক্রমের আওতায় ধরা হয় না।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, সাক্ষ্য-প্রমাণ, আইনি নথি, রায়ের কপি- এসব যুক্তিসহ অনুরোধ পাঠাতে হয়। ন্যায্য বিচার নিশ্চিত না হওয়া বা ‘অত্যাচারমূলক পরিস্থিতির আশঙ্কা’ থাকলে অনুরোধ প্রত্যাখ্যানের অধিকার থাকে অনুরোধপ্রাপ্ত দেশের হাতে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি প্রত্যর্পণে দ্বিধা :
আইনগতভাবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকেও প্রত্যর্পণের অনুরোধ করা সম্ভব- চুক্তিতে এর নিষেধাজ্ঞা নেই। কিন্তু বাস্তবে অনেক দেশ মৃত্যুদণ্ডের সম্ভাবনায় সতর্কতা অবলম্বন করে।
ভারতও সাধারণত মানবাধিকার ও ন্যায্য বিচার সম্পর্কিত নিশ্চিতকরণ চায়।
যেমন- অভিযুক্ত ন্যায্য বিচার পাবেন কিনা, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়ে বিশেষ সরকারি আশ্বাস প্রদান করা হবে কিনা, কারাগারের অবস্থাসহ অন্য মানবিক বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করছে কিনা।
বাংলাদেশ যদি এসব ক্ষেত্রে স্পষ্ট ও শক্তিশালী নিশ্চয়তা দিতে পারে, তবেই প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক অগ্রগতি সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ থেকে কয়েকজন উচ্চ-প্রোফাইল দণ্ডপ্রাপ্ত ও অভিযুক্ত ব্যক্তি ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত, কেউ জীবনদণ্ড বা গুরুতর অপরাধে দণ্ডিত।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, এসব মামলায় ভারতের সঙ্গে তথ্য-বিনিময়, পরিচয় যাচাই, প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রেরণ এবং ইন্টারপোল নোটিশ জারি করা হয়েছে। তবে প্রত্যর্পণের প্রকৃত সিদ্ধান্ত ভারতের আদালত ও কেন্দ্রীয় সরকারের যৌথ বিবেচনায় গৃহীত হয়।
কী করতে পারে বাংলাদেশ? :
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্যকর প্রত্যর্পণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের উচিত সম্পূর্ণ ও শক্তিশালী মামলা-ফাইল জমা দেওয়া, ভারতের চাহিদা অনুযায়ী বিশেষ আশ্বাস প্রদান, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক যোগাযোগ জোরদার রাখা, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ন্যায্য বিচার ও মানবাধিকার রক্ষার নিশ্চয়তা প্রদর্শন। প্রয়োজন হলে পারস্পরিক আইনি সহায়তা (গখঅ) ব্যবহারের পথ নেয়া।
ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তি দুই দেশের আইনগত সহযোগিতার শক্ত ভিত্তি তৈরি করলেও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিকে ফেরানো একান্তই জটিল ও কেসভেদে ভিন্নধর্মী। আইনি প্রস্তুতি, মানবাধিকার নিশ্চয়তা এবং কূটনৈতিক সুসম্পর্ক- এই তিন স্তম্ভই নির্ধারণ করবে কোনো বাংলাদেশি দণ্ডিত আসামিকে ভারত থেকে ফেরত আনা সম্ভব হবে কি না।
বিকেপি/এমবি

