Logo

আইন ও বিচার

বিয়ে ভাঙাতে হস্তক্ষেপ আইন অমান্যের পরিণতি

Icon

আইন ও আদালত ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:২১

বিয়ে ভাঙাতে হস্তক্ষেপ আইন অমান্যের পরিণতি

দেশে পরিবার শুধু একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান নয়- এটি আমাদের সংস্কৃতি, সম্পর্ক, দায়িত্ব ও মূল্যবোধের ভিত্তি। সেই পরিবারে যদি ইচ্ছাকৃতভাবে হস্তক্ষেপ করা হয়, কারো বিবাহ ভাঙতে প্ররোচনা দেওয়া হয়, অথবা প্রথম বিবাহ লুকিয়ে নতুন বিবাহ করা হয়- তবে তা শুধু নৈতিক লঙ্ঘন নয়, সরাসরি আইন ভঙ্গের শামিল।

তবুও দুঃখজনকভাবে, আমাদের সমাজে এখনো কিছু মানুষ মনে করেন যে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বৃত্তে যা ঘটে তা আইনের আওতায় আসে না।

বাস্তবে পরিস্থিতি ভিন্ন। দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর একাধিক ধারা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেয়- কারো দাম্পত্য জীবনে অবৈধ হস্তক্ষেপ, প্রতারণা, বা ব্যভিচার অপরাধ এবং এসবের জন্য কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। ধারা ৪৯৪-তে দ্বিতীয় বিবাহের অপরাধে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড; ধারা ৪৯৫-এ প্রথম বিবাহ গোপন রাখলে দশ বছর পর্যন্ত শাস্তি; ধারা ৪৯৭-এ ব্যভিচারের জন্য পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান- এসবই প্রমাণ করে যে পরিবারকে রক্ষায় রাষ্ট্র কতটা কঠোর।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- আইন আছে, তাহলে সমস্যা রয়ে যায় কেন? প্রথমত, আইন সচেতনতার অভাব ভয়াবহ। অধিকাংশ মানুষ জানেই না কোন কাজটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। আর জানলেও সামাজিক লজ্জা, পারিবারিক চাপ বা বিচার ব্যবস্থার ধীরগতির কারণে অনেকেই আইনি পদক্ষেপ নেন না।

দ্বিতীয়ত, বিবাহ নিবন্ধন না করার প্রবণতা বহু মামলায় প্রমাণ সংগ্রহকে জটিল করে তোলে। তৃতীয়ত, কিছু ধারা- বিশেষত ৪৯৭- আজকের যুগে লিঙ্গসমতার মানদণ্ডে প্রশ্নের মুখে পড়ে। তারও বাইরে রয়েছে সামাজিক বাস্তবতা- প্ররোচনা, ফুসলানি বা প্রতারণার মাধ্যমে অন্যের সংসার ভেঙে দেওয়ার ঘটনাগুলো অনেক সময় লুকিয়ে থাকে, দেখা যায় না; কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত নারী বা পুরুষের জীবনে তার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে ধ্বংসাত্মক। ভাঙা সংসার শুধু দু’জন মানুষের নয়- সমাজের নৈতিক কাঠামোকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে।

এ পরিস্থিতিতে জরুরি হচ্ছে আইনি শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি, বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলকভাবে বাস্তবায়ন, ভুক্তভোগীদের জন্য সহজলভ্য আইনি সহায়তা এবং পুরনো অসামঞ্জস্যপূর্ণ আইনগুলোকে আধুনিক সমাজের মানে পুনর্গঠন।

রাষ্ট্রের উচিত এমন এক পরিবেশ নিশ্চিত করা, যেখানে পরিবার একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে গুপ্ত প্রতারণা, অনৈতিক সম্পর্ক কিংবা আইনি লঙ্ঘনের ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকবে। আর নাগরিকদের দায়িত্ব- অন্যের দাম্পত্য সম্পর্ককে সম্মান করা এবং আইনকে শ্রদ্ধা করা। বিয়ে ভাঙানোর মতো সংবেদনশীল অপরাধ শুধু একটি পরিবারকে ধ্বংস করে না; তা ধীরে ধীরে সমাজের নৈতিক ভিত্তিকে ক্ষয় করে। তাই এখন সময় এসেছে- এই অপরাধকে “ব্যক্তিগত বিষয়” ভাবার মানসিকতা পরিত্যাগ করার এবং আইন ও নৈতিকতার সমন্বয়ে একটি সুষ্ঠু সমাজ গড়ে তোলার।

বিকেপি/এমবি

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

আইন ও আদালত

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর