Logo

আইন ও বিচার

গাড়ি তল্লাশিতে হয়রানি, নাগরিক অধিকার কি সুরক্ষিত?

Icon

আইন ও আদালত ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৪৪

গাড়ি তল্লাশিতে হয়রানি, নাগরিক অধিকার কি সুরক্ষিত?

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের ‘বিনা কারণেই’ গাড়ি থামানো, তল্লাশি চালানো এবং যাত্রী— চালকদের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করার অভিযোগ দিন দিন বাড়ছে। সাধারণ মানুষ বলছেন, অনেক সময় আইনগত কোনো ভিত্তি ছাড়াই তল্লাশির নামে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে তাদের। প্রশ্ন উঠছে—  আইন কি বলে, নাগরিকের অধিকার কোথায়, আর পুলিশি ক্ষমতার সীমা কতটুকু?

অভিযোগ:

 “যে কারণে থামানো হলো, সেই কারণ দেখাতে পারেনি পুলিশ”

ঢাকার বিভিন্ন সড়কে যাত্রীবাহী গাড়ি, রাইডশেয়ার, প্রাইভেট কার এমনকি মোটরসাইকেলও হঠাৎ থামিয়ে ব্যাগ চেক, ট্রাঙ্ক খুলে দেখা, মোবাইল ঘাঁটা—  এমন অভিযোগ নিয়মিতই পাওয়া যাচ্ছে।

মিরপুরের এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, “গাড়ি থামিয়ে ধমক দিলেন, কাগজপত্র ঠিক আছে জানার পরও ব্যাগ খুলে সব বের করে দেখলেন। কোনো কারণ বলতে পারলেন না। প্রতিবাদ করলে আরও রূঢ় ব্যবহার করলেন।”

এমন অভিজ্ঞতার বর্ণনা পাওয়া গেছে আরও বহু যাত্রীর কাছ থেকে।

আইন কী বলে? :

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশ আইন, সংবিধান ও ফৌজদারি কার্যবিধি-  সব মিলিয়ে ট্রাফিক পুলিশের ক্ষমতা সীমিত। কোনো অপরাধের যুক্তিসঙ্গত সন্দেহ, চলমান অপরাধ, জরুরি নিরাপত্তা ঝুঁকি, বা আইনগত কারণ ছাড়া পুলিশের তল্লাশি চালানো বেআইনি।

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৩ নাগরিককে অবৈধ অনুসন্ধান ও তল্লাশি থেকে সুরক্ষা দেয়। ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১৬৫ কেবল নির্দিষ্ট শর্তে এবং লিখিত কারণ প্রদানের বাধ্যবাধকতায় তল্লাশির অনুমতি দেয়।

Police Regulations, Bengal (1943)–এ স্পষ্ট বলা আছে, “General searches without warrant are illegal”।

বিনা কারণ তল্লাশি চালানো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিধানও রয়েছে।

আইনজীবীরা বলছেন, “ট্রাফিক পুলিশ রুটিন চেকপোস্টে সাধারণ কাগজপত্র পরীক্ষা করতে পারে; কিন্তু গাড়ি বা ব্যক্তিগত জিনিসপত্র তল্লাশি করতে হলে আইনি ভিত্তি থাকা বাধ্যতামূলক। শুধু ‘আমি পুলিশ’- এটাই যথেষ্ট নয়।”

আইন অনুযায়ী, কেউ যদি মনে করেন তিনি অকারণে তল্লাশি বা হয়রানির শিকার হয়েছেন, তাহলে  দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যের নাম, আইডি নম্বর, ইউনিট নোট করে রাখতে পারেন। ঘটনাস্থলের সময়, স্থান, সাক্ষী, ভিডিও/অডিও রেকর্ড সংগ্রহ করতে পারেন (যদি নিরাপদ হয়)। নিকটস্থ থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে পারেন।

প্রয়োজনে হাইকোর্টে রিট করা যায়, কারণ এটি মৌলিক অধিকার সংশ্লিষ্ট বিষয়।

আইনগত সহায়তার জন্য বৈধ সহায়তা সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠনে যোগাযোগ করতে পারেন।

পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, “যানবাহনে অপরাধ বা মাদক পরিবহনের প্রবণতা বাড়ায় আমরা অনেক সময় চেকিং জোরদার করি।

তবে যারা দায়িত্বের বাইরে গিয়ে হয়রানি করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।”

তবে সাধারণ মানুষ বলছেন, চেকপোস্টে বা রাস্তায় তল্লাশি যতটাই প্রয়োজনীয় হোক, বিনা কারণে কারও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র পরীক্ষা করা তাদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন।

মানবাধিকার কর্মীদের মতে, তল্লাশি ও চেকিং সম্পর্কিত পরিষ্কার নীতিমালা জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। প্রতিটি তল্লাশির সময় বডিক্যাম বাধ্যতামূলক করা উচিত। নাগরিকদের জন্য সহজ অভিযোগ প্রক্রিয়া তৈরি করতে হবে।

পুলিশ সদস্যদের অধিকারবোধ ও আচরণবিধি সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ বাড়ানো জরুরি।

ঢাকা যস আদালতের সিনিয়র আইনজীবী জুল হক বলেন, রাস্তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পুলিশের দায়িত্ব, কিন্তু সেই দায়িত্ব পালনের সময় নাগরিকের মর্যাদা, গোপনীয়তা ও অধিকার রক্ষা করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।

বিনা কারণে তল্লাশির নামে হয়রানির অভিযোগ নিয়মিতই শোনা যাচ্ছে-  যা আইনের লঙ্ঘন এবং নাগরিকদের মধ্যে অবিশ্বাস বাড়াচ্ছে।

প্রশ্ন রয়ে যায়- রাস্তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে কি আমাদের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হতে থাকবে? নাকি আইন ও শৃঙ্খলা বাহিনী এবং সাধারণ মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে উঠবে দায়িত্বশীল ও অধিকারসম্মত তল্লাশি পদ্ধতি?

বিকেপি/এমবি 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

আইন ও আদালত

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর