Logo

আইন ও বিচার

আইনগত ভিত্তি ও বর্তমান প্রবণতা

Icon

আইন ও আদালত ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৫৯

আইনগত ভিত্তি ও বর্তমান প্রবণতা

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আগাম জামিন (anticipatory bail) নিয়ে আইনগত ব্যাখ্যা, বিচারিক প্রয়োগ নতুনভাবে গুরুত্ব পেয়েছে। হাইকোর্ট, আপিল বিভাগ ও আইনজীবী মহলে এ বিষয়ে নানামুখী আলোচনা চলছে। ‘আগাম জামিন’ হলো এমন একটি বিশেষ প্রতিকার, যেখানে গ্রেফতারের আশঙ্কায় কোনো ব্যক্তি গ্রেফতার হওয়ার আগে আদালতের কাছে জামিন প্রার্থনা করতে পারেন।

বাংলাদেশের ফৌজদারি কার্যবিধিতে ‘anticipatory bail’ শব্দটি সরাসরি নেই; তবে ধারা ৪৯৮-এর মাধ্যমে হাইকোর্ট ও দায়রা আদালত ‘inherent power’ ব্যবহার করে এ ধরনের জামিন প্রদান করে থাকে। সুপ্রিম কোর্টের ভাষ্যমতে, আগাম জামিন অসাধারণ ও ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিকার। সাধারণ পরিস্থিতির বদলে কেবল বিশেষ অবস্থায় এটি মঞ্জুরযোগ্য।

আইনগত ভিত্তি ও আদালতের বিবেচ্য বিষয় : বাংলাদেশে আগাম জামিনের আইনগত ভিত্তি মূলত ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪৯৮, যেখানে আদালতকে ‘জামিন মঞ্জুরের সাধারণ ক্ষমতা’ দেয়া আছে। এই অধিকারকে আদালতের অন্তর্নিহিত বিচারিক ক্ষমতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

জামিন নির্ধারণের ক্ষেত্রে আদালত প্রধানত বিবেচনা করে- অভিযোগের প্রকৃতি, পলায়নের সম্ভাবনা, গ্রেপ্তার হলে মর্যাদা বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কা, মামলা রাজনৈতিক বা প্রতিহিংসাপরায়ণ কিনা, তদন্তে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি ইত্যাদি। অনেক ক্ষেত্রে আদালত শর্ত আরোপ করেন- যেমন তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে সহযোগিতার নির্দেশ, সাক্ষী প্রভাবিত না করার আদেশ, বা নির্দিষ্ট তারিখে আত্মসমর্পণের নির্দেশ। 

সাম্প্রতিক প্রবণতা : আগাম জামিনে কঠোরতা বৃদ্ধি- সাম্প্রতিক সময়ে হাইকোর্ট আগাম জামিন আবেদনে তুলনামূলক কঠোর অবস্থান গ্রহণ করছে। গুরুতর অভিযোগ বা জটিল মামলায় অনেক আবেদন নাকচ হওয়ার কারণে আইনজীবী মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

আইনজীবীরা মনে করেন, আপিল বিভাগের কিছু সিদ্ধান্ত হাইকোর্টের আগাম জামিন প্রদানের ক্ষমতাকে সংকুচিত করছে, যদিও সংবিধান ও আইন হাইকোর্টকে বিস্তৃত ক্ষমতা প্রদান করে। এই অবস্থার কারণে সাধারণ নাগরিক থেকে রাজনৈতিক কর্মী সবাই আইনি জটিলতার মুখে পড়তে পারেন বলে মত দিয়েছেন তারা।

আগাম জামিন কেন গুরুত্বপূর্ণ : আইনজীবীদের মতে, আগাম জামিন মিথ্যা মামলা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, সামাজিক বিরোধ বা ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে অযৌক্তিক গ্রেপ্তার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। অনেক ক্ষেত্রে গ্রেপ্তারের আগে আদালতের আশ্রয় নেয়া ব্যক্তির মানবিক নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য হয়ে ওঠে। তারা মনে করেন, এই প্রতিকার সীমিত হয়ে গেলে ‘ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার’ (access to justice) বিপন্ন হতে পারে।

আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন আগাম জামিনের বিষয়ে সুস্পষ্ট আইন প্রণয়ন প্রয়োজন, আদালতের সিদ্ধান্তে আরও স্বচ্ছতা দরকার, গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে পুলিশকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে, অযৌক্তিক ও প্রতিহিংসামূলক মামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধী ব্যবস্থা গঠন করা উচিত। আগাম জামিন বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় একটি মানবাধিকারভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

যদিও এটি একটি বিশেষ সুবিধা, তবু গ্রেপ্তার ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে এটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। সাম্প্রতিক সময়ে আদালতের কঠোরতা এবং আইনজীবী মহলের উদ্বেগ এই প্রশ্নকে আরও প্রাসঙ্গিক করেছে যে- এই আইনি প্রতিকারকে কীভাবে আরও ন্যায়সঙ্গত, সহজপ্রাপ্য ও মানবিক করা যায়।

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

আইন ও আদালত

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর