নারী কর্তৃক পুরুষ নির্যাতন; আইনি প্রতিকার কী?
আইন ও আদালত ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:২৫
বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার খবর প্রায়ই শিরোনাম হয়, কিন্তু একজন পুরুষ কোনো নারীর দ্বারা নির্যাতনের শিকার হলে তার আইনি প্রতিকার কী- এ প্রশ্নটি সমাজে তেমন আলোচিত নয়। বাস্তবে, নারী-পুরুষ উভয়েই আইনের কাছে সমান।
তাই একজন পুরুষও যদি কোনো নারীর দ্বারা শারীরিক, মানসিক, আর্থিক বা সামাজিক নির্যাতনের শিকার হন, তবে তিনি আইন অনুযায়ী মামলা করতে পারেন এবং তার সুরক্ষার অধিকার রয়েছে।
আইনজীবীরা জানান, বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন বিশেষভাবে নারীর সুরক্ষার জন্য তৈরি হলেও পুরুষ নির্যাতিত হলে তিনি ফৌজদারি আইনের বিভিন্ন ধারায় মামলা করতে পারেন। এ আইনগুলো নারী কিংবা পুরুষ- উভয়ের জন্য প্রযোজ্য।
শারীরিক হামলা বা আঘাত করলে কোন মামলা করা যাবে : যদি কোনো নারী পুরুষকে মারধর করেন, অস্ত্র দ্বারা আঘাত করেন বা জীবননাশের হুমকি দেন, তবে নিন্মোক্ত ধারায় মামলা করা সম্ভব- দণ্ডবিধি ধারা ৩২৩, ৩২৪, ৩২৫- শারীরিক আঘাত, ধারা ৩০৭- হত্যার চেষ্টা, ধারা ৩৫২- আচমকা আক্রমণ বা হামলা, ধারা ৫০৬- হুমকি বা ভয়ভীতি প্রদর্শন। এসব মামলা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) এবং পরবর্তীতে এজাহার দায়েরের মাধ্যমে শুরু করা যায়।
মানসিক অত্যাচার বা ব্ল্যাকমেইল হলে আইনি ব্যবস্থা : বর্তমান যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুমকি, ব্ল্যাকমেইল, মানহানি বা ব্যক্তিগত ছবি-ভিডিও ব্যবহার করে প্রতারণা প্রায়ই দেখা যায়। এসব ক্ষেত্রে পুরুষও নিন্মোক্ত আইনে মামলা করতে পারেন- ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (ডিএসএ)- ব্ল্যাকমেইল, অশ্লীল বার্তা, সাইবার হুমকি, দণ্ডবিধি ধারা ৫০০-৫০৪-মানহানি, গালি, অপমান ব্যক্তিগত ছবি ছড়িয়ে দেয়া- সাইবার অপরাধ হিসেবে শাস্তিযোগ্য।
সম্পত্তি বা অর্থ নিয়ে প্রতারণার ক্ষেত্রে মামলা : যদি কোনো নারী পুরুষকে আর্থিকভাবে প্রতারণা করেন বা টাকা হরণ করেন, তবে- ধারা ৪০৬, ৪২০- বিশ্বাস ভঙ্গ ও প্রতারণা, ধারা ৩৭৯ চুরি, ব্যাংকিং/মোবাইল ফিন্যান্সে প্রতারণা হলে সাইবার অপরাধের ধারাও প্রযোজ্য।
যৌন হয়রানি বা জোরপূর্বক আচরণের ক্ষেত্রে আইন কী? : আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে ধর্ষণ সংক্রান্ত আইনে ভুক্তভোগী সাধারণত নারী হিসেবে বিবেচিত হলেও পুরুষ যৌন হয়রানি, জবরদস্তিমূলক স্পর্শ বা অনাকাক্সিক্ষত যৌন আচরণের শিকার হলে মামলার সুযোগ রয়েছে- ধারা ৫০৯ : শ্লীলতাহানি, ধারা ৩৫৪ : শক্তি প্রয়োগ করে লজ্জাস্থান হানি, বিদ্যালয়, কর্মক্ষেত্র বা সংগঠনে যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ই একই নীতির আওতাভুক্ত।
নির্যাতিত পুরুষের অধিকার কী? : আইনের দৃষ্টিতে পুরুষের অধিকার নারীর মতোই সমান- থানায় অভিযোগ দায়েরের পূর্ণ অধিকার, নিরাপত্তা চাইলে পুলিশ প্রটেকশন পাওয়ার সুযোগ, আদালতে প্রতিকার চান্স, সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা অধিদপ্তরে অভিযোগ, চিকিৎসা, মেডিকেল রিপোর্ট গ্রহণের অধিকার। প্রয়োজন হলে ৯৯৯ জরুরি সেবা পাওয়ার অধিকার। ঢাকা কোর্টের আইনজীবী কে এম খাইরুল আলম ও আব্দুস সালাম মিয়া বাংলাদেশের খবরকে বলেন, “আইন কখনোই ভিকটিমকে নারী বা পুরুষ দেখে না, দেখে অপরাধ ও ভিকটিমের ক্ষতি। তাই পুরুষ নির্যাতনের শিকার হলে নিশ্চিন্তে আইনগত সুরক্ষা চাইতে পারে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা অনেকটাই অঘোষিত। সামাজিক লজ্জা, হাসাহাসি, অবজ্ঞা বা ‘পুরুষ হয়ে অভিযোগ করবে?’- এ ধারণা পুরুষকে অভিযোগ করতে নিরুৎসাহিত করে।
এর ফলে অনেক অপরাধ ঢাকা পড়ে যায় এবং নির্যাতনকারী আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। আইনের চোখে নারী-পুরুষ উভয়েই সমান নাগরিক। কোনো নারী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হলে পুরুষের প্রতিকার পাওয়ার পথ খোলা। শারীরিক, মানসিক বা আর্থিক- যে কোনো ধরনের নির্যাতন হলে থানায়, আদালতে এবং সাইবার কর্তৃপক্ষে অভিযোগ করা যায়। সমাজের ধারনা বদলানো এবং ভিকটিমকে ভিকটিম হিসেবেই দেখা- এটাই সময়ের দাবি।

