ওসিয়াতনামার চেয়ে দানপত্র বেশি কার্যকর
আইনি স্থায়িত্বে জনপ্রিয়তা বাড়ছে দানপত্রের
আইন ও আদালত ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৫
সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে দানপত্র দলিল (এরভঃ উববফ) ও ওসিয়াতনামা (ডরষষ) উভয়ই স্বীকৃত আইনি নথি। তবে কার্যকারিতা, প্রয়োগ ও আদালতে গ্রহণযোগ্যতার দিক থেকে দানপত্র দলিল অধিক কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য- সম্প্রতি আইন বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ ও নথিপত্র পর্যালোচনায় এমন সুনির্দিষ্ট তথ্য উঠে এসেছে। দানপত্রের কার্যকারিতা তৎক্ষণাৎ, ওসিয়াতনামার কার্যকারিতা মৃত্যুর পর আইন বিশেষজ্ঞদের মতে- দানপত্র নিবন্ধনের পরপরই কার্যকর হয়, অর্থাৎ দাতা জীবিত অবস্থায়ই সম্পত্তির মালিকানা গ্রহীতার নামে হস্তান্তর সম্পন্ন হয়। ওসিয়াতনামা কার্যকর হয় কেবল মৃত্যুর পর, এবং মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে এর কার্যকারিতা বিলম্বিত হয়।
বাংলাদেশের আইনজীবীদের একটি অনানুষ্ঠানিক সমীক্ষা (২০২৩) অনুসারে- মৃত্যুর পর সম্পত্তি নিয়ে মামলার ৬২% ক্ষেত্রে ওসিয়াতনামা নিয়ে বিরোধ দেখা যায়, পক্ষান্তরে দানপত্র ভিত্তিক বিরোধের হার মাত্র ১৭%, যা কার্যকারিতা ও নির্ভরযোগ্যতার পার্থক্য স্পষ্ট করে।
নিবন্ধন ও প্রমাণিকতার দিক থেকে দানপত্র অধিক শক্তিশালী : আইন অনুযায়ী- দানপত্র দলিল নিবন্ধন বাধ্যতামূলক, ফলে এটি সরকারি রেকর্ডে সংরক্ষিত থাকে। ওসিয়াতনামা নিবন্ধন করা গেলেও তা বাধ্যতামূলক নয়, ফলে এটি সহজে চ্যালেঞ্জযোগ্য হয়। জজ কোর্টে সম্পত্তি সংক্রান্ত মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী এ কে আজাদ জানান- “নিবন্ধিত দানপত্র আদালতে শক্ত প্রমাণ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। অন্যদিকে অসংখ্য ওসিয়াতনামা সত্যতা যাচাইয়ের পর্যাপ্ত সাক্ষ্য না পাওয়ায় বাতিল হয়ে যায়।”
বিরোধের সম্ভাবনা কম দানপত্রে, বেশি ওসিয়াতনামায় : সম্পত্তি বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণে দেখা যায়- দানপত্রে দাতার স্বেচ্ছা ইচ্ছা, উপস্থিত সাক্ষী এবং রেজিস্ট্রার অফিসে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া স্পষ্ট থাকে। তাই বিরোধের সুযোগ কম।
ওসিয়াতনামায় মৃত ব্যক্তির ইচ্ছা প্রমাণ করা অনেক সময় কঠিন হয়, ফলে সহোদর বা উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয় অধিকমাত্রায়।
প্রাপককে তাৎক্ষণিক মালিকানা নিশ্চিত করে দানপত্র। দানপত্র দলিলের আরেকটি বড় সুবিধা হলো- সম্পত্তি গ্রহীতা মালিকানার স্বত্বে দ্রুত নামজারি (মিউটেশন) করতে পারে।
ফলে তাকে কর, ভাড়া, খাজনা ইত্যাদি আইনগত লেনদেন করতে আর বাধা থাকে না। অন্যদিকে ওসিয়াতনামা কার্যকর করতে অনেক সময় প্রবেট বা লিগ্যাল হেয়ারসিপ প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয়, যা সময়সাপেক্ষ।
কেন দানপত্র এখন আরও জনপ্রিয়? : আইনজীবী ও নথিপত্র বিশেষজ্ঞদের সার্বিক মতামত- তাৎক্ষণিক কার্যকারিতা, নিবন্ধনের কারণে অধিক প্রমাণিকতা,মামলা-মোকদ্দমার ঝুঁকি কম, নামজারি ও হস্তান্তর সহজ, পারিবারিক বিরোধ এড়ানো যায়- এসব কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দানপত্র দলিলের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে বলে নথিপত্র অফিস সূত্রে জানা যায়।
ওসিয়াতনামা নিঃসন্দেহে একটি বৈধ ও স্বীকৃত আইনি নথি। তবে প্রয়োগযোগ্যতা, প্রমাণিকতা এবং বিরোধ এড়ানোর দিক থেকে দানপত্র দলিল বর্তমানে অধিক কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য।

