রাষ্ট্রপক্ষের মামলায় বাদীর ব্যক্তিগত আইনজীবী নিয়োগের সিদ্ধান্ত
আইন ও আদালত ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:২৩
বাংলাদেশে সাধারণত ফৌজদারি (ক্রিমিনাল) মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ (প্রসিকিউশন) আদালতে প্রধানভাবে দায়িত্ব পালন করে। রাষ্ট্রকে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য বিশেষ সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত আইনজীবী হয়। যেমন- পাবলিক প্রসিকিউটর বা অ্যাসিস্ট্যান্ট পাবলিক প্রসিকিউটর।
কিন্তু সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে কিছু বিশেষ মামলায়, বিশেষ করে ধর্ষণ, নারী-শিশু নির্যাতন বা ভিকটিম-অভিযোগভিত্তিক অপরাধে- ভুক্তভোগী বা অভিযোগকারী (বাদী) ব্যক্তিগত আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাইকোর্ট বিভাগ।
এটা raises প্রশ্ন- সাধারণ (non-special) রাষ্ট্র মামলায় কি একই নিয়ম প্রযোজ্য, নাকি সীমাবদ্ধতা আছে?
আইনগত বিধান কি বলে? :
প্রাথমিকভাবে, ফৌজদারি মামলায় Code of Criminal Procedure, ১৮৯৮ (সিআরপিসি) প্রতিপাদ্য আইন। এই আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রই প্রসিকিউশন চালায়, এবং সাধারণত ‘প্রসিকিউশনের আইনজীবী’ হিসেবে নিয়োজিত থাকেন গেজেটেড সরকারি আইনজীবীরা।
পারলে, আদালত বিশেষ অনুমতি দিলে- এমন এক ধারা আছে যেখানে ‘ব্যক্তিগত ব্যক্তি বা আইনজীবী’কে প্রসিকিউশন চালানোর অনুমতি দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু সেটা খুবই সীমিত এবং শুধুমাত্র ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। অর্থাৎ, ধারা ৩০১ (বা সিআরপিসির সংশ্লিষ্ট ধারা- বিভিন্ন জায়গায় ২৪৫/৪৯৫/ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ধারা হিসেবে) অনুযায়ী।
এই ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তিগত আইনজীবী নিয়োজিত হয়, তাহলে সে পাবলিক প্রসিকিউটর বা সরকারের দেওয়া আইনজীবীর নির্দেশনায় কাজ করবে। ব্যক্তিগত আইনজীবীর স্বাধীনভাবে মামলার পুরো প্রসিকিউশন চালানো আইনগতভাবে স্বীকৃত নয়।
সংক্ষেপে, সাধারণ রাষ্ট্র মামলায়, বাদী-পক্ষ বা ভিকটিম বা ব্যক্তি মুখ্যভাবে নিজস্ব আইনজীবী নিয়োগ করলেও, আদালতে পুরো প্রসিকিউশন পরিচালনার অধিকার প্রায় নেই; রাষ্ট্রের নিয়োজিত আইনজীবীই প্রধান প্রসিকিউশন করবে; ব্যক্তিগত আইনজীবীর ভূমিকা সীমিত।
বিশেষ মামলা (যেমন-নারী-শিশু নির্যাতন) এবং হাইকোর্ট নোটিশ
২০২৪ সালের মে মাসে হাইকোর্ট বিভাগ একটি নোটিশ জারি করেছে: যে মামলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এর আওতায়, সেইগুলোর ক্ষেত্রে বাদী (ভুক্তভোগী) ব্যক্তিগত আইনজীবী নিয়োগ করতে পারবেন।
নোটিশে বলা হয়েছে, ফৌজদারি কার্যবিধি (CRPC)- ধারার প্রযোজ্য অংশ অনুযায়ী (৪৯৩ ও ৪৯৫ ধারা)- ভিকটিম বা অভিযোগকারী তার পক্ষে আইনজীবী নিয়োজিত করার সুযোগ রাখে।
এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে মামলার প্রসিকিউশন শুধুই ‘রাষ্ট্র’ বা ‘সরকারি আইনজীবী’র হাতে সীমাবদ্ধ নয়; বাদী-পক্ষও আইনগতভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। এটি আইন ও বিচার ব্যবস্থায় ভিকটিমদের অংশগ্রহণ এবং বিচারপ্রক্রিয়ায় সহজতর করার দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ : সাধারণ (non-special) ফৌজদারি মামলায়- এই জনপ্রচলিত ধারা বা প্র্যাকটিস এখনও স্বীকৃত নয়। অর্থাৎ, শুধু পক্ষান্তরীত মামলা বা বিশেষ আইন অনুযায়ী বাদী-পক্ষে আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ বোধগম্য। যদি ব্যক্তিগত আইনজীবী নিয়োজিত হয়, সাধারণত তার কাজ হবে পাবলিক প্রসিকিউটরকে সহযোগিতা - পুরো প্রসিকিউশন চালানো নয়। এছাড়া, আইনজীবীর সংস্থান, আদালতের অনুমতি, এবং প্রসিকিউশনের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ- এসব কিছুর জটিলতা ও অনভিপ্রায় থাকতে পারে।
বর্তমানে বাংলাদেশে রাষ্ট্রপক্ষের (প্রসিকিউশন) মামলায় সাধারণভাবে বাদী-পক্ষে ব্যক্তিগত আইনজীবীর পূর্ণ নিয়োগ- আইনগতভাবে স্বীকৃত প্রক্রিয়া নয়। তবে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে, বিশেষ করে নারী ও শিশু নির্যাতন জাতীয় মামলায়, বাদী-পক্ষ আইনজীবী নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত ভিকটিমভিত্তিক প্রসিকিউশনে অংশগ্রহণ ও আইনগত সুরক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে ইতিবাচক। তবে সাধারণ অপরাধ-মামলায় এমন সুযোগ এখনও সীমাবদ্ধ।
এনএ

