Logo

আইন ও বিচার

পথ কুকুর বা বিড়াল মেরে ফেললে বাংলাদেশের আইনে কী শাস্তি আছে

Icon

ডিজিটাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:০৮

পথ কুকুর বা বিড়াল মেরে ফেললে বাংলাদেশের আইনে কী শাস্তি আছে

ফাইল ছবি (সংগৃহীত)

পাবনার ঈশ্বরদীতে সদ্যজাত আটটি কুকুরছানাকে বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে হত্যা করার ঘটনা সারাদেশে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। সন্তান হারিয়ে মা কুকুরের ছুটোছুটি এবং আহাজারির ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে অসংখ্যবার শেয়ার হয়েছে।

গত রোববার ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ কোয়ার্টার কমপ্লেক্সের সামনে ঘটে এ ঘটনাটি। ওইদিন রাত থেকেই শুরু হয় মা কুকুরের আহাজারি।

পরদিন সোমবার সকাল থেকেই ওলানভর্তি দুধ নিয়ে সে খাবার খাওয়াতে সদ্যোজাত সন্তানদের খুঁজে এদিক-ওদিক দৌড়াতে থাকে এবং হাহাকার করতে থাকে।

মাত্র সপ্তাহখানেক আগে মা পথকুকুরটি ওই ছানাগুলোর জন্ম দিয়েছিল। কোয়ার্টারের একটি ভবনের নিচেই ছিল জন্মের পর বাচ্চাগুলোর অবস্থান।

দুই দিনের মাথায় মা কুকুরের আর্তনাদ শুনে বিষয়টি তদন্তে নামে উপজেলা প্রশাসন।

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, প্রথমদিন কিছু বুঝতে না পারলেও পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুকুরছানাগুলোকে বস্তায় ভরে পানিতে ডুবিয়ে ফেলা হয়েছে। তিনি ঘটনাটিকে ‘খুবই গর্হিত ও অমানবিক’ বলেও উল্লেখ করেন।

এই সরকারি কর্মকর্তা জানান, কোয়ার্টারের অন্য স্টাফদের কাছে অভিযুক্ত মহিলার ছেলেই জানিয়েছে— সে বাচ্চাগুলোকে বস্তাবন্দি করে পানিতে ফেলেছে। পরে পাশের একটি পুকুর থেকে কুকুরছানাগুলো উদ্ধার করা হয়, তবে তখনই তারা মারা গিয়েছিল।

অভিযুক্ত ব্যক্তি একজন সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী বলে জানা গেছে। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর ওই কর্মকর্তা ও তার পরিবারের কোয়ার্টার বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে।

দুগ্ধবতী মা কুকুরটিকে চিকিৎসার জন্য প্রাণিসম্পদ দপ্তরের আওতায় রাখা হয়েছে।

মনিরুজ্জামান বলেন, বাচ্চা না থাকায় কুকুরটির দুধ জমে ব্যথা ও জটিলতা তৈরি হয়েছে। এসবের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, প্রাণিসম্পদ দপ্তরকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে এবং তারা আইনগত বিষয়গুলো দেখছেন।

এদিকে ‘অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার’ নামের একটি সংগঠনের সদস্যরা ঢাকা থেকে ঈশ্বরদীর উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। তারা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।

বগুড়ায় বিড়াল হত্যা
এ মাসের শুরুতে বগুড়ার দত্তবাড়িয়ার গুচ্ছগ্রামে একটি বিড়ালকে জবাই করে হত্যা ও পোড়ানোর ঘটনাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়। ভিডিও দেখে ঘটনাটি জানতে পারেন এমরান হোসেন, যিনি পরদিন আদমদিঘী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

জিডিতে বর্ণনা করা হয়, মোছাম্মৎ বুলবুলি নামে এক নারী একটি সাদা-কালো বিড়ালকে বটি দিয়ে গলা কেটে বুক চিরে নাড়িভুঁড়ি বের করে হত্যা করে পাশের ধানক্ষেতে ফেলে দেন।

পরে স্থানীয়রা মৃত বিড়ালটি সংরক্ষণ করেন এবং পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। এরপর পোস্টমর্টেমের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। সুরতহাল ও পোস্টমর্টেম উভয় প্রতিবেদনে ধারালো কিছু দিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

ঘটনা শোনার পর আদালত থানাকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়।

আইন কী বলছে?
বাংলাদেশে প্রাণী নির্যাতন প্রতিরোধে ২০১৯ সালে প্রণীত হয় প্রাণী কল্যাণ আইন। এর আগে ১৯২০ সালের পুরোনো আইনের ওপর নির্ভর করতে হতো।

তবে আইনজীবীরা বলছেন, এই আইনের একটি বড় সীমাবদ্ধতা হলো— কোনো ব্যক্তি নিজে থেকে মামলা করতে পারবেন না। আইনে বলা আছে, প্রাণিসম্পদ দপ্তরের মহাপরিচালক বা তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো ভেটেরিনারি সার্জনের লিখিত অভিযোগ ছাড়া আদালত মামলা গ্রহণ করতে পারবেন না।

আইনজীবী সাকিব মাহবুব বলেন, এই আইনের প্রয়োগ সাধারণ নাগরিকের হাতে নেই। অর্থাৎ কেউ কোনো পথকুকুর বা বিড়ালকে হত্যার ঘটনা দেখলেও নিজে সরাসরি মামলা করতে পারবেন না।

তিনি জানান, মালিকবিহীন প্রাণীর ক্ষেত্রে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৪২৯ ধারা প্রয়োগ করাও কঠিন। কারণ পথে থাকা কুকুর বা বিড়ালের ‘মূল্য’ কিভাবে নির্ধারণ হবে— এটি অনির্দিষ্ট। এ কারণে মালিকবিহীন প্রাণী হত্যার ঘটনায় আইন থাকা সত্ত্বেও এর কার্যকর প্রয়োগে জটিলতা দেখা দেয়।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালের আইন অনুযায়ী পথকুকুর বা বিড়ালকে নিধন করা যাবে না— এ বিধান স্পষ্ট। কিন্তু প্রয়োগের দায়িত্ব রাখা হয়েছে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের হাতে। তবে তারা এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো মামলা করেছে বলে জানা যায় না।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে আদালতের নির্দেশে সিটি করপোরেশনগুলো কুকুর নিধন কর্মসূচি বন্ধ করে টিকাদান কর্মসূচিতে যায়। ২০১৯ সালের নতুন আইনেও কুকুর নিধন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বাংলাদেশে পথপ্রাণী সুরক্ষার আইন থাকলেও সেগুলো বাস্তব প্রয়োগ ও সচেতনতার অভাবে বহু নির্যাতন-হত্যার ঘটনা বারবার ঘটছে— এমন মত অনেকের।

এমএইচএস 

প্রাসঙ্গিক সংবাদ পড়তে নিচের ট্যাগে ক্লিক করুন

আইনি প্রশ্ন ও উত্তর আইন ও আদালত

Logo
সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন প্রধান, ডিজিটাল সংস্করণ হাসনাত কাদীর