আইন আছে, প্রয়োগে বড় বাধা
পথকুকুর হত্যা করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড
আইন আদালত ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৫০
পাবনার ঈশ্বরদীতে সদ্যজাত আটটি কুকুরছানাকে বস্তায় ভরে পুকুরে ফেলে হত্যার ঘটনা দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। সপ্তাহখানেক আগে জন্ম নেওয়া ছানাগুলো হঠাৎ নিখোঁজ হলে মা কুকুরের আর্তচিৎকার স্থানীয়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
পরে উপজেলা প্রশাসন খোঁজ নিয়ে জানতে পারে- এক সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী তার ছেলেকে দিয়ে ছানাগুলোকে পানিতে ফেলে হত্যা করেছে। পুকুর থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা ছানাগুলোর ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কোয়ার্টার বরাদ্দ বাতিল করা হয় এবং মা কুকুরকে চিকিৎসার আওতায় আনা হয়েছে।
এই নির্মম ঘটনাটি আবারও প্রশ্ন তুলেছে- পথকুকুর বা বিড়াল হত্যা করলে বাংলাদেশের আইনে শাস্তি কী?
২০১৯ সালের প্রাণি কল্যাণ আইন অনুযায়ী, মালিকানাবিহীন প্রাণী- যেমন পথকুকুর, পথবিড়াল-হত্যা, নির্যাতন কিংবা বিষ প্রয়োগ করা স্পষ্টভাবে দণ্ডনীয় অপরাধ। আইনের ৬ ও ৭ ধারায় প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা ও অঙ্গহানি অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এই আইনে শাস্তি: প্রথমবার অপরাধ করলে সর্বোচ্চ ৬ মাস কারাদণ্ড বা ১০,০০০ টাকা জরিমানা এবং দ্বিতীয়বার করলে সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদণ্ড ও ৫০,০০০ টাকা জরিমানা।
এছাড়া কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া পথকুকুর বা বিড়ালকে নিধন বা অপসারণও নিষিদ্ধ। অনিরাময়যোগ্য অসুস্থ প্রাণীর ক্ষেত্রে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতিতে কেবল ব্যথাহীন মৃত্যু ঘটানো যেতে পারে।
তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় সমস্যা হলো আইন প্রয়োগের সীমাবদ্ধতা। সাধারণ নাগরিক এই আইনে সরাসরি মামলা করতে পারেন না। আদালত মামলা গ্রহণ করবে কেবল প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বা তাদের অনুমোদিত ভেটেরিনারি সার্জনের লিখিত অভিযোগ পেলে। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মামলা গড়ায় না আদালতে।
বিকল্প হিসেবে দণ্ডবিধি ১৮৬০-এর ৪২৯ ধারা ব্যবহার করা যায়, যেখানে প্রাণীর মূল্য ৫০ টাকার বেশি হলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু পথকুকুর বা বিড়ালের ‘মূল্য’ প্রমাণ করা কঠিন হওয়ায় এই ধারাও খুব কম ব্যবহার হয়।
আইনজীবীরা বলছেন, আইন থাকলেও প্রয়োগ দুর্বল হওয়ায় নির্মমতা থামছে না। ২০১৪ সালে আদালতের নির্দেশে কুকুর নিধন বন্ধ করা হলেও বিভিন্ন সময়ে বিষ প্রয়োগ বা হত্যা- এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।
পাবনার ঘটনা আবারও দেখিয়ে দিয়েছে-সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ডের বিধান থাকলেও, কঠোর প্রয়োগ ছাড়া পথপ্রাণীদের প্রতি নির্যাতন বন্ধ করা কঠিন।
বিকেপি/এনএ

